দামুড়হুদা অফিস
দামুড়হুদা উপজেলায় চলতি রবি মৌসুমে তীব্র সার সংকট দেখা দিয়েছে। ভরা মৌসুমে কৃষকরা তাদের চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সার না পাওয়ায় মাঝে মধ্যেই ঘটছে মাঠ পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করা কৃষি কর্মকর্তাসহ কৃষক কৃষক বিভিন্ন অপ্রিতীকর ঘটনা। এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি হওয়ায় সংশ্লিষ্টদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন সচেতন মহলসহ উপজেলার সর্বস্তরের কৃষক সমাজ।
জানা যায়, ভরা রোপন মৌসুমে সার ডিলারদের গোডাউনে পর্যাপ্ত পরিমাণ ইউরিয়া ও পটাশ সার মজুদ থাকলেও কৃষকদের বর্তমানে সময়ে প্রয়োজন ট্রিপল সুপার ফসফেট (টিএসপি) ও ডিএপি সার। তবে এ সারের প্রয়োজন পড়লেও তা সংকট। তবে সামান্য পরিমাণ সার ডিলারদের ঘরে টিএসপি ও ডিএপি আসলেও তা চাহিদার তুলনায় একেবারে কম। ফলে জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে লাইন দাঁড়িয়ে সার নিতে হচ্ছে কৃষকদের। টাঁসাটাসি করে সকাল থেকে সব কাজ বাদ দিয়ে স্বল্প পরিমাণে সার নিতে পোয়াতে হচ্ছে সীমাহীন দূর্ভোগ আর ঘটছে ছোট-খাটো অপ্রীতিকর ঘটনা। এরই ধারাবাহিকতায় গত সোমবার রাতে উপজেলা সদরের বিসিআইসি ডিলার মেসার্স আনোয়ার টেডার্সে চাহিদার তুলনায় সামান্য পরিমাণ ৩২৪ বস্তা টিএসপি ও ১৩৭৬ বস্তা ডিএপি সার আসে। এরই প্রেক্ষিতে, মঙ্গলবার ভোর থেকে দোকানের সামনে সার নিতে লাইন দিয়ে দাড়িয়ে থাকে কৃষকরা। বেলা ১০টার দিকে পুলিশের উপস্থিতিতে একটি জাতীয় পরিচয়পত্রের বিপরিতে ১বস্তা টিএসপি অথবা ১বস্তা ডিএপি সার দেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে চলতি মৌসুমে জেলার দামুড়হুদা উপজেলায় প্রধান খাদ্য শস্য ভুট্টা, বারমেসে সবজি পেঁপেঁসহ শীতকালীন সব্জী ফুলকপি, বাঁধাকপি, বেগুন, টমেটো, আলু, গাজর, শসা, শিম, পালং শাক, মুলা, লাউ, মরিচসহ বিভিন্ন রকম সবজি মাঠে রয়েছে,ফলে সার প্রয়োগ জরুরি হওয়ার পরেও সংকটে চিন্তিত রয়েছেন উপজেলার কৃষকরা।
কৃষকরা জানিয়েছেন, ভরা মৌসুমে সার সংকট দুঃখ জনক। এর আগেও সার না পেয়ে কৃষকরা মিশ্র সার, ইউরিয়া ও পটাশ সার দিয়ে বপন কাজ করছেন বিভিন্ন ধরনের ফসল। এতে করে ফসলের উৎপাদন অনেকাংশে কমে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।
উপজেলার সদর ইউনিয়নের দেউলি গ্রামের কৃষক আনোয়ার হোসেন বলেন, তার প্রায় ৬ বিঘা জমিতে তিনি ৩বিঘা জমিতে কলা ও ভুট্টা আবাদ করেছেন। মাস খানেক আগে তিনি টিএসপি সার না পাওয়ায় অন্যান্য সার ব্যবহার করেছিলেন। এখন জমিতে সেচ দেওয়ার সময় হয়ে গেছে, এখন টিএসপি সার দিয়ে সেচ দিতে হবে সার আসার খবর পেয়ে ভোরে এসে বসে আছি দুপুর হয়ে গেল এখনো সার হাতে পায়নি, লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। তিনি আরো বলেন, সারের এমন অবস্থা, টাকা দিয়েও সার পাচ্ছি না এটি কেমন।
ইউনিয়নের পার-দামুড়হুদা গ্রামের কৃষক আব্দুস সামাদ বলেন, তিনি দুই বিঘা জমিতে ভুট্টা লাগিয়েছেন টিএসপি অথবা ডিএপি না পেয়ে মিশ্র সার দিয়ে লাগানো হয়েছে ফসল কেমন হবে বলতে পারছিনা। এছাড়া ২বিঘা পেঁপেঁ রয়েছে টিএসপি সার দেওয়ার দরকার কিন্তু শুধুমাত্র মিশ্র সার দেওয়া হয়েছে।
এদিকে, উপজেলা কৃষি অফিস সারের কোন সংকট নেই জানালেও, সার চাইলে তারা শুধুমাত্র ইউরিয়া ও পটাশ সার অথবা মিশ্র দিয়ে ফসল বপন করতে বলছেন। পরে টিএসপি সার আসলে টিএসপি অথবা ডিএপি সার দেওয়া যাবে বলে আশ্বস্ত করছেন।
উপজেলার সচেতন মহল বলছে, দেশের সার্বিক উন্নয়নে কৃষি ও কৃষকের ভূমিকা অপরিহার্য। দেশের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য কৃষি ও কৃষকের উন্নয়ন জরুরি। অথচ, আমরা প্রতিনিয়তই দেখছি সার সংকট, উচ্চ মূল্যে সার বিক্রি, সার সিন্ডিকেট, সরকারি প্রণোদনার সঠিক ব্যবহার হচ্ছে না, যা সত্যিকার অর্থে দুঃখ জনক। কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নে পর্যাপ্ত পরিমাণে সার, বীজ, সরকারি প্রণোদনার সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সকলের স্বদিচ্ছা, আন্তরিকতা ও দায়িত্বশীল হওয়া জরুরি।
দামুড়হুদা উপজেলার অতিরিক্ত কৃষি অফিসার অভিজিৎ কুমার বিশ্বাস জানিয়েছেন, উপজেলায় সারের বড় ধরনের কোন ঘাটতি নেই। মঙ্গলবার থেকে সার আসা শুরু হয়েছে। ১-২দিনের মধ্যে পর্যাপ্ত সার চলে আসবে আর কোন ঘাটতি থাকবেনা।
উল্লেখ্য, গত সোমবার উপজেলার নতিপোতা ইউনিয়নে একটি জাতীয় পরিচয় পত্রের বিপরিতে ২০ কেজি করে টিএসপি সার দেওয়া চলছিলেন। সার বিতরণ০কালীন সময়ে আব্দুল কাদের নামের এক কৃষক তার চাহিদামত সার না পাওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে সার বিতরণ তদারকি কর্মকর্তা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর দামুড়হুদা কার্যালয়ের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা নসির উদ্দীনকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় ভুক্তভোগী ওই কর্মকর্তা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও দামুড়হুদা মডেল থানায় লিখত অভিযোগ দায়ের করেছেন।



