মুন্না রহমান, স্টাফ রিপোর্টার
বিজয়া দশমীর মধ্য দিয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার সমাপ্তি ঘটলো। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সিঁদুর খেলা, অঞ্জলি ও প্রসাদ বিতরণের মধ্য দিয়ে শুরু হয় দশমীর আনুষ্ঠানিকতা। বিকেলে আবেগঘন পরিবেশে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে পূজার মহোৎসব শেষ হয়।
শহরতলীর সকল দুর্গা মন্দিরগুলোর আয়োজন ছিল একেবারেই ভিন্ন আঙ্গিকে। বিকেল ৩টায় মন্দিরগুলো থেকে প্রতিমা বের হলে শুরু হয় বিশাল শোভাযাত্রা। এতে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে ভক্তরা ঢাক-ঢোলের তালে নেচে-গেয়ে অংশ নেন। কিছু কিছু মন্দিরের ছেলে সদস্যরা একই রঙের টি-শার্ট এবং মেয়েরা একই রঙের শাড়ি পরে অংশগ্রহণ করায় শোভাযাত্রাটি হয়ে ওঠে আরও বর্ণিল ও প্রাণবন্ত। শোভাযাত্রাগুলো শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে দৌলাতদিয়ার ব্রিজ ঘাটে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে সন্ধ্যায় প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে সমাপ্তি ঘটে ৫ দিনের পূজার আনুষ্ঠানিকতার।
এবার চুয়াডাঙ্গার ১১২ টি মন্দিরে উদযাপিত হয়েছে শারদীয় দুর্গাপূজা। আলমডাঙ্গা উপজেলায় ৩৫টি, দামুড়হুদা উপজেলায় ২১ টি, জীবননগর উপজেলায় ২৫ টি এবং চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় ৩১ টি পূজা মন্ডপে দুর্গাপূজা উদযাপিত হয়েছে। জেলার চারটি উপজেলাতেই সুষ্ঠুভাবে প্রতিমা বিসর্জন সম্পন্ন হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। জেলার কোথাও কোন আপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
চুয়াডাঙ্গা শহরের বড় বাজার, তালতলা, বেলগাছি, দাসপাড়া, দক্ষিণ মাঠপাড়া ও আলুকদিয়া মণ্ডপসহ মোট ১১২টি পূজামণ্ডপ থেকে বিভিন্ন জায়গায় বিকাল ৩টা থেকে একে একে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়। শোভাযাত্রা ও বিসর্জন ঘিরে শহরে বিরাজ করে উৎসবমুখর পরিবেশ। ঢাক-ঢোল, ভক্তদের গান ও নাচে মুখরিত হয়ে ওঠে চারপাশ। নদীর ঘাটগুলোতেও ভিড় জমায় অসংখ্য দর্শনার্থী। প্রতিমা বিসর্জনকালে পূজা রায় বলেন, প্রতিবছরই এই দিনটিতে একটি বিষাদের ছায়া বিরাজ করে। মায়ের মর্তে আসাটা যেমন আনন্দের আবার কৈলাসে ফিরে যাওয়াটা তেমনই বেদনার। পুজোর এই পাঁচটি দিন খুব আনন্দের সাথেই কেটেছে আমাদের। তবে আজকের এই বিদায় বেলায় পৃথিবীর সকলেই যেন ভালো থাকে এটিই চাওয়া মায়ের কাছে।
দৌলাতদিয়ার দক্ষিণ পাড়া বারোয়ারী দুর্গা মন্দিরের কোষাধ্যক্ষ অঞ্জন সাহা আবির বলেন, এবারের পূজা ভিন্ন আঙ্গিকে সম্পন্ন হয়েছে। ভক্তদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ও সবার আন্তরিকতায় আয়োজনটি সফল হয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি, মা দুর্গার আশীর্বাদে আগামী দিনগুলো শান্তি, ভ্রাতৃত্ব আর সমৃদ্ধিতে ভরে উঠবে। বিজয়া দশমীকে ঘিরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে নেওয়া হয় বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা। পুলিশের পাশাপাশি আনসার ও স্বেচ্ছাসেবকেরাও দায়িত্ব পালন করেন। সর্বত্র ছিল শান্তিপূর্ণ ও আনন্দঘন পরিবেশ। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মতে, দেবী দুর্গার মূল বার্তাই হলো অশুভ শক্তির বিনাশ ও শুভ শক্তির জয়। পূজা শেষে ভক্তরা মায়ের কাছে প্রার্থনা করেন, আগামী দিনগুলো যেন সুখ, শান্তি ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে ভরে ওঠে।