চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর জেলার ১১৩ কিঃ মিঃ সীমান্ত, সুরক্ষায় নিয়োজিত বিজিবি, অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল নাজমুল হাসান সীমান্ত এলাকায় অবৈধ কর্মকান্ড আন্তঃ সীমান্ত অপরাধ দমন ও জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন বিষয়ে মতবিনিময় সভায়

স্টাফ রির্পোটার:
সীমান্ত এলাকায় জনসাধারনের অবৈধ কর্মকান্ড আন্তঃ সীমান্ত অপরাধ দমন ও জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন বিষয়ে এক মত বিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল সোমবার সকালে দর্শনা আইসিপি সম্মেলন কেন্দ্রে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সরকারী ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, সুশীল সমাজ ও গনমাধ্যম কর্মিরা অংশ নিয়ে সীমান্ত সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন।

অনুষ্ঠানে চুয়াডাঙ্গা ৬ বিজিবি অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল নাজমুল হাসান সভায় উপস্থিত প্রত্যেকের সাথে ঈদ-উল-ফিতরের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। পরে মোঃ নাজমুল হাসান মতবিনিময় সভায় বলেন, ৬ বিজিবি চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর জেলার ১১৩ কিঃ মিঃ সীমান্ত সুরক্ষায় নিয়োজিত রয়েছে। এই দীর্ঘ সীমান্ত সুরক্ষায় চুয়াডাঙ্গা ব্যাটালিয়নে কর্মরত সদস্যগণ বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার মধ্যে দিয়েও সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে দিনরাত নিরলসভাবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। সীমান্তে দায়িত্ব পালনকালে কিছু কিছু সমস্যা আমাদের প্রতিনিয়ত মোকাবেলা করতে হয়।

বিজিবি হবে সীমান্তে আস্থা ও নিরাপত্তার প্রতীক। এই মূলমন্ত্রকে বুকে ধারণ করে বিজিবি’র সকল সদস্যগণ প্রতিনিয়ত সীমান্তে দায়িত্বপালন করে যাচ্ছে। বিজিবি শুধু একটি বাহিনী নয় বরং এই অঞ্চলের মানুষের নিরাপত্তা, আস্থা ও সহমর্মিতার প্রতীক। আমরা বিশ্বাস করি জনগণের সহযোগিতা ছাড়া সীমান্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। তাই বিজিবি ও স্থানীয় জনগণের মাঝে পারস্পরিক বিশ্বাস, সম্মান ও সহযোগিতার বন্ধন আরও সুদৃঢ় করতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আসুন, আমরা সবাই মিলে সীমান্তকে করি শান্তিপূর্ণ, নিরাপদ ও নির্ভরতার জায়গা-যেখানে বিজিবি হবে আস্থা ও নিরাপত্তার প্রতীক।

চোরাচালান বাংলাদেশের অর্থনীতি, নিরাপত্তা এবং সামাজিক স্থিতিশীলতার জন্য একটি বড় হুমকি। সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলোতে এই অপরাধ বেশি দেখা যায়। এ অবস্থায় সীমান্ত রক্ষা বাহিনী (বিজিবি) এবং সীমান্তে বসবাসকারী জনগণ উভয়ের সম্মিলিত ভূমিকা চোরাচালান দমনে গুরুত্বপূর্ণ। সময়োপযোগী গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে বিজিবি নিয়মিত অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে অবৈধ পণ্য, মাদক, অস্ত্র ও গবাদিপশু আটক করে থাকে। বিজিবি’র একক প্রচেষ্টায় সীমান্তে চোরাচালান প্রতিরোধ করা সম্ভবপর নয়। অনেক সময় স্থানীয় জনগণ চোরাচালানের তথ্য সরবরাহ করে বিজিবিকে সহায়তা করে থাকে।

সীমান্ত এলাকার মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা প্রসংগে লে. কর্ণেল নাজমুল হাসান বলেন, সীমান্ত এলাকার মানুষের নিরাপত্তা আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। বিজিবি কেবল সীমান্ত রক্ষার দায়িত্ব পালন করে না বরং এই অঞ্চলের মানুষের জান-মালের নিরাপত্তা, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। সীমান্তে চোরাচালান, মানবপাচার বা যে কোনো অপরাধমূলক কর্মকান্ড দমন করতে আমরা কঠোর নজরদারি বজায় রাখা হচ্ছে।
সীমান্ত এলাকায় বসবাসরত অনেক নাগরিক নানা ধরনের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও অবকাঠামোগত বঞ্চনার শিকার হন। কর্মসংস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও নিরাপত্তার ঘাটতির কারণে তারা দারিদ্র্য সীমার নিচে জীবনযাপন করে। এই জনগোষ্ঠীকে আর্থিকভাবে সাবলম্বী করা কেবল তাদের জীবনমান উন্নয়নের জন্য নয়, সীমান্তের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা রক্ষার জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সীমান্ত এলাকায় বসবাসকারী জনসাধানের সীমিত কর্মসংস্থান ও আয়ের উৎস, ক্ষুদ্র ব্যবসা বা কৃষি কাজের জন্য পুঁজি ও প্রশিক্ষণের অভাব এবং শিক্ষার ঘাটতির কারণে বিকল্প পেশায় যুক্ত হওয়ার অক্ষমতার হওয়ার কারণে অধিকাংশ সীমান্তবর্তী জনগণ মাদক ও চোরাচালানের সাথে সম্পৃক্ত হচ্ছে। সীমান্ত এলাকার হতদরিদ্র জনগণকে আত্মনির্ভরশীল করে তুলতে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাত, এনজিও ও সাধারণ জনগণের সম্মিলিত প্রয়াস অপরিহার্য। আমরা একসাথে কাজ করলে সীমান্তে বসবাসকারী জনগোষ্ঠীকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাধীন, আত্মবিশ্বাসী ও দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে পারবো।

মত বিনিময় সভায় দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার, দামুড়হুদা সহকারী কমিশনার ভূমি, দর্শনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, স্থানীয় কলেজ প্রভাষক, প্রধান শিক্ষক, সমাজ সেবক, মসজিদের ইমাম, জনপ্রতিনিধি ও ব্যবসায়ীরা সীমান্ত সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি নিয়ে মুক্ত আলোচনা করেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *