১৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ, ১০ দিন পেরিয়ে গেলেও তদন্তের জন্য কেরুতে আসেনি কোন কর্মকর্তা

দর্শনা অফিস
দেশের সর্ববৃহৎ চিনি শিল্প কমপ্লেক্স ও জেলার একমাত্র রাষ্ট্রায়াত্ব শিল্প প্রতিষ্ঠান দর্শনার কেরু এ্যান্ড কোম্পানী। সদ্য বিদায়ী অর্থ বছরে তার প্রায় শতাব্দীর ইতিহাসে সর্বোচ্চ ১১৫-২০ কোটি টাকার মুনাফা করতে চললেও সাবেক এমপি আলী আজগার টগরের নিয়োগকৃত কর্মচারীদের ওয়ার হাউজ থেকে বদলী করায় ক্ষিপ্ত উক্ত সিন্ডিকেটের অর্থায়নে প্রকাশিত কেরুর বিভিন্ন বিভাগের দূর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে চুয়াডাঙ্গা থেকে একটি ও ঢাকা থেকে প্রকাশিত পত্রিকায় হুবহু একই সংবাদ প্রকাশ হয়।
এ সংবাদের সত্যতা যাচাইয়ে জন্য সরকারের শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে গত ৯ জুলাই গঠন করা হয় উচ্চপদস্থ ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি। কমিটি গঠনের ১৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়া হলেও এখনো পর্যন্ত তদন্তের জন্য কেরুতে আসেনি কোন কর্মকর্তা।
কেরুজ ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাব্বিক হাসান জানিয়েছেন, তদন্ত কমিটি এখনো পর্যন্ত কেরুতে তদন্তের জন্য আসেনি। আশা করা যাচ্ছে আগামী ২/১ দিনের মধ্যে আসতে পারেন।
তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনোয়ার হোসেন চৌধুরীকে। সদস্য সচিব বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের পরিচালক (বাণিজ্যিক) (উপসচিব) আজহারুল ইসলাম, সদস্য হলেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মনোয়ার হাসান খান।
জানা গেছে, ২৯ জুন বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের (অতিরিক্ত দায়িত্বে) চেয়ারম্যান রশিদুল হাসান স্বাক্ষরিত পত্রে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের শিল্প মন্ত্রণালয়ের নিকট কেরুজ চিনিকলের বিভিন্ন বিভাগের অনিয়মের প্রকাশিত সংবাদের তদন্তের জন্য কমিটি গঠনের সুপারিশ করেন। ওই পত্রের প্রেক্ষিতে গত ৯ জুলাই শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারি সচিব সিদ্ধার্থ ভৌমিক স্বাক্ষরিত পত্রে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটিকে আগামী ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে শিল্প মন্ত্রণালয় বরাবর লিখিত প্রতিবেদন দাখিলের জন্যও বলা হয়েছে।
সূত্রে আরও জানা গেছে, তদন্ত কমিটিকে কেরুজ দেশী মদ বোতলজাতকরণের গৃহীত উদ্যোগটি অর্থনৈতিকভাবে লাভজন কি-না তা যাচাই করা, উদ্যোগটি যথাযথ আইন বিধি মেনে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের অনুমোদন সাপেক্ষে হয়েছে কি-না, বোতলজাতকরণের ফলে সরকার আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবে কি-না এবং বেসরকারিখাত তা থেকে লাভবান হবে কি-না তা খতিয়ে দেখা। দেশীয় মদ বাজারজাতকরণের লক্ষ্যে প্লস্টিক বোতল ক্রয় কোন পদ্ধতিতে করা হয়েছে তা খতিয়ে দেখা, সে পদ্ধতি প্রয়োগের ক্ষেত্রে ক্রয় বিধিমালা অনুসরণ করা হয়েছে কি-না তা যাচাই করা। দেশী মদ ও ফরেন লিকারের উৎপাদন ও বিক্রয় হ্রাস পেয়েছে কিনা এবং পেয়ে থাকলে তার কারণ ও ফলে সরকার