চুয়াডাঙ্গায় ৭৫টি অভিযোগের গণশুনানি, একজনকে সাময়িক বরখাস্ত

স্টাফ রিপোর্টার

চুয়াডাঙ্গার মত একটি ঐতিহ্যবাহী জেলায় দুর্নীতি কম হবে আশা করি। দুর্নীতি দমন কমিশনে অনেক জেলা থেকে নানান রকম অভিযোগ আসে। সবথেকে কম অভিযোগ আসে এই চুয়াডাঙ্গা জেলা থেকে। আমরা চুয়াডাঙ্গা জেলায় আসতে পেরেছি এটা আমাদের সৌভাগ্য নয়। যদি চুয়াডাঙ্গায় কোন দুর্নীতি না হতো, যদি আমাদের দুর্নীতি প্রতিরোধে এই জেলায় না আসা লাগতো সেটি হতো আমাদের কাছে সবথেকে সৌভাগ্যের। সোমবার সকালে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসকের সাহিত্য মঞ্চে অনুষ্ঠিত দুর্নীতি দমন কমিশনের ১৮৮তম গণশুনানিতে প্রধান অতিথির বক্ত্যব্যে দুদক চেয়ারম্যান ডঃ মুহাম্মদ আব্দুল মোমেন একথা বলেন।

তিনি আরো বলেন, দুর্নীতি দমন করা যতটা সহজ মনে হয়, আসলে এটি ততটা সহজ না। কারণ আমাদের ভেতরে অন্তর সত্তার মধ্যেই কিছু দুর্নীতি রয়ে গেছে। যারা সেবা দাতা তাদের বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ আসবেই এটা খুবই স্বাভাবিক। এতে করে সেবা গ্রহীতা যে অভিযোগ করবেন তার উপরে কেউ ক্ষিপ্ত হবেন না। আমাদের দেশের মোট জিডিপির ২ শতাংশ দুর্নীতি হয়ে যায়। চুয়াডাঙ্গা জেলাবাসিকে দুর্নীতি প্রতিরোধে ভূমিকা রাখতে হবে। জেলার সকল সরকারি কর্মকর্তাদের জেলাবাসীর সেবা নিশ্চিত করতে হবে। দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়াই হোক সকলের লক্ষ্য।

‘সবাই মিলে গড়বো দেশ, দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ’ এই স্লোগানকে সামনে রেখে চুয়াডাঙ্গায় গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুনানির আয়োজন করেন সমন্বিত দুর্নীতি দমন কমিশন ঝিনাইদহ কার্যালয়। চুয়াডাঙ্গা জেলা  প্রশাসক ও জেলা দুর্নীতি দমন প্রতিরোধ কমিটির আয়োজনে এ শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।

গণশুনানি উপলক্ষে আলোচনা সভায় সভাপত্বিত করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম। সভার শুরুতেই স্বাগত বক্তব্য রাখেন খুলনা বিভাগীয় দুর্নীতি দমন কমিশনের পরিচালক জালাল উদ্দীন আহম্মদ। এসময় আরও বক্তব্য রাখেন দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্ত কমিশনার মিঞা মুহাম্মদ আলি আকবার আজিজী, দুর্নীতি দমন কমিশনের মহাপরিচালক আক্তার হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ক্রাইম এন্ড (অপস্) জামাল আল নাসের।

গণশুনানি পর্বের শুরুতেই জেলা গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মহসিন আলীর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে ধরা হয়। অভিযোগ প্রসংগে গণপূর্ত বিভাগের প্রকৌশলী বিভিন্ন যুক্তি দিয়ে বোঝান। এরপর চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন ডাঃ হাদী মোঃ জিয়া উদ্দিন আহম্মদের বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য সহকারী নিয়োগে পরিক্ষায় অর্থ নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। এই অভিযোগটি করেন তুহিন হোসেন। সিভিল সার্জন হাদী জিয়া উদ্দিন বলেন, সঠিকভাবে ও স্বচ্ছভাবে পরিক্ষা হয়েছে। এই পরিক্ষায় যারা উত্তীর্ণ হয়েছে তাদের নিয়োগ সুপারিশ করা হয়েছে। এখানে কোন অনিয়ম হয়নি। এরপর সদর হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা. বিদুৎ কুমার বিশ্বাস সদর হাসপাতালের পরিস্কার ও পরিচ্ছন্ন বাবদ ২৪ লাখ টাকা আত্মসাৎ এর অভিযোগ উঠে। এই অভিযোগটি করেন আজকের পত্রিকার চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রতিনিধি মেহেরাব্বিন সানভি। এই অভিযোগের বিষয়ে ডাঃ বিদ্যুৎ  জানান, হাসপাতালের পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন বাবদ বিপুল অর্থ ব্যয় হয়ে থাকে। তাছাড়া হাসপাতালে জনবল বেশি। গণশুনানিতে সদর হাসপাতালের তত্বাবধায়ককে পরবর্তী এই ভুল যেন না হয়, সেজন্য সর্তক করে দেন দুদকের চেয়ারম্যান।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা এক রোগী অভিযোগ করেন, সদর হাসপাতালে দায়িত্বরত ডাঃ অনিক চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের বিভিন্ন ভাবে হয়রানি ও অতিরিক্ত টেস্ট রিপোর্ট করিয়ে অধিক টাকা হাতিয়ে নেন। এ অভিযোগের ভিত্তিতে গণশুনানিতে ডাঃ অনিককে সর্তক করে দেন দুদকের চেয়ারম্যান। চুয়াডাঙ্গা সাব রেজিষ্ট্রার ও রেজিস্ট্রার অফিসের কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ভূমিদূস্য, দলিল রেজিষ্ট্রারে অতিরিক্ত টাকা আদায় ও নিয়মমতো অফিস না করার অভিযোগ উঠে। চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার আওতায় অবকাঠামো নির্মাণে অতিরিক্ত কর আদায় করছেন পৌর প্রশাসক ও স্থানীয় সরকরের উপপরিচালক শারমিন আক্তারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়। অভিযোগে আরও উঠে আসে বরাদ্দ আসা সত্ত্বেও পৌর ড্রেন নির্মাণে কাজ না করা।

গণশুনানিতে চুয়াডাঙ্গা জেলার ২৬টি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিবৃন্দ এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহের সেবা প্রত্যাশীরা অংশগ্রহণ করেন। এতে দুদকের তফসিলভুক্ত ৭৫টি অভিযোগের শুনানি হয়। যার মধ্যে একটি অভিযোগ অনুসন্ধানে নেয়া হয়, একটি অভিযোগে একজনকে সাময়িক বরখাস্ত করে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত প্রদান করা হয়। ৩৭ অভিযোগ নিষ্পত্তি করা হয় এবং বাকি অভিযোগসমূহ প্রতিবেদন দাখিল সাপেক্ষে নিষ্পত্তি করা হবে।

গণশুনানিতে আরো উপস্থিত ছিলেন- অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আহমেদ মাহবুব উল ইসলাম, নয়ন কুমার রাজবংশী, চার উপজেলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাগণ, চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আব্দুর রশিদ, সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক সিদ্দিকুর রহমান, সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক কামরুজ্জামানসহ বিভিন্ন সরকারি  সরকারি দপ্তরের দপ্তর প্রধান, জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সদস্যবৃন্দ, সাংবাদিকবৃন্দ ও সাধারণ জনগণ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *