ন্যাশনাল লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানীতে বীমা করে বিপাকে কৃষক! প্রায় সাত লাখ টাকা বীমা কর্মকর্তার পকেটে, থানায় অভিযোগ

দামুড়হুদা অফিস

ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানীতে বীমা করে বিপাকে পড়েছেন আনারুল ইসলাম (৪৫) নামের এক কৃষক। গ্রাহক কষ্ট করে সঞ্চয় করার লক্ষ্যে বীমা কোম্পানির কর্মকর্তা (প্রতিনিধি) নিকট নিয়ম মাফিক টাকা জমা দিলেও তা কোম্পানীর একাউন্টে জমা হয়নি। যদিও টাকা নেওয়ার পর কোম্পানীর রশিদ গ্রাহকের নিকট বুঝিয়ে দিলেও গ্রহণকৃত টাকা কোম্পানীর একাউন্টে জমা না করে নিজের পকেটে রেখে আত্মসাৎ করেছেন অভিযুক্ত দামুড়হুদা সদর ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ওরফে সাহেব আলী। তার এমন অমানবিক ও দূর্নীতির বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে বীমা কোম্পানির উর্ধতন কর্মকর্তাদের নিকট সুদৃষ্টি কামনা করেছেন ভুক্তভোগী গ্রাহক। একই সাথে বীমা কোম্পানীর কর্মকর্তা কর্তৃক এরূপ ভয়াবহ প্রতারণার বিষয়টি অবগত করে গত শনিবার রাতে দামুড়হুদা মডেল থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী কৃষক। ওই কৃষক দামুড়হুদা উপজেলা সদরের চিৎলা হাসপাতালপাড়ার মৃত. নুরুল ইসলামের ছেলে।

ভুক্তভোগী কৃষকের অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, দামুড়হুদা উপজেলার চিৎলা হাসপাতালপাড়া এলাকার ন্যাশনাল লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানীর কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম ওরফে সাহেব আলী আমাকে তার বীমা কোম্পানিতে বীমা করার জন্য একাধিকবার অনুরোধ করেন। একই এলাকার বাসিন্দা হওয়ার সুবাধে তার নিকট বীমা কোম্পানীতে সর্বমোট ৩টি একাউন্টে অর্থ জমা করি। যার মধ্যে ১টি ১০ বছর মেয়াদী সঞ্চয় হিসাব। যেখানে প্রতি বছরে ১ লাখ ৩০ হাজার করে তার নিকট ৪ বছর প্রদান করে ৫ লাখ ২০ কুড়ি হাজার টাকা জমা প্রদান করি। অপর একটি একাউন্টে নগদ- ২৫  হাজার করে ৬ বার জমা প্রদান করে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা জমা রাখি। সাহেব আলীর কথা মতে অপর আরও একটি একাউন্টে প্রতি মাসে নগদ ১ হাজার ৬৫০ টাক করে জমা রাখি। সেখানেও ২৫ হাজার ৯৩৬ টাকা জমা রয়েছে। সব মিলিয়ে সাহেব আলীর নিকট বীমা কোম্পানিতে আমি ৬ লাখ ৯৫ হাজর ৮৩৬ টাক জমা রাখি। উক্ত টাকার লাভ্যাংশ বাড়িয়া আমার সর্বমোট ২৩ লাখ টাকা হওয়ার কথা। কোম্পানীর  নিকট জমাকৃত টাকা ফেরত দিতে বিভিন্ন তালবাহানা করে সাহেব আলী। পরে উপায়-অন্ত না পেয়ে আমি নিজেই ন্যাশনাল লাইফ ইন্সুইরেন্স কোম্পানীর উর্ধতন কর্মকর্তাকে ফোন দিই। পরবর্তীতে আমি জানতে পারি উক্ত বিবাদী সম্পূর্ণ টাকা কোম্পানিতে জমা প্রদান করেনি।

পরবর্তীতে উক্ত টাকা ফেরতের জন্য অভিযুক্তকে বলা হলে তিনি আমাকে সময়মতো পরিশোধ করবে বলে একাধিকবার অঙ্গিকার করেন। অতঃপর উক্ত বিবাদী আমার টাকা ফেরত দেয় না, বরং টাকা চাইলেই বিবাদী বিভিন্ন রকম তালবাহানা শুরু করে এবং টাকা দেওয়ার জন্য বিভিন্ন রকম দিন ও তারিখ দিয়ে হয়রানি করে আসছেন। যদিও এর মধ্যে  বিগত অনুমান ২ মাসের মধ্যে অভিযুক্ত ব্যক্তি আমাকে দুই কিস্তিতে ১লাখ ৫০ পঞ্চাশ হাজার টাকা পরিশোধ করেছে এবং আমার বকেয়াকৃত পাওনাকৃত টাকা চাইতে গেলে অভিযুক্ত বীমা কোম্পানির প্রতিনিধি সাইফুল ইসলাম ওরফে সাহেব আলী কোন কর্ণপাত করেন না বরং মারমূখী আচরণ করে হয়রানি করে আসছেন এবং কিছুদিন পর দিবেন বলে কাল ক্ষেপণ করে আসছেন। অভিযুক্ত সাইফুল ইসলাম ওরফে সাহেব আলী একই গ্রামের মৃত দিনু মোহাম্মদের ছেলে।

ভুক্তভোগী গ্রাহক অশ্রুসিক্ত কন্ঠে বলেন, বীমা কোম্পানীতে বহু কষ্ঠ করে টাকা দিয়েছি। আমার নিজের সঞ্চয় করা অর্থ পেতে এতোটা হয়রানি পোয়াতে হবেন তা কখনো ভাবেনি। কতিপয় এমন কর্মকর্তাদের জন্য এমনিতেই বীমা কোম্পানীর ওপর মানুষের আস্থা কম। এরপর যদি বীমা কোম্পানীর কর্মকর্তারা নিজের গচ্ছিত টাকা দিতে এমন করে তাহলে এমন কোম্পানীর বীমার উপর থেকে মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিবেন। আমি সাংবাদিকদের মাধ্যমে বীমা কোম্পানীর উর্ধতন কর্মকর্তাসহ যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট অনুরোধ জানাচ্ছি, যাতে আমার সমুদয় টাকা আমি বুঝে পাই। একই সাথে বীমা করে কোম্পানীর মাধ্যমে আমার মতো এমন হয়রানি আর যাতে কেউ না হয়।

তিনি আরও বলেন, অভিযুক্ত বীমা কর্মকর্তা সাহেব আলীর বিরুদ্ধে আমার জমাকৃত টাকা তসরুপের বিরুদ্ধে ও প্রতারণার জন্য দামুড়হুদা মডেল থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত বীমা কোম্পানীর কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম ওরফে সাহেব আলী’র সাথে কথা বলার চেষ্টা করলে তার সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

দামুড়হুদা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হুমায়ুন কবির অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করে জানিয়েছেন তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *