চুয়াডাঙ্গা পৌরসভায় ড্রেনেজ ও সড়ক ব্যবস্থার বেহাল দশা সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা, নাগরিক দুর্ভোগ চরমে

স্টাফ রিপোর্টার

চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার ড্রেনেজ ও সড়ক ব্যবস্থার দীর্ঘদিনের অব্যবস্থাপনা এখন নাগরিক দুর্ভোগের প্রধান উৎসে পরিণত হয়েছে। বর্ষা মৌসুমে সামান্য বৃষ্টিতেই শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে রাস্তাঘাটে পানি জমে থাকে, ড্রেন উপচে পড়ে এবং সৃষ্টি হয় দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতা। ফলে সাধারণ মানুষের চলাচল যেমন ব্যাহত হচ্ছে, তেমনি বাড়ছে রোগ-জীবাণুর ঝুঁকি।

পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডেই এই সমস্যা প্রকট আকারে দেখা দিলেও বিশেষভাবে বুজরুকগড়গড়ী বনানীপাড়া, শান্তিপাড়া, সবুজপাড়া, সাদেক আলী মল্লিকপাড়া, পলাশপাড়া, গুলশানপাড়া, মুক্তিপাড়া, দক্ষিণ হাসপাতালপাড়া, মসজিদপাড়ার ও ঝিনাইদহ বাসস্ট্যান্ড পাড়ার অবস্থা সবচেয়ে করুণ। কোথাও সড়কের পিচ উঠে গিয়ে সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় গর্ত, কোথাও ড্রেন ভেঙে পানি ছড়িয়ে পড়েছে রাস্তায়। অনেক স্থানে ড্রেনের মুখে জমে থাকা আবর্জনার স্তূপের কারণে পানি নিষ্কাশন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এবং তা বসতবাড়ির ভেতরেও ঢুকে পড়ছে।

স্থানীয়রা বলছেন, বছরের পর বছর ধরে এমন দুর্ভোগ চললেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ চোখে পড়ছে না। পলাশপাড়ার বাসিন্দা পিয়াল খান বলেন, “বর্ষা এলেই আতঙ্ক শুরু হয়। রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে যায়। রাতে শিশুদের নিয়ে চলাচল করাটা একপ্রকার দুঃসাহসিক অভিযানে পরিণত হয়।” গুলশানপাড়ার মুস্তাফিজুর রহমান কনক অভিযোগ করে বলেন,“তিন বছরেও ড্রেন পরিষ্কার হয়নি। মুখ বন্ধ হয়ে আছে, পানি বের হতে পারে না। বর্ষায় পুরো এলাকা ডুবে থাকে।” বনানীপাড়ার আক্তার হোসেন বলেন, “অনেকবার অভিযোগ জানিয়েছি। পৌর কর্তৃক্ষ এসে ছবি তোলে, আশ্বাস দেয়, কিন্তু বাস্তবে কাজের কাজ কিছুই হয় না। বর্ষায় ঘরের ভেতর পর্যন্ত ড্রেনের পানি ঢুকে পড়ে।” ঝিনাইদহ বাসষ্ট্যান্ড পাড়ার সড়কের বেহাল দশা। দীর্ঘদিন ধরে সড়কটি ভেঙ্গে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এতে হেটে ও যানবাহনে চলাচল করা দুুুুরুহ হয়ে পড়েছে। গত ১ বছর ধরে ঝিনাইদহ বাসষ্ট্যান্ড পাড়া টু সাতগাড়ী প্রবেশের ভাঙ্গা ব্্রীজ পর্যন্ত রাস্তাটি নির্মাণ হবে শোনা গেলেও তা আলোর মুখ দেখেনি।

চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার উপসহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) মো. আনিসুজ্জামান জানান, শহরের বিভিন্ন এলাকায় চারটি উন্নয়ন প্রকল্প চলমান রয়েছে। প্রকল্পগুলোর মধ্যে গুলশানপাড়ায় বরাদ্দ ৬৫ লাখ টাকা। সিনেমা হলপাড়া ও কাঠপট্টি এলাকায় বরাদ্দ ১ কোটি ৩২ লাখ ৯০ হাজার টাকা। জেলখানা সংলগ্ন এলাকায় বরাদ্দ ১ কোটি ১৭ লাখ টাকা। মোট বরাদ্দ ৪ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। তিনি বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে ড্রেন প্রশস্তকরণ ও পুনঃনির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। আমরা নিয়মিত কাজের অগ্রগতি তদারকি করছি।

চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম রেজাউল করিম বলেন, শহরের বিভিন্ন এলাকায় উন্নয়ন প্রকল্প চলমান রয়েছে। ঠিকাদারদের স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, এমন কোনো কাজ করা যাবে না যাতে জনভোগান্তি বাড়ে। পৌর প্রশাসনও নিয়মিত খোঁজখবর রাখছে।

প্রসংগত, চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার আয়তন ৩৭.৩৯ বর্গ কিলোমিটার। এটি ১৯৭২ সালের ২০ জানুয়ারি তৃতীয় শ্রেণির পৌরসভা হিসেবে যাত্রা শুরু করে। পরবর্তীতে ১৯৮৪ সালের ২৭ আগস্ট দ্বিতীয় শ্রেণিতে এবং ১৯৯৫ সালের ১৯ জানুয়ারি প্রথম শ্রেণির পৌরসভায় উন্নীত হয়। পৌরসভাটি ৯টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *