আলমডাঙ্গা ক্রীড়াঙ্গনে একটি উজ্জল নাম সোহাগ কোচ, রেফারিং করে অর্জন করেছে সুনাম

নাজমুল হক শাওন, (আলমডাঙ্গা অফিস)

আলমডাঙ্গা ক্রীড়াঙ্গনে একটি উজ্জল নাম মো: সোহাগ আলী। যিনি একাধারে ফুটবল, কোচ, রেফারিং করে সুনামের সহিত দায়িত্ব পালন করে আসছেন। পাশাপাশি খেলার পূর্বে মাঠ প্রস্তুতের যাবতীয় কাজটি সোহাগ করে থাকেন। এছাড়া সোহাগ আলী বাইসাইকেল, ভ্যান ও রিকসা মেরামত করে জীবিকা নির্বাহের চেষ্টা করছেন।  তবে এতোকিছুর পরেও তাকে মূল্যায়ন করা হয়না। তাতেও তিনি অখুশি নন। তার ইচ্ছা জেলায় ভালো খেলোয়াড় তৈরী হোক। আলমডাঙ্গাবাসীর মুখ উজ্জ্বল হোক।

জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলার এরশাদপুর গ্রামের আকবর আলী ও বিলকিস খাতুনের ছেলে সোহাগ আলী (৪৩)। ৩ ভাই ও ১ বোনের মধ্যে সোহাগ মেজো। ১৯৯৯ সালে এরশাদপুর একাডেমী থেকে এসএসসি পাশ করেন তিনি। এরপর ভর্তি হন আলমডাঙ্গা কলেজে। বাবার আর্থিক অছচ্ছলতার কারনে লেখাপাড়া বেশিদুর এগেয়নি, কলেজেই থেমে যায় তার লেখাপড়া। আর্থিক অনটন থাকলেও ফুটবলের নেশা তাকে দুরে সরাতে পারেনি। ৯ম শ্রেণীতে পড়ার সময় ১৯৯৭ সালে এরশাদপুর ফুটবল একাদশে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেন। এখান থেকেই সোহাগের খেলোয়াড়ি জীবন শুরু। ২০০০ সালে সোহাগসহ কয়েকজন মিলে গড়ে তোলেন এরশাদপুর জনতা স্পোটিং ক্লাব। কয়েক বছরের মধ্যে জনতা স্পোটিং ক্লাবের সুনাম চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। ২০০৮ সালে আলমডাঙ্গা উপজেলার ফুটবল টিমে খেলার যোগ্যতা অর্জন করি। কয়েক বছর উপজেলা টিমের বিভিন্ন টুর্নামেন্টে অংশ নিই। ২০১২-২০১৩ সালে চুয়াডাঙ্গা মর্নিং স্টার ক্লাবের হয়ে সেকেন্ড ডিবিশন ফুটবল লীগে অংশ নিই। আমাদের টিম চ্যাম্পিয়ন হয়। পরবর্তীতে মর্নিং স্টার ফাস্ট ডিভিশন লীগ খেলার যোগ্যতা অর্জন করে।

২০১৪ সাল থেকে আলমডাঙ্গা উপজেলা অনুর্ধ -১৪ ফুটবল টিমের সহকারী কোচের দায়িত্ব পালন করে আসছি। এর পর কোচ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন তিনি। ২০১৭ সাল থেকে আলমডাঙ্গা অনুর্ধ-১৭ নারী টিমের কোচ ও অনুর্ধ-১৭ পুরুষ টিমের সহকারী কোচ হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন।

আলমডাঙ্গা পাইলট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের কোচ হিসাসে রয়েছে সোহাগের সুনাম। তার নেতৃত্বে ২০২৩ সালে আলমডাঙ্গা পাইলট বালিকা বিদ্যালয় আন্তঃস্কুল নারী ফুটবল টুর্নামেন্টে উপজেলা থেকে জেলা পরবর্তীতে বিভাগীয় পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন হয়।

চলতি বছরে ২০২৫ সালে তারুন্য উৎসবে আলমডাঙ্গা নারী অনুর্ধ-১৭ ফুটবল টিম জেলা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। ২০২৪ সালে চট্রগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার আয়োজনে রেফারিজ প্রশিক্ষণ গ্রহন করে সাফল্যের সাথে উত্তীর্ণ হয়। বর্তমানে আলমডাঙ্গা উপজেলাতে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের আওতায় ২ জন রেফারী তালিকাভুক্ত রয়েছে। তার মধ্যে সোহাগ একজন।