লোকসানের সম্মুখীন হয়েছে কিনা। কেরুজ বন্ডেড ওয়ার হাউজে দায়িত্বে থাকা পূর্বের ইনচার্জদের কাছ থেকে অর্থ দাবি ও সে অর্থ দিতে না পারায় তাদের বদলি করা হয়েছে এই অভিযোগের সত্যতা যাচাই করা, বর্তমানে ওয়ার হাউজে দায়িত্ব থাকা ইনচার্জদের অবৈধ সুবিধার বিনিময়ে পদায়ন করা হয়েছে কিনা খতিয়ে দেখা। বিগত বছরগুলোর তুলনায় আখ চাষ হ্রাস পেয়েছে কিনা এবং কৃষকরা আখচাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে কিনা তা যাচাই করে ১৫ দিনের মধ্যে শিল্প মন্ত্রনালয়ে লিখিত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ১৯৩৮ সালে প্রতিষ্ঠিত এই কোম্পানী প্রায় শত বছরের ইতিহাস ভেঙ্গে ড্রামের পরিবর্তে গত ২২ মে প্রথমবারের মতো দেশী মদ নামে খ্যাত কান্ট্রি স্পিরিট বোতলজাত করে বিপনন শুরু করে। এতে করে এতো দিনে অবৈধ সুবিধাভোগীরা যারা প্রতি ড্রামে দ্বিগুন/তিনগুন পানি মিশিয়ে বিক্রি করে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছে তাদের অবৈধ আয়ের উৎসে টান লাগায় এ প্রক্রিয়া বন্ধ করার পায়তারা করছে। পণ্যাগারগুলোর এই অবৈধ অর্থেই চলে কেরু কোম্পানীর রাজকীয় সিবিএ নির্বাচন ও কতিপয় কর্মকর্তা/কর্মচারীর শাহী জীবনযাপন। বর্তমান উদ্যোগ সফল হলে কিছুটা হলেও পণ্যাগারের পোস্টিং নিয়ে কামড়াকামড়ি কমবে বলে সংশ্লিস্টরা মনে করছে।
রাসায়নিক অস্ত্র কনভেনশন এর সুপারিশক্রমে শিল্প উপদেষ্টাসহ সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনায় মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অনুমোদনক্রমে বোটলিং কার্যক্রম চালু হলেও অভিযোগ রয়েছে, কয়েক মাস আগে বর্তমান প্রশাসন কান্ট্রি স্পিরিট প্লাস্টিক বোতলে ভরে বিক্রির উদ্যোগ নিলে পরিবেশ অধিদপ্তরকে ব্যবহার করে ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর এমপি আলী আজগার টগরের নিয়োগকৃত কতিপয় এজেন্ট সে উদ্যোগ স্থগিত করে দেয়। সিদ্ধান্তে অটল থাকা প্রশাসন সেসব বাধা মাড়িয়ে গত ২২ মে পার্বতীপুর ওয়ার হাউজে প্রথম চালান পরে পর্যায়ক্রমে সকল পণ্যাগারে পূর্বের ড্রাম পদ্ধতির পরিবর্তে বোতলজাত করে সরবরাহ শুরু হয়। এছাড়া ফরেন লিকার বাজারে চাহিদার প্রেক্ষিতে বিক্রয়ের তারতম্য হলেও মুনাফা বেশী হয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে- আওয়ামী রাজনীতির সাথে সরাসরি জড়িত কোটি কোটি টাকার মালিক কয়েকজন এজেন্ট এবং কর্মচারীকে সম্প্রতি সময়ে করপোরেশন কেরু থেকে অন্যত্র বদলী করলে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে বর্তমান প্রশাসনের বিরুদ্ধে বিশাল অঙ্কের টাকা বিনিয়োগ করে চুয়াডাঙ্গা থেকে ও ঢাকা থেকে প্রকাশিত পত্রিকায় একই ড্রাফটে লেখা ভিত্তিহীন অভিযোগ এনে প্রকাশ করে যাচ্ছে। কেরুতে বিদায়ী অর্থ বছরে ডিস্টিলারীতে রিকোভারী বৃদ্ধি, ভিনেগারের বিক্রয় বৃদ্ধি, চিনির রিকোভারী বৃদ্ধি, জৈব সারের উৎপাদন বৃদ্ধি, আখের রোপন বৃদ্ধি পেলেও আওয়ামী সিন্ডিকেটটি জেলার একমাত্র রাষ্ট্রায়াত্ব শিল্প কমপ্লেক্সটির ভাবমূর্তি নস্ট করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে, এ বিষয়ে যথাযথ তদন্ত হলে প্রকৃত সত্য বেরিয়ে আসবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *