স্টাফ রিপোর্টার
চুয়াডাঙ্গায় কারফিউ জারির ২৮ জুলাই ছিলো নবম দিন। ওই দিন সকাল ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল করেন চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক ড. কিসিঞ্জার চাকমা। দেশে কারফিউ জারি নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে একটি উদ্বেগ রয়েই গেছে। কয়েকদিনের উত্তাল পরিস্থিতির প্রভাব খুব বেশি চুয়াডাঙ্গায় না পড়লেও এই সময়ে মানুষের চিন্তা বেড়েছে। কারফিউ জারি থাকলেও তা খুব বেশি জনজীবনে প্রভাব পড়ছে না। ধীরে ধীরে চুয়াডাঙ্গা আগের চেনা রুপে ফিরছে।
পুলিশের কঠোর নজরদারীর কারনে আন্দোলনকারীরা মাঠে তেমন একটি সুবিধা করতে পারেনি। অপরদিকে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের মহড়ায় সাধারন শিক্ষার্থীরা থাকতো এক অজানা অতংকের মধ্যে। সব মিলিয়ে চুয়াডাঙ্গার পরিস্থিতি অনেকেটাই শান্ত ছিলো। জেলার ৪ উপজেলায় বড় ধরনের কোন সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি।
কারফিউ শিথিলের সময় সকাল ৬ট থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গা শহরের রূপ আগের মতো অনেকটা স্বাভাবিক। শহরের শহিদ আবুল কাশেম সড়ক, কোর্ট মোড়, কেদারগঞ্জ নতুন বাজার, রেল বাজারের বেশিরভাগ দোকানপাট খুলে দেয়। সাধারণ মানুষ আগের মতো কেনাকাটাও করেছে। ইজিবাইক, পাখিভ্যান ও লেগুনা চলাচল স্বাভাবিক ছিল। তবে চুয়াডাঙ্গা থেকে দূরপাল্লার কোনো বাস ছাড়েনি। এদিন অফিস-আদালত সব খোলা ছিল, যা স্বাভাবিক নিয়মে সব পরিচালিত হয়েছে। বন্ধ ছিলো সব শিক্ষা প্রতিষ্টান। এদিকে সারা দেশের ন্যায় চুয়াডাঙ্গা থেকে সব রুটে ট্রেন চলাচল ৮ম দিনের মত বন্ধ ছিল। এতে ট্রেন যাত্রীরা পড়েন চরম ভোগান্তিতে। অন্যদিকে টানা ১০ দিন বন্ধ থাকার পর চালু হয় মোবাইল ইন্টারনেট। ২৮ জুলাই বেলা ৩টার দিকে গ্রাহকরা তাদের মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারছেন। তবে ফেসবুক ও হোয়াটসআ্যাপ বন্ধই ছিল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো না চলায় মানুষের মধ্যে একধরনের অস্বস্থি বিরাজ করছিল।
অপরদিকে ১৮ জুলাই চুয়াডাঙ্গা কাটপট্টির মধ্যে নাশকতার অভিযোগ এনে করা মামলায় পৌর বিএনপির সভাপতি সিরাজুল ইসলাম মনিসহ ৪ জনকে এদিন ১ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়। এ মামলায় ১২ জনের নাম উল্লেখসহ ৪০/৫০ জনকে আসামী করা হয়। ঘটনার দিন ১৮ জুলাই ইকবাল হোসেন ও ২০ জুলাই সিরাজুল ইসলাম মনিসহ ৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এতে বিরোধী দলীয় নেতা কর্মিদের মধ্যে আতংক সৃষ্টি হয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার সাবেক মূখ্য সংগঠক সজীবুল ইসলাম বলেন, ২৮ জুলাই আমাদের আন্দোলনের তেমন কোন কর্মসুচি ছিল না। সেই কারনে আমাদের ছেলেরা মাঠে নামেনি। তবে কোটা বাতিলের দাবীর পক্ষে ১৬ জুলাই চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সামনে শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করে। সেখানে উল্টোপথে আসা জানিফের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের একটি মিছিল আসে এবং তিন গাড়ি পুলিশ এসে মানববন্ধন কারীদেরকে হটিয়ে দেয়। ১৬ তারিখে আন্দোলনে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীদের প্রত্যেকের বাসায় পুলিশ ফোন করে ও অনেকের বাসায় যেয়ে ভয় দেখিয়ে আসে। নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীদেরকে ছাত্রলীগের নেতারা তুলে আনার জন্য বাড়িতে লোক পাঠায়।
জুলাই আন্দোলন কোনও রাজনৈতিক আন্দোলন নয়। এটা অধিকার আদায়ে সকল দল মতের ঊর্ধ্বে সবার আন্দোলন। কিন্তু স্বৈরাচার হাসিনা যেভাবে পাখির মতো হত্যাকাণ্ড চালালো। স্বৈরাচারের পতন হয়েছে। আমরা চাই এই কলঙ্কিত ইতিহাস থেকে আমরা সকলে শিক্ষা গ্রহণ করি। কেউ যদি আবার স্বৈরাচারী মনোভাব প্রদর্শন করে তবে আজ অথবা কাল তার পরিস্থিতিও এমন হবে।