ঈদ পুনর্মিলনী বন্ধুত্বের বাঁধনে স্মরণীয় করে রাখলেন ব্যাচসাথীরা বন্ধু টানেই ফেরা-এসএসসি ১৯৮৪ ব্যাচের মিলনমেলা

স্টাফ রিপোর্টার

চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের কেন্দ্রীয় মুক্তমঞ্চে ‘এসো মিলি বন্ধুর টানে’ স্লোগানে অনুষ্ঠিত হলো এসএসসি ১৯৮৪ বন্ধু ব্যাচের দিনব্যাপী ঈদ পুনর্মিলনী। গতকাল বুধবার বেলা ১১টায় বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে শুরু হয় মিলনমেলা। সরকারি কলেজের সামনে থেকে শুরু হয়ে গণপূর্ত বিভাগের সামনে গিয়ে শোভাযাত্রাটি আবার কলেজ চত্বরে এসে শেষ হয়। এরপর জমে ওঠে গল্প, গান, কবিতা আর আড্ডা। চিকিৎসক, শিক্ষক, ব্যবসায়ী, সরকারি ও বেসরকারি চাকরিজীবী বন্ধুদের প্রাণবন্ত উপস্থিতিতে অনুষ্ঠানটি রূপ নেয় এক মিলনমেলায়। সারাদিনজুড়ে র‌্যালি থেকে সাংস্কৃতিক পর্ব পর্যন্ত উপস্থিত ছিলেন জেলার কৃতী সন্তান বিশ্বের প্রবাসী বাঙালিদের সবচেয়ে বড় সংগঠন এনআরবি ওয়ার্ল্ড ও বাংলাদেশ বিজনেস চেম্বার অব সিঙ্গাপুরের (বিডিচ্যাম) প্রেসিডেন্ট ও হোটেল সাহিদ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলহাজ্ব সাহিদুজ্জামান টরিক।

অনুষ্ঠানে বন্ধু-বান্ধবীদেরকে নিজের অনুভূতি জনিয়ে সাহিদুজ্জামান টরিক বলেন, ‘আজকের এই দিনটি শুধুই আনন্দের নয়, এটি আমাদের স্কুল থেকে কলেজ জীবনের সেই নিঃস্বার্থ বন্ধুত্বের প্রতি এক গভীর শ্রদ্ধার প্রকাশ। এই বন্ধন যতবার ছোঁয়া লাগে, মনে হয় আমরা যেন আবার কলেজ মাঠে ফিরেছি, হোস্টেলের বারান্দায় দাঁড়িয়ে আড্ডা দিচ্ছি। জীবনের নানা ব্যস্ততার মাঝেও এমন পুনর্মিলনী আমাদের নতুন করে বাঁচতে শেখায়। আমি বিশ্বাস করি, এই সম্পর্কগুলো শুধু ব্যক্তি নয়, সমাজকেও ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত করে। সবাইকে আন্তরিক অভিনন্দন ও ভালোবাসা জানাই।’

দিনব্যাপী অনুষ্ঠানে সঞ্চালনা করেন মাসুদ আরিফ মানুন, আনোয়ার হোসেন ও মামুন। কবিতা আবৃতি করেন রুনু, গান গেয়ে শোনান রোকন, কদম, আকবর আলী। আরোও আলোচনা করেন মামুন, মজিবর, কেতকী, রুনু। পরে দুপুর গড়ালে খাবারে পরিবেশিত হয় । পরে শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এরপর বন্ধুদের ভিন্ন আয়োজনের লটারি (র‌্যাফেল ড্র) অনুষ্ঠানে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন সাহিদুজ্জামান টরিক। তিনি বলেন, ‘সত্যি বলতে, আজকের এই অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। ছোট ছোট মুহূর্তগুলো আবারও মনে করিয়ে দিলো-আমরা কতটা ভাগ্যবান ছিলাম এমন একটি ব্যাচের অংশ হতে পেরে। বন্ধুত্বের এই উষ্ণতা, এই হৃদ্যতা, এই ভালোবাসা আমাদের জীবনের সেরা উপহার। আমি সবসময় এমন আয়োজনের পাশে ছিলাম, আছি এবং থাকবো। আজকের মতো সুন্দর দিন যেন বারবার ফিরে আসে। আমাদের বন্ধন অটুট থাকুক সব সময়।’

