চুয়াডাঙ্গায় অরিন্দমের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সমাপনীতে নওরোজ মোহাম্মদ সাঈদ

স্টাফ রিপোর্টার

চুয়াডাঙ্গা জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে চার দিনব্যাপী অরিন্দম সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সমাপ্তি হয়েছে। গান, নৃত্য পরিবেশনা, কবিতা আবৃত্তি ও নাটক পরিবেশনার মধ্যদিয়ে শেষ হয়েছে এবারের চুয়াডাঙ্গা অরিন্দমের ৩৯ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর আয়োজন। ‘সমাজ যেখানো ছন্দ পতন, সেখানে ছড়াবো প্রাণের মাতন’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে অরিন্দমের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও রবীন্দ্র-নজরুল- সুকান্ত স্মরণোৎসবের সমাপনী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬ টায় চুয়াডাঙ্গা শিল্পকলা একাডেমির মুক্ত মঞ্চে এই অনুষ্ঠানটি আয়োজন করেন চুয়াডাঙ্গা অরিন্দম সাংস্কৃতিক সংগঠন। ‘রাত্রির গভীর থেকে ছিঁড়ে আনো ফুটন্ত সকাল’ এই স্লোগানকে সামনে রেখে বজলুর রহমান জোয়ার্দ্দারের রচনায় ‘সুকান্তঃ মত্যুহীন ধরণীর জ্বলন্ত প্রলাপ’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা করা হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন চুয়াডাঙ্গা অরিন্দম সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাবেক সভাপতি ইয়াকুব আলী জোয়ার্দ্দার।

সভার শুরুতেই উপস্থিত অতিথিদের ফুলেল শুভেচ্ছা ও উত্তরী পড়িয়ে দেয়া হয়। এরপর কবি সুকান্তকে নিয়ে মুখ্য আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন উদীচ শিল্পী গোষ্ঠী চুয়াডাঙ্গা জেলা সংসদের সভাপতি হাবিবী জহির রায়হান। সভায় প্রধান অতিথি চুয়াডাঙ্গা আদর্শ সরকারি মহিলা কলেজে সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক নওরোজ মোহাম্মদ সাঈদ বলেন, নতুন প্রজন্মের কাছে আহ্বান চুয়াডাঙ্গার শিল্প সাংস্কৃতিক অঙ্গনটাকে টিকিয়ে রাখার জন্য। জীবনকে আনন্দময় করতে হলে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে পদার্পণ করতে হবে। জীবনকে গড়তে হলে সাংস্কৃতিক চর্চার কোন বিকল্প নেই। তাই সমাজটাকে সাংস্কৃতিক চর্চায় পরিবর্তন করতে হবে। সাংস্কৃতিক চর্চা মানুষের মনের প্রসারতা বাড়ায়। সুন্দর মন ও শুদ্ধ মানসিকতা গড়ে দেয় সাংস্কৃতিক চর্চা। পড়াশোনার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক সংগঠনে গান কবিতা আবৃত্তির চর্চা বাড়ানো উচিত। তাহলে মানুষরুপে সে শুদ্ধ মানসিকতার অধিকারী হবেন।

সমাপনী সভার শেষে চুয়াডাঙ্গা আবৃত্তি পরিষদের পরিবেশনায় আবৃত্তি অনুষ্ঠিত হয়। পরে চুয়াডাঙ্গা উদীচীর আয়োজনে গান পরিবেশন ও মাগুরা উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর পরিবেশনায় নাটক অভিযান মঞ্চায়ন করা হয়। অনুষ্ঠানের মূল আকর্ষণ ছিলো কাজী নজরুল ইসলামের রচিত নীলকুঠি নাটকটি। কার্পাসডাঙ্গা নজরুল স্মৃতি সংসদের পরিবেশনায় মঞ্চ নাটকে অংশগ্রহন করেন বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করা শিল্পীবৃন্দ। প্রায় ১ঘন্টার বেশি সময়কাল ধরে অনুষ্ঠিত হওয়া নাটকটি উপভোগ করেন দর্শকবৃন্দ।

নাটক শেষে দর্শক অনন্যা মালাকার বলেন, আমার নজরুলের নীলকুঠি নাটকটি দেখার খুব ইচ্ছা ছিলো, ঢাকায় একবার থিয়েটারে এই নাটক দেখার সুযোগ হয়েও দেখতে পারিনি। তাই এবারে চুয়াডাঙ্গায় সুযোগটা হাতছাড়া করিনি। নাটকটি বাঙ্গালির সাথে সাহেবদের করা অত্যাচারের কথা মনে করিয়ে দেই। নীল চাষের জন্য দরিদ্র চাষীদের ওপর করা নির্যাতন, বাঙ্গালি মা মেয়েরা কতটা নিরাপত্তাহীনতায় ছিলো তা মনে করিয়ে দেই। কিছু বাংলার দামাল সাহসী যুবকদের সাহসের নমুনাও দেখা যায় নজরুলের এই নীলকুঠি নাটকটিতে। আজকের নাটকের ভিতরে হওয়া গান গুলো ছিলো খুব চমৎকার। সকলের অভিনয়ই ছিলো মনোমুগ্ধকর এবং একদম বাস্তবমুখী।

সমাপনী সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন, চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি অ্যাড. মানিক আকবর, চুয়াডাঙ্গা অরিন্দম সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম মালিক, বজলুর রহমান, সভাপতি মোঃ আলাউদ্দীন, সাধারণ সম্পাদক হিরুন উর রশীদ শান্ত, উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী চুয়াডাঙ্গা জেলা সংসদের সাধারণ সম্পাদক আদিল হোসেন, সহ সাধারণ সম্পাদক মাসুদ আরিফ মানু, কোষাধ্যক্ষ এড. আহসান কবির বাদসা, প্রগতি লেখক সংসদের সাধারণ সম্পাদক কাজল মাহমুদ, জেলা আবৃত্তি পরিষদের পরিচালক মনোয়ারা খুশি, সংলাপ সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর সভাপতি নজীর আহম্মেদ, কার্পাসডাঙ্গা নজরুল স্মৃতি সংসদের সভাপতি সামসুল আলম ও সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম টুটুল, সদস্য আব্দুল মালেক, জুলফিকার আলী ভুট্টো প্রমুখ সহ অন্যান্য শিল্পীবৃন্দ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *