স্টাফ রিপোর্টার
চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তিনি স্ত্রী আক্তারি জোয়ার্দ্দার ও একমাত্র কন্যা তাবশিনা জান্নাত প্রথমাসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৭৯ বছর। গত কয়েকদিন ধরে শারীরিক নানা জটিলতায় ভুগছিলেন সাবেক এই সংসদ সদস্য।
জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক অ্যাড. আবু তালেব বিশ্বাস বলেন, সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন অসুস্থ হয়ে পড়লে ঈদের পরদিন রবিবার তাকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গতকাল শুক্রবার মাগরিবের নামাজের পর তিনি সবাইকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান। পারিবারিকভাবে সিন্ধান্ত নেয়া হয়েছে আজ শনিবার বেলা ১১টায় ফার্স্ট ক্যাপিটাল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গার্ড অব অনার প্রদান করা হবে। গার্ড অব অনার শেষে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে বর্ষিয়ান এ রাজনীতিবিদের নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। পরে তাকে রেল স্টেশন সংলগ্ন জান্নাতুল মওলা কবরস্থানে দাফন করা হবে। এদিকে এর আগে গতকাল শুক্রবার রাত ১১ টায় গুলশান-২ আজাদ মসজিদে মরহুমের প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। নামাজে জানাজা শেষে লাশবাহী গাড়ী তার নিজ জন্মভূমি চুয়াডাঙ্গার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।
সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন ১৯৪৬ সালের ১৫ মার্চ চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার আরামপাড়া এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা সিরাজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার একজন ব্যবসায়ী ছিলেন এবং মাতা আছিয়া খাতুন ছিলেন গৃহিণী।
ছাত্রজীবনে তিনি চুয়াডাঙ্গা ভি.জে. সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। পরে তিনি চুয়াডাঙ্গা কলেজে ভর্তি হন। তিনি পেশায় একজন ব্যবসায়ী হলেও ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন। ছাত্রলীগের মাধ্যমে রাজনীতিতে তার হাতেখড়ি। পরবর্তীতে যুবলীগ গঠনের পর তিনি চুয়াডাঙ্গা মহকুমা যুবলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৭৩ সালে তিনি চুয়াডাঙ্গা যুবলীগের সভাপতি এবং ১৯৭৯ সালে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে তিনি ভারতের মাটিতে প্রশিক্ষণ নিয়ে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধের পর বিভিন্ন সামাজিক ও সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ছিলেন। তিনি চুয়াডাঙ্গা রাইফেল ক্লাব, রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি এবং জেলা ক্রীড়া সংস্থার দীর্ঘদিনের সেক্রেটারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। রাজনৈতিক জীবনে তিনি ১৯৯১, ১৯৯৬ (১২ জুন) ও ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হন। ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। পরবর্তীকালে ২০১৪ সালের দশম, ২০১৮ সালের একাদশ এবং ২০২৪ সালের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য মনোনীত হন। ২০১৪ সালে তিনি জাতীয় সংসদের হুইপ নির্বাচিত হন।
২০২৪ সালের আগস্টে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও ভারত গমনের পরদিন রাষ্ট্রপতি কর্তৃক সংসদ ভেঙে দেওয়ায় তিনি তার সংসদ সদস্য পদ হারান। তার মৃত্যুতে চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগসহ স্থানীয় রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
সাবেক এমপি ছেলুন জোয়ার্দ্দারের ইন্তেকাল, বেলা ১১ টায় ফার্স্ট ক্যাপিটাল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে জানাজা, জান্নাতুল মওলা কবরস্থানে দাফন