বন্ধুদের সবাইকে অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এমন আয়োজন যেন বারবার হয়। আমরা যারা বিভিন্ন শহরে, দেশে বা বিদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছি, তারা যেন অন্তত বছরে একবার হলেও একত্রিত হতে পারি। আজকের এই আয়োজনে যেভাবে সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে অংশ নিয়েছে, তাতে বোঝা যায়-বন্ধুত্ব এখনো জীবন্ত, স্পন্দনশীল। আমি মনে করি, আমাদের এই বন্ধুত্বের শক্তি পরবর্তী প্রজন্মের কাছেও অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।’

আয়োজক বন্ধুদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে টরিক বলেন, ‘যারা নিরলস পরিশ্রম করে আজকের এই দিনটিকে সফল করেছে, সীমিত সময় ও সাধ্যের মধ্যে যে ভালোবাসা, আন্তরিকতা এবং একতা তারা দেখিয়েছে, তা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। এই আয়োজনের পেছনের প্রতিটি মানুষের চেষ্টা এবং অবদানের কথা মনে রাখবে আমাদের ব্যাচের প্রতিটি সদস্য।’

এদিকে, দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের বিকেল পর্বে চুয়াডাঙ্গার জনপ্রিয় শিল্পীরা করবী ও শান্তর নেতৃত্বে নব্বই দশকের জনপ্রিয় গান গেয়ে রঙ ছড়ান মঞ্চে। এসময় ১৯৮৪ বন্ধুরাও গান গেয়ে, নেচে, হাততালি দিয়ে মুখর করে তোলেন অনুষ্ঠান প্রাঙ্গণ। এছাড়া, অনুষ্ঠানস্থল থেকেই সাহিদুজ্জামান টরিক ঘোষণা দেন-আগামী ২০ ডিসেম্বর শনিবার, শহরের বড়বাজারের সাহিদ গার্ডেনে দিনব্যাপী আরও বৃহৎ এক মিলনমেলার। সকল বন্ধুকে সেই দিনটি অগ্রিম ছুটি রেখে প্রস্তুত থাকতে বলেন তিনি। জানান, এবারের মিলনমেলায় ১৯৮৪ ব্যাচের দূর-দূরান্তের বন্ধুরাও উপস্থিত থাকবেন।

বন্ধু ব্যাচের রোকন বলেন, ‘র‌্যালির শুরু থেকেই মনে হচ্ছিল আমরা যেন আবার স্কুলের মাঠে ফিরেছি। পুরনো সেই মুখগুলো, সেই হাসি, গল্প আর চোখে-মুখে খুশির ঝলক-সবকিছুই প্রাণবন্ত করে তুলেছে দিনটিকে। বহু বছর পর প্রিয় বন্ধুদের দেখে বুকটা ভরে উঠেছে। এই আয়োজন শুধু মিলনমেলাই নয়, এটি আমাদের হৃদয়ের বন্ধনকে আরও মজবুত করেছে। বন্ধু টরিকের আন্তরিকতা ও সম্পৃক্ততা সবাইকে বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত করেছে। তিনি শুধু একজন সংগঠক নন, আমাদের এই বন্ধনকে টিকিয়ে রাখার অন্যতম শক্তি। আমরা আশা করি, এমন আয়োজন প্রতি বছর হবে এবং বন্ধুত্বের এই আলো নিভে যাবে না কখনো।’ সমগ্র অনুষ্ঠানের ব্যবস্থাপনায় ছিলেন মিজান, আনন্দ, মকসু, শিল্টু, আকবর, মানু, মাসুম কামাল, পারভীন লাইলা, তানজীলা মিলি ও মাহমুদা। এছাড়াও শতাধিক বন্ধুরা এই আয়োজনে দিনব্যাপী অংশ নেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *