চন্দ্র সাধু ও তার সংবদ্ধ চক্রের বিরুদ্ধে চুয়াডাঙ্গায় সংবাদ সম্মেলন

স্টাফ রিপোর্টার

আলোচিত ৮০ মামলার আসামি প্রতারক মহাদেব চন্দ্র সাধু ও তার সংবদ্ধ চক্রের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেছে ভুক্তভোগী দুইটি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারীরা। গতকাল রবিবার বেলা সাড়ে ১১ টায় চুয়াডাঙ্গা চেম্বার ভবনের সম্মেলন কক্ষে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। মেসার্স রাধিকা ওয়েল অ্যান্ড ডাউল মিল ও রাহাবার এগ্রো লিমিটেড এর আয়োজনে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে প্রতারক মহাদেব চন্দ্র সাধুর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ পাঠ করেন ভুক্তভোগি মেসার্স রাহাবার এগ্রো লিমিটেডের মালিক ইসমাইল হোসেন রতন।

প্রতারণা মামলার বাদি ইসমাইল হোসেন রতন অভিযোগ করে বলেন, আদালতে দায়ের করা প্রতারণা মামলায় মহাদেব চন্দ্র সাধুসহ আরও ১০ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে আসামীদের গ্রেফতারের নির্দেশ দিলেও পুলিশ তাদেরকে গ্রেফতার না করে পাল্টা সুবিধা দিয়ে আসছে। চুয়াডাঙ্গার পুলিশ সুপারের কাছে বিষয়টি জানানোর পরও তিনি আসামীদের গ্রেফতারে কোন পদক্ষেপ গ্রহন করেননি। এমনকি সদর থানার পরিদর্শক (অপারেশন) হোসেন আলী, মুন্সি ফারুক হোসেন ও কোর্ট পুলিশের এসআই নুতন আলী আসামীদের কাছে বাদির সকল প্রকার তথ্য সরবরাহ করে তাদেরকে গোপনে সুবিধা দিচ্ছে এবং পালিয়ে যেতে সহায়তা করছে। এ কারণে আসামীরা নানাভাবে হুমকি-ধামকি দিয়ে আসছে। মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য প্রতারণা মামলার বাকি ৯ আসামীকে গ্রেফতারের দাবি জানান তারা।

তিনি আরোও জানান, মহাদেব চন্দ্র সাধু ও তার সংঘবদ্ধ চক্রের বিরুদ্ধে প্রায় ২০ কোটি টাকার প্রতারণার মামলা আদালতে রয়েছে, যা গ্রেফতারী পরোয়ারা জারির পরেও এখনো ন্যায্য বিচার করা হয়নি। প্রতারক মহাদেব চন্দ্র একজন মহা প্রতারক ও অর্থ পাচারকারী এবং জুলাই হত্যার অন্যতম আসামী। ১৬ মাস আগে ৩৫ কোটি টাকার বিভিন্ন মালামাল বিক্রয় করা হয় মহাদেবের কাছে। কিন্তু মহাদেবেরে ভিজিটিং কার্ড, এনআইডি কার্ড ও ব্যবসার ঠিকানা খোজ করলে  তা সবই ভুয়া প্রমাণিত হয়। মহাদেব চন্দ্র ও তার সঙ্গী মাসুদ ২৯ জুন চুয়াডাঙ্গা জেলখানা থেকে বের হয়ে পড়েন। দেশের বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীদের সাথে বাকিতে লেনদেনের মাধ্যমে কয়েকশ কোটি টাকার প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে মহাদেব চন্দ্র সাধুর বিরুদ্ধে। তার বিরুদ্ধে অন্তত প্রতারণাসহ ৮০টি মামলা রয়েছে বলে জানা গেছে।

এর মধ্যে প্রতারণার অভিযোগে দায়ের করা একটি মামলায় তাকে চুয়াডাঙ্গা আদালতে হাজির করা হয়। গত বুধবার (০৫ নভেম্বর) চুয়াডাঙ্গার সিনিয়র জুডিসিয়াল আদালতে ওই মামলার শুনানী হয়। শুনানী শেষে আদালতের বিচারক তার জামিন আবেদন নাকচ করেন। মহাদেব চন্দ্র সাধুর বাড়ি সাতক্ষীরা জেলার মাগুরা গ্রামে। পরে মামলার বাদী লিটন কুমার আইচ আসামি মহাদেব চন্দ্র সাধুর বিরুদ্ধে প্রতারণার বিভিন্ন অভিযোগ তুলে ধরে ছিলেন।  এই মহাদেব চেক জালিয়াতিসহ বিভিন্ন জনের কাছ থেকে প্রতারণা করে টাকা আত্মসাৎ করেছে। যার ফলে বিভিন্ন মামলাসহ ৬টি মামলায় দন্ডপ্রাপ্ত আসামি হয়ে জেল কারাগার ভোগ করেছেন তিনি।

লিখিত বক্তব্যে জানা গেছে, ব্যবসার ফাঁদে ফেলে ২০ কোটি টাকা মূল্যের পণ্য হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে প্রতারণা মামলার আসামীদের পক্ষে পক্ষপাতিত্বমূলক আচরণের অভিযোগ তোলা হয়েছে পুলিশের বিরুদ্ধে। সংবাদ সম্মেলনে চুয়াডাঙ্গার পুলিশ সুপার, সদর থানার পরিদর্শকসহ কয়েকজন সদস্যের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ তোলেন মামলার বাদি ইসমাইল হোসেন রতন ও লিটন কুমার আইচ।

জানা যায়, দেড় বছর আগে সাতক্ষীরার মহাদেব চন্দ্র সাধু নামে একটি প্রতারক চক্রের সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে ব্যবসায়ী ইসমাইল হোসেন রতন ও লিটন কুমার আইচের। পণ্য কেনাবেচার মাধ্যমে তাদের মধ্যে আর্থিক লেনদেনের সম্পর্ক তৈরি হয়। হঠাৎ করেই তাদের কাছ থেকে ২০ কোটি টাকার পণ্য গ্রহন করার পর থেকে মোবাইল ফোন বন্ধ করে দেন মহাদেব চন্দ্র সাধু। এরপর তাঁকে খোঁজাখুজির এক পর্যায়ে বোঝা যায় মহাদেব চন্দ্র সাধু প্রকৃত অর্থে কোন ব্যবসায়ী না। তিনি একজন প্রতারক। কারণ তাঁর ভিজিটিং কার্ড, জাতীয় পরিচয় পত্র ও ঠিকানা সবই ছিল ভুয়া। এর মধ্যে মহাদেব চন্দ্র সাধু একটি ধর্ষন মামলায় চুয়াডাঙ্গায় গ্রেফতার হন। তাঁর খোঁজ পেয়ে চুয়াডাঙ্গা আদালতে ২০ কোটি টাকার প্রতারণা মামলা করেন ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীরা। এ মামলার সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেন তারা।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *