পরিবারের আপত্তিতে জুলাই আন্দোলনে শহীদ মাসুদ রানার লাশ উত্তোলন স্থগিত

স্টাফ রিপোর্টার

জুলাই আন্দোলনে শহীদ আলমডাঙ্গার কয়রাডাঙ্গা গ্রামের মাসুদ রানা মুকুলের লাশ উত্তোলনে আপত্তি জানিয়েছেন তার পরিবার। ঢাকা সিএমএম আদালতের আদেশে চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলার কয়রাডাঙ্গা গ্রামের শহীদ মাসুদ রানার লাশ উত্তোলনের কথা থাকলেও পরিবারের আপত্তিতে তা স্থগিত করা হয়েছে। গতকাল বেলা ১১ টায় চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার কয়রাডাঙ্গা গ্রামে শহীদ মাসুদ রানার সমাধিতে জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা লাশ উত্তোলনের জন্য যায়। পরে পরিবারের আপত্তিতে আপত্তিনামা নিয়ে ফিরে আসেন তারা।

জানা যায়, জুলাই আন্দোলন চলাকালীন ২০২৪ সালের ৪ই আগস্ট মিরপুর-১০ গোল চত্তরে গুলিবিদ্ধ হন মাসুদ রানা। পরে ঢাকা নিউরোসাইন্স হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুর পরে নিজ গ্রাম কয়রাডাঙ্গায় তার দাফন কার্য সম্পন্ন করা হয়। তার মৃত্যুর সঠিক কারণ নির্ণয়ে পুলিশ বাদী হয়ে লাশ উত্তোলনের জন্য ঢাকা চিফ মেট্রোপলিটন আদালতে আবেদন করেন। বিজ্ঞ সিএমএম আদালত জুলাই আন্দোলনে শহীদ মাসুদ রানার লাশ উত্তোলনের আদেশ দেন। পরে গতকাল সোমবার বেলা ১১ টায় শহীদ মাসুদ রানার লাশ উত্তোলনের দিন ধার্য করা হয়। তার সমাধিতে লাশ উত্তোলনের জন্য গেলে পরিবারের সদস্যরা এতে আপত্তি জানায়। তারা সহকারী কমিশনার আব্দুল্লাহ আল নাঈম এর নিকট একটি আপত্তিনামা জমা দেন। এতে শহীদ মাসুদ রানার লাশ উত্তোলন স্থগিত করা হয়।

এ বিষয়ে সহকারী কমিশনার আব্দুল্লাহ আল নাঈম বলেন, ঢাকা চিফ মেট্রোপলিটন আদালত হতে চুয়াডাঙ্গা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বরাবর একটি নির্দেশনা আসে যে শহীদ মাসুদ রানার লাশ উত্তোলন করে তদন্ত শেষে রিপোর্ট দেওয়ার জন্য। জেলা প্রশাসন থেকে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেওয়ার কথা হয়েছিল।  তাই আমি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখানে এসেছি। আমরা এখানে এসে দেখতে পেলাম যে শহীদ পরিবারের সদস্য এবং গ্রামবাসীরা লাশ উত্তোলনে আগ্রহী নয়। তারা লাশ উত্তোলনে আপত্তি জানানোয় আমরা তাদের আবেগকে সম্মান জানিয়ে লাশ উত্তোলন স্থগিত করলাম। আমরা তাদের পরিবারের কাছ থেকে একটি আপত্তিনামা গ্রহণ করেছি এবং সেটি জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বরাবর দাখিল করা হবে। পরে জেলা প্রশাসন থেকে একটি রিপোর্ট ঢাকা সিএমএম আদালতে প্রেরণ করা হবে। বিজ্ঞ আদালত সিদ্ধান্ত নেবে পরবর্তী কি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মামলার সাথে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তা এস আই আবুল কালাম বলেন, ফৌজদারী কোন অপরাধ হলে উক্ত অপরাধ প্রমাণের জন্য লাশ উত্তোলন জরুরি। এতে করে ওনার কখন মৃত্যু হয়েছে, কি কারনে মৃত্যু হয়েছে সেটি সঠিকভাবে জানা জরুরী। আজ থেকে প্রায় দেড় মাস আগে ঢাকা সিএমএম কোর্টে শহীদের মৃত্যুর সঠিক কারণ উদঘাটনের জন্য আবেদন করা হয়। সেই আবেদনের প্রেক্ষিতে কোর্ট থেকে লাশ উত্তোলনের আদেশ দেওয়া হয়।

শহীদ মাসুদ রানার স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস সাফা বলেন, পুলিশ বাদী মামলা করার পর জেলা প্রশাসন থেকে আমার স্বামীর লাশ উত্তোলনের জন্য অনেকে এসেছিল। কিন্তু আমরা লাশ উত্তোলনে আপত্তি জানাই। কারন আমরা কোন মামলা করিনি। আমরা চাইনা সেই পুরনো ক্ষত আবার পুনরাবৃত্তি হোক। লাশ উত্তোলনে আমাদের আপত্তি থাকায় আমরা একটি আপত্তিনামা জমা দিই এবং পরবর্তীতে লাশ উত্তোলন স্থগিত করা হয়। শহীদ মাসুদ রানার বড় ভাই বাবুল আক্তার বলেন, পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করেছে, আমরা মামলা করিনি। আজ থেকে প্রায় ১৫ মাস আগে ময়নাতদন্ত ছাড়াই আমার ভাইয়ের লাশ দাফন করা হয়েছে। তাহলে এখন কেন ময়নতদন্ত করার জন্য লাশ উত্তোলন করতে হবে। ১৫ মাস আগে আমরা এক ব্যাথায় ব্যথিত হয়েছি। আমরা চাইনা সেই ব্যথার আবার পুনরাবৃত্তি হোক।

এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন- আলমডাঙ্গা থানার অফিসার্স ইনচার্জ (ওসি) মাসুদুর রহমান, শহীদ মাসুদ রানার পরিবারর্গ, চুয়াডাঙ্গা জেলার জুলাই যোদ্ধারা ও জে লা পুলিশের একটি টিম।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *