আলমডাঙ্গা অফিস
আলমডাঙ্গা পৌর শহরের বুকে বছরের পর বছর ধরে কীটনাশক ও হরমোন তৈরি করে প্রতারণা চালিয়ে আসছিল ‘পিসিআই এগ্রি কেয়ার’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান। নেই কেমিস্ট বা বিশেষজ্ঞ—শুধু মনগড়া কায়দায় তৈরি এসব কৃষিপণ্য বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি হাজার হাজার কৃষকের ফসলের সর্বনাশ ডেকে আনা হয়েছে।
অভিযুক্ত মালিক আলমডাঙ্গা শহরের মাদ্রাসা পাড়ার নিমাই চন্দ্র বিশ্বাস এর ছেলে অজয় কুমার বিশ্বাস। আলমডাঙ্গা পৌর এলাকার নওদাবন্ডবিল গ্রামের অবস্থিত গুদামে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ ভুয়া কৃষিপণ্য উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে—রুটপ্লাস ৩ হাজার কেজি, পিসিআই চমক ১২ লিটারের ১২৫ কার্টুন, পিসিআই রুট ৬ হাজার ৮৪০ কেজি, মনিমুক্তা জিংক ১০ কেজির ১৬৪ কার্টুন, মনিমুক্তা চিলেটেড জিংক ৬৬ কেজি, মনিমুক্তা সলুবোর ছোট ১৭১ কেজি, বড় ৩০০ কেজি, মনিমুক্তা সলুবোর বোরন ৮ বস্তা খালি প্যাকেট, ১৩ বস্তা খালি বোতল, জিংক-৩ দুই কার্টুন, পিসিআর ব্যারেল ৫টি, বোরন সলুবোর ১২৫ কেজি এবং নকল কৃষিপণ্য তৈরির আরও অসংখ্য সরঞ্জাম।
এর আগে ১৪ আগস্ট উপজেলা প্রশাসন ও কৃষি অফিসের যৌথ অভিযানে নিয়ম বহির্ভূতভাবে কীটনাশক বিক্রির দায়ে প্রতিষ্ঠানটিকে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। তখন মালিককে বৈধ কাগজপত্র প্রদর্শনের নির্দেশ দেওয়া হলেও তিনি তা দেখাতে ব্যর্থ হন।
অবশেষে ১৮ আগস্ট সহকারী কমিশনার (ভূমি) আশীষ কুমার বসু ও উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা উদয় রহমানের নেতৃত্বে পুনরায় অভিযান চালানো হয়। এ সময় প্রতিষ্ঠানটির কারখানাসহ তিনটি গুদাম সিলগালা করা হয়। প্রশাসন জানিয়েছে, আগামী চার মাসের মধ্যে বৈধ কাগজপত্র প্রদর্শন করতে না পারলে নেওয়া হবে কঠোর ব্যবস্থা।
সহকারী কমিশনার (ভূমি) আশীষ কুমার বসু বলেন, “প্রতিষ্ঠানটির মেয়াদোত্তীর্ণ লাইসেন্স ব্যবহার, লাইসেন্সবিহীন পণ্য বিপণন এবং সার ও হরমোনের গুণগত মান নিয়ন্ত্রণ না করা কৃষির জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। কৃষি উৎপাদন ও কৃষিপণ্যের মান রক্ষায় এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ রাখা জরুরি। জনস্বার্থে এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।”
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা উদয় রহমান বলেন, “বছরের পর বছর ধরে এসব ভুয়া পণ্য বাজারজাত করার কারণে অজান্তেই অনেক কৃষক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। কৃষি অফিসের অনুমোদন ছাড়া কোনো সার বা কীটনাশক বিক্রি করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ।”
খোদ পৌর শহরের ভেতরে বসে এমন ভয়ংকর প্রতারণা চালানোর ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। তাদের দাবি, কৃষকদের সাথে প্রতারণাকারীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হোক।