আলমডাঙ্গা অফিস
আলমডাঙ্গা উপজেলার ভাংবাড়িয়া ইউনিয়নের বাঁশবাড়িয়া গ্রামের প্রবাসী হাফিজুল ইসলাম (৪২) মৃত্যুর ১০ দিন পর নিথর দেহ হয়ে ফিরলেন দেশের মাটিতে। গতকাল শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টায় লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স তাঁর গ্রামের বাড়িতে পৌঁছালে কান্নায় ভেঙে পড়েন স্ত্রী, সন্তান ও স্বজনরা। আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে পুরো গ্রাম, নেমে আসে শোকের ছায়া।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, মালয়েশিয়ায় কর্মরত অবস্থায় গত ৪ জুন ভোর ৪টায়(বাংলাদেশ সময়) নিজ রুমে ঘুমের মধ্যেই স্ট্রোকে মৃত্যুবরণ করেন হাফিজুল ইসলাম। টানা ১৭ বছর ধরে তিনি সেখানে প্রবাসজীবন কাটিয়েছেন। একটি পাইপলাইন নির্মাণ কোম্পানিতে কর্মরত ছিলেন তিনি। পরিবারের মুখে হাসি ফোটানোর স্বপ্ন নিয়েই অতিবাহিত করেছেন জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময়গুলো। হাফিজুল ওই গ্রামের মৃত সামসুল হক মণ্ডলের ছোট ছেলে।
সহকর্মী মিনারুল ইসলাম, যিনি আলমডাঙ্গার ডাউকি ইউনিয়নের হাউসপুর গ্রামের বাসিন্দা জানান, মালয়েশিয়ায় তাঁরা একই কক্ষে বসবাস করতেন। কিছুদিন আগে হাফিজুল অবৈধ অবস্থান শেষে নতুনভাবে ভিসা অর্জন করেছিলেন। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিণতি স্বপ্নপূরণের আগেই থেমে যায় তাঁর জীবন।
‘ফ্রি ভিসা’য় মালয়েশিয়ায় অবস্থান করায় সরকারিভাবে মরদেহ দেশে আনতে কোনো সহায়তা পাওয়া যায়নি। এতে পরিবার পড়ে যায় চরম আর্থিক সংকটে। এমন অবস্থায় হাউসপুর গ্রামের মানবিক ব্যক্তি আনারুল ইসলাম ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা সহায়তা করেন, যার মাধ্যমে লাশ দেশে আনা সম্ভব হয়।
এ ছাড়া, মরদেহ পরিবহনের সময় মালয়েশিয়া প্রবাসী কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে ৩৫ হাজার টাকার একটি চেক প্রদান করা হয়, যা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গ্রহণ করেন হাফিজুল ইসলামের মেজ ভাই।
নিহতের মেজ চাচা নিজামউদ্দিন বলেন, ‘ছেলেটা কত কষ্ট করে বিদেশে দিন কাটিয়েছে! এত বছর পর লাশ হয়ে ফিরবে, ভাবতেও পারিনি। ওর মতো পরিশ্রমী ছেলে আজকাল খুব কম দেখা যায়।’ পরে সকাল সাড়ে ১১টায় গ্রামের জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে জানাজা শেষে হাফিজুলের মরদেহ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। একজন পরিশ্রমী প্রবাসীর এমন করুণ বিদায় কেবল একটি পরিবারের নয়, বরং গোটা সমাজের জন্যই এক হৃদয়বিদারক বার্তা হয়ে রইল। দীর্ঘ প্রবাসজীবনের শেষ অধ্যায় এভাবে লাশ হয়ে ফেরা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় অভিবাসী জীবনের অজানা শোক ও নির্মম বাস্তবতা।
লাশ হয়ে ফিরলেন প্রবাসী হাফিজুল শোকে মুহ্যমান আলমডাঙ্গার বাঁশবাড়িয়া গ্রাম