আলমডাঙ্গার কৃতি খেলোয়াড় ও কোচ সোহাগ আলীর সাথে একান্তে কথা হলে তিনি বলেন, আলমডাঙ্গা ফুটবল একাডেমি প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে এসেছেন কোচ সোহাগ। তরুণদের পেশাদারভাবে গড়ে তোলা এবং নিয়মিত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে জাতীয়মানের খেলোয়াড় তৈরিই এই একাডেমির মূল লক্ষ্য। সোহাগ বলেন, আলমডাঙ্গায় প্রচুর প্রতিভা আছে, কিন্তু ঘাটতি রয়েছে মানসম্মত প্রশিক্ষণ ও অবকাঠামোয়। আমি চাই একটি স্থায়ী প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তুলতে। এখান থেকেই যেন জাতীয় দলের খেলোয়াড় উঠে আসবে। যাতে তারা ভালো খেলাধুলা করে উপজেলা তথা জেলার সুনাম বয়ে আনে। বর্তমানে আমি ফজরের নামাজ পড়ে আলমডাঙ্গা উপজেলা পরিষদের মধ্যে একটি মাঠে ছেলে-মেয়েদের প্রাকটিস করায়। বৃষ্টির কারনে ছেলে-মেয়েরা মাঠে কম আসতেছে। তবে বেশিরভাগ দিন ১০/১৫ জন প্রাকটিস করে। ফুটবল নিয়ে আমি আয় করব, এটা কখনও ভাবি না। ভালো খেলোয়াড় তৈরী হবে এটাই আমার ভাবনা। কোচ, রেফারি, ফুটবল খেলার পাশাপাশি আমার রয়েছে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। আলমডাঙ্গা শহরের সোনালী ব্যাংকের সামনে বাইসাইকেল, ভ্যান ও রিকসা মেরামতের দোকান রয়েছে । আমি নিজে ও লোকবল দিয়ে এটা চালাই। ফুটপাতে এ কাজ করার কারনে অনেকে আমাকে খেলার মাঠে মূল্যায়ন করতে চাইনা। তিনি আরো বলেন, ইদানিং খেলাধুলার প্রতি মানুষের আগ্রহ কমে যাচ্ছে। এই কারনে নতুন নতুন খেলোয়াড় তৈরী হচ্ছে না। ফুটবল আমার নেশা ও পেশা। এ কারনে কেউ ডাক দিলে দোকান বন্ধ করে মাঠে চলে যায়। তবে এখন সংসার হয়েছে, আয় না করলে পেট চলেনা। দুই ছেলে ওমর ফারুক (৬), জারিফ(১) ও মেয়ে উম্মে মারিয়াম (১২) ও  স্ত্রী মালা খাতুনকে নিয়ে আমার সংসার। রেফারি হিসাবে গেলে সেখান থেকে কিছু সন্মানী পাওয়া যায়। এছাড়া ক্রীড়া সংস্থা থেকে মাঝে মাঝে ক্রীড়া সামগ্রী দেয়া হয়। সেটা অনুশীলনের সময় কাজে লাগে।

                নারী ফুটবল দলের অধিনায়ক কাজলি বলেন, “সোহাগ স্যার আমাদের শুধু খেলতেই শেখাননি, শিখিয়েছেন খেলাকে ভালোবাসতে। তিনি আমাদের সাহস দিয়েছেন, আত্মবিশ্বাস দিয়েছেন।” আরেক খেলোয়াড় ববিতা বলেন, “স্যারের প্রশিক্ষণ ছাড়া আমরা এতদূর আসতে পারতাম না।”

ডাউকি ইউনিয়নের মাধবপুর গ্রামের কিশোরী উর্মি আক্তার প্রতিদিন ৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে কোচ সোহাগ আলীর প্রশিক্ষণে আসেন। তিনি বলেন, “স্যার আমাদের স্বপ্ন দেখতে শিখিয়েছেন। তার প্রশিক্ষণে আমরা বুঝেছি কীভাবে একজন প্রকৃত খেলোয়াড় হতে হয়।”

আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মেহেদী ইসলাম বলেন, সোহাগ আলীর একাডেমি গড়ার উদ্যোগ অত্যন্ত ইতিবাচক। উপজেলা প্রশাসন সব ধরনের সহযোগিতায় প্রস্তুত।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *