স্টাফ রিপোর্টার
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহিদদের স্মরণে চুয়াডাঙ্গায় আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল বুধবার বেলা ১২ টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মিজানুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক সিদ্দিকুর রহমান, জেলা জামায়াতের আমীর অ্যাড. রুহুল আমিন, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি শামিম রেজা ডালিম, চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক বিপুল আশরাফ, চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের সহযোগী অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন।
প্রধান অতিথি জেলা প্রশাসক জহিরুল ইসলাম বলেন, যারা আন্দোলনে সরাসরি অংশগ্রহন করেছেন তাদের ফিলিংস, যারা আন্দোলনে অংশ নেয়নি তাদের ফিলিংস ভিন্ন হবে এটা স্বাভাবিক। যে সত্যকে যে ফিলিংসকে বুকে ধারন করে, এরকম মৃত্যু নিশ্চিত যেনেও যারা এ রাস্তায় বের হয়ে এ আন্দোলনকে এই পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিলো সত্যিই তারা বীর বীরপুরুষ। এতে অস্বীকার করার উপায় নেই। আমরা যারা এখনও সুস্থ আছি, ভালো আছি, বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান করছি। তাদের এই স্বপ্ন পূরনে আমরা কখনও কার্পন না করি এবং আমরা বিপুল অনুপ্রেরণায় তাদের স্বপ্ন বাস্তবায়নে অগ্রগামি হয়। আমি এ প্রত্যাশাই রাখি। সবাই শহিদদের জন্য দোয়া করবেন। আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করবেন। তাদের স্বপ্ন সুন্দর বাংলাদেশ যেন প্রতিষ্ঠিত হয়।
জেলা জামায়াতের আমীর অ্যাড. রুহুল আমিন বলেন, যে দেশে গুণীজনের কদর হয় না, সেদেশে আর গুণীজন তৈরী হবে না। যে দেশে আন্দোলনকারীর কদর হবে না, সেদেশে আন্দোলন আর ভবিষ্যতে হবে না। সুতরাং ভবিষ্যতের দারটা আমরা খুলে রাখতে চাই। আমরা সবাই সবাই জায়গার থেকে মর্যদা দিতে চাই, পেতে চাই। চুয়াডাঙ্গায় জুলাই শুরু হওয়ার আগে ২০১৩ সালের ১০ সেপ্টেম্বর ফ্যাসিষ্ট সরকারের পেটোয়া বাহিনীদারা দর্শনায় একটি ছাত্র শহীদ রফিকুল ইসলামকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করার মধ্যে দিয়ে এ কার্যক্রম শুরু হয়েছিলো। এখন আমরা দুইজনকে পেয়েছি চুয়াডাঙ্গা জেলায়। যারা ঢাকাতে শাহাদত বরণ করেছিলো। বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামী প্রত্যেকটি শহীদের পরিবারে যাওয়ার চেষ্টা করেছে। ক্ষুদ্র প্রয়াস নিয়ে বাংলাদেশে যতগুলো শহীদ হয়েছে সবার পরিবারে ২ লাখ টাকা দিয়ে এ কার্যক্রম শুরু করেছিলো। যারা আহত হয়েছিলো তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে।
এছাড়াও আন্দোলনের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার বর্ণনা করে বক্তব্য দেন জুলাই যোদ্ধা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক আহ্বায়ক আসলাম হোসেন অর্ক, সাবেক সদস্য সচিব সাফ্ফাতুল ইসলাম, সিরাজুম মুনিরা, খুশবু, মাহফুজ হোসেন, সলিমিন হোসেন সোহাগ, শহীদ মাসুদ রানা মুকুলের স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস সাফা, শহীদ শাহারিয়ার শুভর বাবা আবু সাইদ প্রমুখ।
সিরাজুম মুনিরা বলেন, নারী শক্তির জাগরণে আমরা কিন্তু সেদিন একটি বড় মেয়েদের দল নিয়ে সন্মুখ সারিতে ফ্যাসিষ্ট দোষদের বিরুদ্ধে দাড়াতে সক্ষম হয়েছিলাম। আমাদেরকে কোর্ট চত্বর থেকে ছত্রভঙ্গ করা হয়। আমাদের প্রত্যেকের মধ্যে একটি মানবিক গুনাবলীর বিকাশ হওয়া উচিত। সেইদিন আমরা সেই সহমর্মি হাতগুলো পায়নি। যার কারণে আমরা মেয়েরা আন্দোলনরত অবস্থায় সন্ত্রাসী বাহিনীর ক্ষোভের মুখে পড়ে যায়। পরে তারা খুব বাজেভাবে মেয়েদের শরীরে আঘাত হানে। প্রথম আঘাত হানে খুশবুর উপর। সবার কাছে মানবিক আবেদন, আপনারা যে যেখানে আছেন ভয়েসটা বেইস করবেন ন্যায়ের পক্ষে।
আলোচনা সভায় বক্তারা আরো বলেন, “জুলাই শহিদ দিবস শুধু একটি শোক নয়, এটি হচ্ছে গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার এবং সাম্যের জন্য শহিদদের আত্মত্যাগ স্মরণ করার দিন। এই দিবস নতুন প্রজন্মকে দেশের জন্য আত্মত্যাগের মূল্য ও মানবিক রাষ্ট্র নির্মাণের অঙ্গীকার শেখায়।” এ সময় কনফারেন্স রুমে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
শহীদের পরিবারের সদস্যরা বলেন, আমার স্বামী টাকা পাওয়ার জন্য জীবন দেয়নি। দেশের উন্নয়নের জন্য শহিদ হয়েছে। তবে আমরা ১ বছরেও এর মর্যাদা সন্মান পায়নি। কবরের নামফলক পর্যন্ত স্থাপন করা হয়নি।
আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন- চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার এম সাইফুল্লাহ, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মাসুদুর রহমান সরকার, জেলা প্রাণী সম্পদ অফিসার শাহাবুদ্দিন আহমেদ, জেলা মৎস্য অফিসার আবুল কালাম আজাদ, জেলা তথ্য অফিসার শিল্পী মল্ডল, আমার বাংলাদেশ পার্টির আহবায়ক আলমগীর হোসেনসহ জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা, শিক্ষক, সাংবাদিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। সভা শেষে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের শহিদদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। মোনাজাত পরিচালনা করেন মুফতি মাওলানা রুহুল আমিন।
আলমডাঙ্গা অফিস জানিয়েছে, গতকাল বেলা বারোটার দিকে সরকারি কলেজ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ডক্টর মফিজুর রহমান। সরকারি কলেজের সহকারী অধ্যাপক ডক্টর মোহাম্মদ মাহবুব আলমের পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন সহকারী অধ্যাপক আব্দুল মোনয়েম, সহকারি অধ্যাপক মহিতুর রহমান, প্রভাষক জামাল উদ্দিন, প্রভাষক আব্দুল মালেক, প্রভাষক হাসিবুল হক, প্রভাষক শামীমা নাসরিন, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষে বক্তব্য রাখেন কামরুল হাসান কাজল, রাকিব মাহমুদ, ছাত্র শিবিরের পক্ষে বক্তব্য রাখেন সাইফুল ইসলাম, আখতারুজ্জামান প্রমুখ। আলোচনা সভা শেষে জুলাই আন্দোলনের সকল শহীদের রুহের মাগফিরাত কামনায় দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। পরে কলেজ চত্বরে জুলাই উদযাপন উপলক্ষে ডকুমেন্টারি ও দেওয়াল চিত্র প্রদর্শন করা হয়।
এদিকে আলমডাঙ্গা উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে জুলাই শহীদ দিবস ২০২৫ উপলক্ষে দোয়া ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল বিকেল তিনটার দিকে উপজেলা পরিষদের সভা কক্ষে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ মেহেদী ইসলাম। তিনি তার বক্তব্যে বলেন বৈষম্যের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে গিয়ে যারা জীবন দিয়েছেন, তারা জাতির গর্ব। শহীদদের আত্মত্যাগ নতুন প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে। আমরা চাই এই আত্মত্যাগ যেন বৃথা না যায়। সমাজে ন্যায্যতা, সমতা এবং মর্যাদার সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়েই শহীদদের প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা জানানো সম্ভব। উপজেলা ইন্সট্রাক্টর জামাল হোসেনের উপস্থাপনায় বক্তব্য রাখেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আশীষ কুমার বসু, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা শারমিন আক্তার, উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাক্তার মাহমুদুল হক, উপজেলা প্রকৌশলী তাওহীদ আহমেদ, (ওসি তদন্ত) আজগার আলী, মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার জিয়াউল হক, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ আলাউদ্দিন, সরকারি কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মোঃ আব্দুস সামাদ, যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা গোলাম আওয়াল, আইসিটি কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান, সরকারি পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ইলিয়াস হোসেন, সরকারি কলেজের সহকারি অধ্যাপক ডঃ মাহবুব আলম, বীর মুক্তিযোদ্ধা নবাব আলী, উপজেলা জামায়াতের আমির প্রভাষক শফিউল আলম বকুল, সেক্রেটারি মামুন রেজা, আলমডাঙ্গা প্রেসক্লাবের আহবায়ক খন্দকার শাহ আলম মন্টু, উপজেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক শাওন, জুলাই যোদ্ধা শহীদ সৈয়দ মাসুদ রানা সহধর্মিনী সৈয়দা জান্নাতুল ফেরদৌস, জুলাই বৈষম্য ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি আরাফাত রহমান, মাহফুজ হোসেন, সহিফুজ্জামান, কামরুল হাসান কাজল, সলিহিন হোসেন সোহান, আমির হামজা প্রমুখ। আলোচনা শেষে জুলাই আন্দোলনের সকল শহীদের রুহের মাগফিরাত কামনায় দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। দোয়া মাহফিল পরিচালনা করেন উপজেলা জামে মসজিদের ইমাম হাফেজ মাওলানা মাসুদ কামাল।
দামুড়হুদা অফিস জানিয়েছে, গতকাল বুধবার বেলা ১১টার দিকে দামুড়হুদা উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে দিবসটি উপলক্ষ্যে এ আয়োজন করা হয়। দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তিথি মিত্র এর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন দামুড়হুদা উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি কে এইচ তাসফিকুর রহমান, দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তা ডা হেলেনা আক্তার নিপা, উপজেলা সমাজসেবা অফিসার তোফাজ্জেল হোসেন, দামুড়হুদা উপজেলা বিএনপি সভাপতি মনিরুজ্জামান মনির, উপজেলা জামায়াত ইসলামীর আমির নায়েব আলী, দর্শনা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান সুমন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার সাবেক যুগ্ন আহ্বায়ক তানভীর হাসান অনিক, দামুড়হুদা উপজেলা আহ্বায়ক সোহান। দামুড়হুদা উপজেলা সমবায় অফিসার হারুন অর রশিদের সঞ্চালনায় এসময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার আল সাবাহ, উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা নিলিমা আক্তার হ্যাপী, উপজেলা মহিলা বিষয়ক কমকর্তা হোসনে জাহান ববি, উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিল্লাল হোসেন, উপজেলা বিএনপি যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক মন্টু মিয়া, উপজেলা জামায়াত ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারী আবেদ উদ দৌলা টিটন সহ সরকারি বিভিন্ন দফতর প্রধান, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধি প্রমুখ। দোয়া অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন দামুড়হুদা উপজেলা মডেল মসজিদের ইমাম মুফতি মামুনুর রশীদ।
জীবননগর অফিস জানিয়েছে, ‘জুলাই শহীদ দিবস’ উপলক্ষে সারাদেশে জাতীয় শোক দিবস পালন হচ্ছে। এ উপলক্ষে গতকাল বুধবার বেলা ১১টার দিকে জীবননগর উপজেলা পরিষদের সভাকক্ষে ১৬ জুলাই রাষ্ট্রীয় শোক পালনের জন্য জুলাই শহীদদের স্মরণে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয় । সভায় সভাপতিত্ব করেন জীবননগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আল আমীন। অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জীবননগর থানার পরিদর্শক (অপারেশন) মো. আতিকুর রহমান, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন, জীবননগর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আনোয়ার হোসেন খান খোকন, সাধারণ সম্পাদক শাহাজান আলী, সিনিয়র সহসভাপতি আবুল কালাম আজাদ, জীবননগর প্রেসক্লাবের আহ্বায়ক মো. রিপন হোসেন, জীবননগর সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল মাহাতাব মানিক প্রমুখ।
এদিকে জীবননগরের বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে শহীদদের আত্মার শান্তি কামনায় বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হয়। আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, জুলাই আন্দোলন যে উদ্দেশ্যে হয়েছিল আমার যেন সেই উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে পারি। সমাজ এবং দেশ থেকে যেন বৈষম্য দূর করতে পারি। উল্লেখ্য, গত বছরের ১৬ জুলাই রংপুরে কোটাবিরোধী আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদ শহীদ হন। গণঅভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তিতে সরকার দিনটিকে ‘জুলাই শহীদ দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করেছে।