আজ মহাষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে শুরু হচ্ছে শারদীয় দুর্গাপূজা চুয়াডাঙ্গার বিভিন্ন মার্কেট ও দোকানগুলোতে ক্রেতাদের ভিড়, পূজোর কেনাকাটায় ব্যস্ত হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা

মুন্না রহমান, স্টাফ রিপোর্টার

মহাষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দূর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে আগামীকাল রবিবার। দুর্গাপূজা উপলক্ষে চুয়াডাঙ্গার কাপড়, জুতা ও প্রসাধনীর দোকানগুলোতে বেড়েছে ক্রেতাদের আনাগোনা। পাঁচ দিনব্যাপী এই পুজোর কেনাকাটায় ব্যস্ত হিন্দুধর্মাবলম্বীরা। ভিসা জটিলতা থাকায়, ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও ভারতে কেনাকাটা করতে যেতে পারছেন না অনেকেই। তাই নিজেদের পছন্দমত জিনিস মিলিয়ে নিচ্ছেন জেলা শহরগুলোতেই।

চুয়াডাঙ্গার বিভিন্ন মার্কেট ও দোকানগুলোতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, পরিবার পরিজন নিয়ে বিভিন্ন দোকানে ভিড় জমাচ্ছেন ক্রেতারা। আসন্ন এই দুর্গাপুজোকে ঘিরেই জেলাব্যাপী বিরাজ করছে উৎসবমুখর পরিবেশ। ক্রেতায় পরিপূর্ণ হয়ে আছে চুয়াডাঙ্গা শহরের আব্দুল্লাহ সিটি, সমবায় নিউমার্কেট, প্রিন্স প্লাজা, বিগ বাজার ও বড়বাজার পুরাতন গলির বিভিন্ন দোকানগুলো।

চুয়াডাঙ্গা শহরের আব্দুল্লাহ সিটিতে গিয়ে দেখা গেছে, সন্ধ্যার পর আব্দুল্লাহ সিটিতে ক্রেতাদের চাপ একটু বেশি। শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে অনেক হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা এখান থেকে কেনাকাটা সেরে নিচ্ছেন। তবে অনেক দোকান মালিকদের দাবী সনাতন ধর্মাবলম্বীদের দোকানেই বিক্রয় বেশি হচ্ছে। আব্দুল্লাহ সিটির দ্বিতীয় তলার ফ্যাশন ক্লাবের মালিক পারভেজ হোসেন লালটু বলেন, দূর্গা পূজা উপলক্ষে ক্রেতাদের আনাগোনা একটু বেড়েছে। বেচাকেনা আগের তুলনায় একটু ভালো হচ্ছে।  তবে পণ্যের দাম কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা ঢাকা থেকে প্রোডাক্ট নিয়ে আসি। আমাদের ক্রয় খরচ বেশি পড়ে বিধায় বিক্রয় খরচটাও বেশি হয়ে যায়। শাহিন থ্রি-পিস কর্নারের মালিক উজ্জ্বল হোসেন বলেন, আমরা রেগুলার দৈনিক ৯ থেকে ১০ হাজার টাকা বিক্রয় করি। পূজা উপলক্ষে ক্রেতাদের চাপ বেশি থাকলেও আব্দুল্লাহ সিটিতে তুলনামূলক একটু কম। তবে রেগুলারের থেকে এখন বেচাকেনা একটু বৃদ্ধি পেয়েছে।

এসময় পূজোর কেনাকাটায় ব্যস্ত থাকা অনুরাধার সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, দুর্গাপূজা উপলক্ষে প্রতিবারই কেনাকাটা করা হয়। তবে এবার দোকানগুলোতে একটু বেশিই ভীড় লক্ষ্য করছি। আমি দুইটি থ্রি পিস নিয়েছি এবং আমার ছেলেমেয়েদের জন্য জামা কাপড় ও জুতো কিনেছি। তবে প্রতিবারের তুলনায় এবার দামটা একটু বেশি মনে হচ্ছে। কেনাকাটা করতে মার্কেটে আসলেই উৎসবটাকে বেশি করে উপভোগ করা যায়। সকলের ভিড়ের মাঝে নিজের পছন্দমত জিনিসটা কিনতে পারাটা অনেক আনন্দের।

চুয়াডাঙ্গা নিউমার্কেটের মীর বস্ত্রালয়ের কর্মচারী স্বপন আহমেদ বলেন, নিউমার্কেটে ক্রেতা বরাবরই বেশি। তবে পূজা উপলক্ষে ক্রেতার সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। দিনের অতিরিক্ত গরমে অনেকেই কেনাকাটা করতে আসতে চায় না। সন্ধ্যার পরপরই দোকানগুলোতে ভিড় জমতে শুরু করে। পুজোর শেষ দিন অবধি এমন ভিড় থাকবে বলে আমি মনে করি।

চুয়াডাঙ্গার প্রিন্স প্লাজার ওয়ান টাচ এর মালিক সোহেল রানা বলেন, প্রিস প্লাজাতে বেশিরভাগই পুরুষদের জামা, প্যান্ট পাওয়া যায়। আমরা সচরাচার দেখি নারীদের কেনাকাটাকেই প্রাধান্য দেয় অনেকে। তাই যেসব মার্কেটে নারীদের পোশাক বেশি পাওয়া যায় বেচাকেনা টা সেখানেই বেশি হয়। তাছাড়া বিভিন্ন বস্ত্রালয়গুলোতে বেচাকেনা সব সময়ই বেশি। বেচাকেনা যেমনই হোক এতেই আমরা সন্তুষ্ট।

আলমডাঙ্গা উপজেলাতে হিন্দু ধর্মাবলম্বীর সংখ্যা বেশি থাকায় বরাবরই আলমডাঙ্গার মার্কেটগুলোতে ভিড় একটু বেশি। এবার আলমডাঙ্গা উপজেলায় ৩৩ টি মন্দিরে দুর্গা পূজা উদযাপন হবে। দুর্গাপূজা উপলক্ষে আলমডাঙ্গার মার্কেট ও দোকানগুলোতে পড়েছে কেনাকাটার ধুম। আলমডাঙ্গা শপিং সেন্টার জামজমিয়া সুপার মার্কেটগুলোতেও বাড়ছে ক্রেতাদের চাপ। বিজয়া দশমীর দিন পর্যন্ত এই বেচাকেনার চাপ থাকবে বলে মনে করেন অনেকেই।

চুয়াডাঙ্গার সরোজগঞ্জ বাজারেও দূর্গা পূজা উপলক্ষে মার্কেটগুলোতে বেশ ভিড় দেখা যাচ্ছে। সলোক সুপার মার্কেট, আতর আলী মার্কেট ও পূবালী ব্যাংক সংলগ্ন মার্কেটগুলোতে সন্ধ্যার পর থেকে জমে উঠছে কেনাবেচা।

শুধু কাপড়, প্রসাধনী কিংবা জুতার দোকানেই নয়, ভিড় দেখা যাচ্ছে জেলার মিষ্টান্ন ভান্ডার ও মুদি  দোকানগুলোতে। দুর্গাপূজো উপলক্ষে যেন চুয়াডাঙ্গা জেলা নতুন করে সেজে উঠেছে। উৎসবের আমেজে উৎসবমুখর পরিবেশে পরিবার-পরিজন নিয়ে সকলেই বের হচ্ছেন কেনাকাটা করতে। উৎসবের আনন্দ সকলের সাথে ভাগাভাগি করে নিতে কেনাকাটার যেন বিকল্প নেই। ছোট থেকে বড় সকলের শরীরের নতুন পোশাকে যেন সুসজ্জিত হয়ে উঠবে প্রতিটি পূজা মন্ডপ। প্রসংগত চুয়াডাঙ্গা জেলার ৪ উপজেলায় এবার ১১২ টি মন্দিরে দুর্গাপূজা উদযাপিত হবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *