চলছে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের কর্মবিরতি বার্ষিক পরীক্ষা সন্নিকটে হওয়ায় শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া নিয়ে উদ্বিগ্ন অভিভাবকেরা

আব্দুর রহমান অনিক, দর্শনা

এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা তাদের তিন দফা ন্যায্য দাবির বাস্তবায়নের লক্ষ্যে অবিরাম কর্মবিরতি পালন করছেন। আন্দোলনে অংশ নিচ্ছেন স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা।

তাদের প্রধান তিনটি দাবি হলো, ১ বাড়িভাতা ২০ শতাংশ বৃদ্ধি, ২ শিক্ষক ও কর্মচারী উভয়ের জন্য চিকিৎসা ভাতা ১৫শত টাকা নির্ধারণ, ৩ কর্মচারীদের উৎসব ভাতা ৭৫ শতাংশ ঘোষণা। দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত শ্রেণিকক্ষে না ফেরার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষকরা। এদিকে বছরের শেষ প্রান্তে এসে বিদ্যালয়গুলোতে বার্ষিক পরীক্ষা ঘনিয়ে এসেছে, আর এই অবিরাম কর্মবিরতিতে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় মারাত্মক প্রভাব পড়ছে। ফলে অভিভাবকদের মধ্যে দেখা দিয়েছে গভীর উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা। দামুড়হুদা উপজেলার সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাদে প্রায় সব এমপিওভুক্ত স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।

দামুড়হুদা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার জিয়াউল হক বলেন, শিক্ষকরা জাতি গঠনের কারিগর। তাঁদের ন্যায্য দাবি সরকার অবশ্যই বিবেচনা করবে বলে আমি আশাবাদী। খুব দ্রুতই আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান হবে এবং শিক্ষকরা শ্রেণিকক্ষে ফিরবেন।

সরেজমিনে দর্শনা দারুসসুন্নাত সিদ্দীকিয়া ফাযিল মাদ্রাসার মাধ্যমিক বিভাগে গিয়ে দেখা যায়, শ্রেণিকক্ষ ফাঁকা, শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি নেই বললেই চলে। অফিস খোলা থাকলেও শিক্ষক-কর্মচারীরা অলস সময় পার করছেন।

দর্শনা দারুসসুন্নাত সিদ্দীকিয়া ফাযিল মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোহাম্মদ শফী উদ্দীন মোল্লা বলেন, সকালে কিছু শিক্ষার্থী আসে, কিন্তু পাঠদান না থাকায় কিছুক্ষণ পরই চলে যায়। আমরা জাতি গঠনের কারিগর, বিএ পাসের নিচে কোনো শিক্ষক এখানে নেই। ন্যায্য দাবি নিয়ে আন্দোলনে নেমেছি। নিজের সন্তানদের মতোই শিক্ষার্থীদের ভালোবাসি, কিন্তু দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।

দর্শনা আলহেরা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল হান্নান জানান, তিন দফা দাবি বাস্তবায়নের দাবিতে আমরা আন্দোলন করছি, তাই পাঠদান আপাতত বন্ধ রয়েছে। তবে অফিসের প্রশাসনিক কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবে চলছে। অভিভাবকদের অনেকেই শিক্ষকদের দাবির প্রতি সহানুভূতিশীল হলেও সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তা প্রকাশ করেছেন।

একাধিক অভিভাবক বলেন, আমরা শিক্ষকদের দাবির সঙ্গে একমত, কিন্তু সন্তানদের বার্ষিক পরীক্ষা একেবারে সামনে। এখন ক্লাস না হলে তাদের প্রস্তুতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। দীর্ঘদিন কর্মবিরতি চলতে থাকলে শিক্ষার মান মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তারা।

শিক্ষকরা জানিয়েছেন, তারা সরকারের কাছে দ্রুত আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতা ও সমাধানের উদ্যোগ প্রত্যাশা করছেন, যাতে শিক্ষার্থীরা আবারও স্বাভাবিক শিক্ষার পরিবেশে ফিরতে পারে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *