স্টাফ রিপোর্টার
‘জুলাই পুনর্জাগরণে’ সমাজ গঠনে শপথ পাঠ কর্মসূচির অংশ হিসেবে চুয়াডাঙ্গা জেলার ৪ উপজেলায় ও মেহেরপুরে আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। জেলা সমাজসেবা এবং মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের আয়োজনে আজ শনিবার বেলা ১১ টায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে এ কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশের ৬৩ টি জেলার সাথে ভার্চুয়ালি সংযোগ স্থাপন করেই এই আয়োজন করা হয়। শপথ পাঠ অনুষ্ঠানটির কার্যক্রম ঢাকা থেকে পরিচালনা করা হয়। এ সময় জুলাই শহীদদের স্মরণে ১ মিনিট নিরবতা পালন এবং জুলাই শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় দোয়া করা হয়। সভায় উপস্থিত সকলে দাঁড়িয়ে জুলাই পুনর্জাগরণের শপথ বাক্য পাঠ করেন। আলোচনা সভার শেষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের ও আয়োজন করা হয়।
শপথ পাঠ অনুষ্ঠান শেষে চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আহমেদ মাহাবুব উল ইসলাম এর সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন চুয়াডাঙ্গা জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক সিদ্দিকা সোহেলী রশীদ, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপপরিচালক মাকসুরা জান্নাত, চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ সিদ্দিকুর রহমান, জেলা জাসাসের সাধারণ সম্পাদক সেলিমুল হাবিব, পৌর বিএনপি সভাপতি সিরাজুল ইসলাম মনি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা শাখার সাবেক আহবায়ক আসলাম হোসেন অর্ক, সাবেক মুখপাত্র তামান্না, ছাত্রনেতা সজিবুর রহমান, মাহফুজুর রহমান প্রমুখ। আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, মানবিকতা, সহমর্মিতা, দায়িত্ববোধ ও নাগরিক সচেতনতা জাগিয়ে তুলতে ‘জুলাই পুনর্জাগরণ’ উদ্যোগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই আয়োজন জেলার জনগণের মাঝে উদ্দীপনা ও সচেতনতামূলক বার্তা ছড়িয়ে দিতে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আহমেদ মাহাবুব উল ইসলাম বলেন, জুলাই আন্দোলনের ছেলেদের পাশাপাশি নারী যোদ্ধাগনের ভূমিকা ছিলো আমরা জানি। তখন মোবাইল নেটওয়ার্ক না থাকায় যারা জুলাই আন্দোলনে তৃণমূল পর্যায়ে অংশগ্রহণ করেছিল তাদের যে সংগ্রাম তা এখনো অজানা। আমরা চাই এ ধরনের আয়োজন শুধু জেলা পর্যায়ে না উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে জুলাইয়ের চেতনা সম্প্রসারিত করার মাধ্যমে আমাদের জুলাইয়ের প্রেরণা, বৈষম্যহীন সমাজ বাস্তবায়ন করতে পারবো। জুলাই শুধুই ক্যালেন্ডারের একটি মাস নয় জুলাই একটি প্রেরণার নাম। ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ গঠনের একটি প্রেরণা। কিছু সংখ্যক মানুষের হাতে দায়িত্ব না দিয়ে সকলকে দেশ পুনর্গঠনে এগিয়ে আসতে হবে।
এ সময় সভায় উপস্থিত সকলে দাড়িয়ে শপথবাক্য পাঠ করেন। শপথ পাঠ নিন্মরুপ–
১. আমি শুদ্ধচিত্তে শপথ করছি, আমি আজ একটি মহান দায়িত্ব নিতে যাচ্ছি। যা শুধু একটি রাষ্ট্রীয় কর্তব্য নয় বরং একটি মানবিক ও নৈতিক আহবান। একটি যত্নশীল নতুন দেশ গড়ার অঙ্গীকার।
২. অঙ্গীকার করছি, দেশের সকলকে এক সাথে নিয়ে দারিদ্র্যমুক্ত, সহিংসতা মুক্ত, মানবিক ও সাম্যের দেশ গড়বো। কারণ সরকার মানে আমি আর রাষ্ট্র মানে আমরা।
৩. দেশের সকল নাগরিককে সামাজিক সুরক্ষার চাদরে ঢেকে দিতে আমরা বদ্ধপরিকর। সেবার অভিগম্যতা নিশ্চিত করা সবার দায়িত্ব।
৪. অঙ্গীকার করছি, নারী ও শিশু নির্যাতন দূর করে শহরে-গ্রামে মানবাধিকার ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করবো। ঘরে, রাস্তায়, কর্মস্থলে, বিদ্যাপিঠে, সাইবার স্পেইসে গড়ে তুলবো নারী ও শিশুর নিরাপদ বিচরণ। পিছিয়ে পড়া সকলকে তরুণ সমাজকে চালিকা শক্তি করে সম্প্রীতির নতুন অধ্যায় সৃষ্টি করবো।
৫. আজ অঙ্গীকার করছি, সরকার, সমাজ, সেবা সংগঠনসমূহ প্রাপ্ত গ্রাম থেকে শুরু করে নগরের পথবাসী, সুশীল সমাজ সংগঠন থেকে তরুণ কৃষক, বানভাসী শিশু থেকে পাহাড়ের নারী সকলে যেন রাষ্ট্র। আজ শপথ করছি অন্যায়, দুর্নীতি, বৈষম্য, নারী-শিশু নির্যাতন আর দারিদ্র্যের অপমান থেকে মুক্ত করবো আমাদের এই মাতৃভূমিকে।
আজ থেকে এই আলোর যাত্রায় আমরা পরিবর্তনের অংশ হলাম।
আলমডাঙ্গা অফিস জানায়, জুলাই পুনর্জাগরণে সমাজ গঠনে শপথ গ্রহণ ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল শনিবার ২৬ জুলাই সকাল সাড়ে নয়টায় আলমডাঙ্গা উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে এই অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে এবং উপজেলা সমাজ সেবা অধিদপ্তর ও জেলা মহিলা অধিদপ্তরের সহযোগিতায় অনুষ্ঠানটি দু’টি পর্বে দেখানো হয়। এরমধ্যে প্রথম পর্বে ভিডিও কনফারেন্সে জুলাই পুনর্জাগরণে সমাজগঠনে লাখো কন্ঠে শপথ পাঠের কেন্দ্রীয় অনুষ্ঠানে সংযুক্ত থাকা এবং দ্বিতীয় পর্বে সমাজগঠনে আলোচনা সভা ও ঙঙংমনোজ্ঞ সংগীত অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন। তিনি তার বক্তব্যে বলেন নারীদের ক্ষমতায়নে সরকার অনেক উদ্যোগ গ্রহন করেছে। নারীর স্বাধীনতা সংসারে থাকতে হবে। সংসারে বৈষম্য থাকতে পারে না। এতে করে সংসারে সুখ শান্তি ফিরে আসবে। বাল্য বিবাহ চলবে না, বাল্য বিবাহের জন্য মাতারাই দায়ী। বয়স সন্ধি অবস্থা ছেলেমেয়েরা ভুল সিদ্ধান্ত নিতে পারে, এর জন্য পিতামাতাকে সজাগ থাকার অনুরোধ করেন। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী অফিসার আশীষ কুমার বসু। তিনি বলেন, জুলাই শহীদদের প্রতি একমিনিট নীরবতা পালনের মধ্যে দিয়ে উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, নারী উন্নয়নে দেশ সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে । সংসারে মা,বোন কঠোর পরিশ্রম করে সংসার সুখ,শান্তি বয়ে আনে, তেমনি নারীর সঠিক সিদ্ধান্ত ও তার ক্ষমতায়নে দেশ এগিয়ে যাবে। জুলাই মাসকে সমাজ গঠনের পুনর্জাগরণ মাস হিসেবে বিবেচনা করে আমরা সকলে মিলে নৈতিকতা, সততা, নারী অধিকার ও মানবিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠায় কাজ করবো।বিশেষ অতিথি ছিলেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তা ডাক্তার শারমিন আক্তার, ওসি তদন্ত আজগর আলী, প্রাণী সম্পদ সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ডাক্তার এ এন এম মুস্তাকিম মুকুট, মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার জিয়াউল হক, প্রোগ্রাম অফিসার হিরোজ কবির। অন্যান্যদের মধ্যে আরও বক্তব্য রাখেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আবুল কাশেম, বীর মুক্তিযোদ্ধা ওয়াজেদ আলী, বীর মুক্তিযোদ্ধা নবাব আলী, বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিউদ্দিন, উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের ফিল সুপারভাইজার শামীমা নাসরিন, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনেরচুয়াডাঙ্গা জেলার সাবেক মুখ্য সংগঠক কামরুল হাসান কাজল, আলমডাঙ্গা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সদস্য সচিব আরাফাত রহমান, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক আহ্বায় রাকিব মাহমুদ, নারী উদ্যোক্তা হেলেন আক্তার কামনা, নারী উদ্যোক্তা সুরভী শরিফা, নাফিছা,প্রিয়া, রুমানা, সারিকা আমিন প্রমুখ। আলোচনা শেষে শপথ বাক্য পাঠ করান ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী অফিসার আশীষ কুমার বসু।
জীবননগর অফিস জানায়, জীবননগরে ভার্চুয়ালিতে জুলাই মাসে “পূর্ণ জাগরণের সমাজ গঠনে লাখো কন্ঠে শপথ পাঠ অনুষ্ঠান ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল শনিবার সকল ১০ ঘটিকার দিকে উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে শপথ পাঠ ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে জাতীয় অনুষ্ঠানে সামাজিক পরিবেশ মানুষকে একত্রিত করে একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যে উৎসাহিত করা হয়। জুলাই আন্দোলনের প্রেরণা যেটি সমাজের উন্নতির জন্য এবং একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যত করা লক্ষ্যে অনুষ্ঠিত হয়। জুলাই আন্দোলনের অনুপ্রেরণা কে কাজে লাগিয়ে সকলে মিলে একটু নির্দিষ্ট আদর্শের প্রতি নিজিদের উৎসর্গ করার অঙ্গীকার রাখে।
জুলাই পূর্ণজাগরণে সমাজ গঠনের লাখো কন্ঠে শপথের বিষয়বস্তু ছিল মানবিক ও নৈতিকতার সাথে একটি যত্নশীল নতুন দেশ গড়া, দেশের সকলকে এক সাথে নিয়ে দারিদ্র্যমুক্ত, সহিংসতা মুক্ত, মানবিক ও সাম্যের দেশ গড়া,দেশের সকল নাগরিককে সামাজিক সুরক্ষার চাদরে ঢেকে দিতে বদ্ধপরিকর সেই সাথে সেবার অভিগম্যতা নিশ্চিত করা, নারী ও শিশু নির্যাতন দূর করে শহরে-গ্রামে মানবাধিকার ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা,ঘরে, রাস্তায়, কর্মস্থলে, বিদ্যাপিঠে, সাইবার স্পেইসে নারী ও শিশুর নিরাপদ বিচরণ গড়ে তোলা,পিছিয়ে পড়া সকলকে তরুণ সমাজকে চালিকা শক্তি সম্প্রীতির নতুন অধ্যায় সৃষ্টি করা, দুর্নীতি, বৈষম্য, নারী-শিশু নির্যাতন আর দারিদ্র্যের অপমান থেকে মুক্ত করে সুন্দর রাষ্ট্র গঠন করা।
উপজেলা সমাজসেবার আয়োজনে আলোচনা সভায় সমাজসেবা কর্মকর্তা জাকির উদ্দিন মোড়লের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল আমীন। এছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা তাজুল ইসলাম , প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ সাইফুল ইসলাম, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মকবুল হাসান, মাধ্যমিক একাডেমিক সুপারভাইজার সৈয়দ আব্দুল জব্বার, পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা জামিল আক্তার, সহকারি সমাজসেবা কর্মকর্তা গিয়াস উদ্দিন, আইসিটি কর্মকর্তা মাহাবুবুর রহমান, প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ইসমাইল হোসেন, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সভাপতি সোহেল পারভেজ সহ আমন্ত্রিত অতিথি ও সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। আলোচনা সভা শেষে সমাজসেবা অফিসের পক্ষ হতে নিধি কুন্ডু গ্রামের ইমরান খানের কন্যা প্রতিবন্ধী আনিশা(৬) কে হুইল চেয়ার প্রদান করা সহ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পালন করা হয়।
মেহেরপুর অফিস জানায়, মেহেরপুরের গাংনীতে ‘জুলাই পূর্ণজাগরনে সমাজগঠনে শপথ’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার সকালে গাংনী উপজেলা পরিষদ সভাকক্ষে এ আয়োজন করা হয়। উপজেলা নির্বাহী অফিসার আনোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাদ্দাম হোসেন, গাংনী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বানী ইসরাইল, সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার শামসুল আলম সোনা, সমাজসেবা কর্মকর্তা আরশেদ আলী, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইমরান হোসেন, প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা মোত্তালিব আলী, কাজীপুর ইউপি চেয়ারম্যান আলম হুসাইন, স্থানীয় সাংবাদিক, শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
অনুষ্ঠানে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশীদ ‘লাখো কন্ঠে শপথ’ কর্মসূচিতে ভার্চুয়ালি শপথ বাক্য পাঠ করান। এতে অংশগ্রহণকারীরা একটি মানবিক, নৈতিক, যত্নশীল, সহিংসতামুক্ত, দারিদ্রমুক্ত, সাম্য ও সম্প্রীতিপূর্ণ সমাজ গড়ার অঙ্গীকার কারেন। শেষে এক সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মাধ্যমে ‘জুলাই পূর্ণজাগরণ’ কর্মসূচি শেষ হয়।