আত্মহত্যার পাশাপাশি তালাক নিয়ে জনসচেতনতামূলক কাজ করতে হবে- জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম
স্টাফ রির্পোটার
চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম বলেছেন, অনেক এনজিও আছে আপনারা বাল্য বিবাহ নিয়ে কাজ করেন, অনেক এনজিও আছে আত্মহত্যা নিয়ে কাজ করেন। মূল কথা বিভিন্ন সচেতনতা নিয়ে কাজ করেন। আরো একটি ইস্যু রয়েছে, সেটা আপনাদের নজরে পড়েছে কিনা। সেটা হলো তালাক। তালাক নিয়ে আপনাদের কাজ করা দরকার। আপনি জানেন কিনা, বিগত ১০ বছরে চুয়াডাঙ্গার ডাটা কালেকশন করে দেখেছি যে, প্রতি বছরে ১০০টি যদি বিবাহ হয় এর মধ্যে ৭০টি তালাক হয়ে যায়। গতকাল সোমবার সকাল ১০টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এনজিও বিষয়ক সমন্বয় সভায় তিনি উপরোক্ত মন্তব্য করেন। তিনি আরো বলেন, তার মানে ৫/৬ হাজার বিয়ে হলে তার ৭০ ভাগ তালাক হয়।
তালাকের সংখ্যাটি হিউজ। সেই হিসাবে কিন্তু এখানেও অনেকে আছেন ভুক্তভোগী। আপনাদের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে থাকবে। আমি মনে করি এটা নিয়ে কাজ করা যায়।
আপনাদের উদ্ধতন অফিসকে তালাকের বিষয়টি জানাতে পারেন। সচেতনতা মূলক প্রোগ্রামের আওতায় এটা করা যেতে পারে। এখানে দেখা যায় মানুষ ছোট খাটো বিষয়ে সষ্য ক্ষমতা এত কম যে, তালাকের সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয়। যে রকম এই এলাকায় আত্মহত্যার প্রবনতা রয়েছে, সেই রকম তালাকের প্রবনতা রয়েছে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মিজানুর রহমানের সঞ্চালনায় এনজিও বিষয়ক সমন্বয় সভায় বিগত ২২ এপ্রিল অনুষ্ঠিতব্য সভার কার্যবিবরণী পাঠ ও বাস্তবায়নের অগ্রগতি প্রতিবেদন পাঠ করেন সাধারন শাখার সহকারী কমিশনার আশফাকুর রহমান।
স্বাস্থ্যসেবা সংক্রান্ত বিষয়ে জানানো হয়, বিভিন্ন অপারেশন, স্বাস্থ্য ক্যাম্প, ফিজিওথেরাপি সেবা প্রদান ও ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প করার পূর্বে সিভিল সার্জনকে অবহিত করতে হবে। একইসাথে জেলা প্রশাসককে অনুলিপি দিতে হবে। ইতিমধ্যে সেটা বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে বলে জানানো হয়। প্রাথমিক ও বয়স্ক শিক্ষা কার্যক্রমে ছাত্র/ছাত্রীদের বৃত্তি প্রদানসহ জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম বৃদ্ধি করতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সরকারি কারিকুলামের বাইরে অন্য কোন বই না পড়ানোর সিদ্ধান্ত গ্রহীত হয়। এই বিষয়টি বাস্তবায়ন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এছাড়াও আত্নহত্যা প্রতিরোধে জেলার বিভিন্ন নাট্যগোষ্ঠীর সহযোগিতায় সচেতনতামূলক নাটিকা বা পথ নাটিকা আয়োজন করতে হবে। সকল এনজিওকে আত্মহত্যা প্রতিরোধে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে। বিষয়টি বেশ কয়েকটি এনজিও আত্মহত্যা নিয়ে সচেতনতা সভা ও আলোচনা অনুষ্ঠান করেছে বলে জানান। বাল্যবিবাহ নিরোধে সচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। সেই আলোকে উঠান বৈঠকের মাধ্যমে নারী-পুরুষকে সচেতন করা হয়েছে। কোন শিশু যেন নির্যাতনের স্বীকার না হয় সে বিষয়ে সকল এনজিওদের সচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি এর সনদ ব্যতীত ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করা যাবে না। ঋণ আদায়ে মানবিক আচরণ করতে হবে। যাতে আত্মহত্যার প্রবণতা না বাড়ে। উপরের শর্ত মেনে একাধিক এনজিও ঋণ বিতরণ করেছে বলে জানানো হয়। পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম অব্যহত রয়েছে। গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ ৩য় পর্যায় প্রকল্প বাস্তবায়ন সংক্রান্ত কাজ চলমান রয়েছে। বেকার যুবক ও মহিলাদের দক্ষতা উন্নয়নে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠিকে স্বল্প সুদে ঋণদান করা হয়েছে। এনজিও কর্তৃক পরিচালিত কার্যক্রমের উপর সংকলন প্রকাশনা দ্রুত করার তাগিদ দেয়া হয়। ২৭ মে সংকলন প্রকাশনার উপ-কমিটির মিটিং করার নির্দেশ দেয়া হয়।
এনজিও বিষয়ক মাসিক প্রতিবেদন পরবর্তী মাসের ১০ তারিখের মধ্যে দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয়। সেই মোতাবেক ৩৬টি এনজিও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। প্রতিবেদন দাখিল করেনি ২৫টি এনজিও। গত সভায় ৪৬টি এনজিও সভায় উপস্থিত ছিলো ও অনুপস্থিত ছিলো ১৫টি এনজিও। যেসকল এনজিও পরপর ৩ টি মাসিক সভায় অনুপস্থিত থাকবে তাদের বিষয়ে উদ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে জানানো হবে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
সভায় উপস্থিত ছিলেন- পরিবার পরিকল্পনার উপ-পরিচালক দীপক কুমার শাহা, জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মাকসুরা জান্নাত, সমাজসেবা অফিসার সাইদ হাসান, চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সাধারন সম্পাদক বিপুল আশরাফ, ওয়েভের উপ-পরিচালক জহির রায়হান, ব্র্যাকের জেলা ম্যানেজার মানিক ম্যাক্সিমিলিয়ান রুগা, সাংবাদিক আলমগীর হোসেন রনিসহ বিভিন্ন এনজিও কর্মকর্তারা।