৩০ দিন বাড়তি চিনি না খেলে যা হবে

অনলাইন ডেস্ক

অতিরিক্ত চিনি শরীরের জন্য ক্ষতিকর। তবে অনেক সময় অজান্তেই প্রতিদিনের খাবারের সঙ্গে এমন পরিমাণ আলাদা করে ‘যুক্ত চিনি’ (অ্যাডেড সুগার) গ্রহণ করা হয়- যা স্থূলতা, টাইপ–টু ডায়াবেটিস, হৃদরোগসহ নানান জটিলতা তৈরি করে।

যুক্তরাষ্ট্রের যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রিয় রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সংস্থা’র (সিডিসি)- জানিয়েছে, নিয়মিত অতিরিক্ত চিনি খাওয়ার ফলে দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ে।

‘আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন’ও বলছে, নারীদের জন্য দৈনিক সর্বোচ্চ ছয় চা-চামচ এবং পুরুষদের জন্য নয় চা-চামচ চিনি গ্রহণের সীমা অতিক্রম করা উচিত নয়।

তবে বাস্তবে বাজারে বিক্রি হওয়া নানান খাবার ও পানীয়তে ঘোষিত সীমার চেয়ে অনেক বেশি চিনি মিশে থাকে।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক পুষ্টিবিদ ভায়োলেটা মরিস নিজের খাদ্যাভ্যাসে বড় পরিবর্তন এনে টানা ৩০ দিন সম্পূর্ণভাবে যুক্ত-চিনি বাদ দিয়ে দেখেন, শরীরে কেমন প্রভাব পড়ে।

তার অভিজ্ঞতায় উঠে এসেছে পাঁচটি জীবন বদলে দেওয়া উপকারিতা।

রক্তে শর্করার নিয়ন্ত্রণে উন্নতি

ভায়োলেটা মরিস- চিনি বাদ দেওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন রক্তে শর্করা ওঠানামা।

তিনি ইটদিস নটদ্যাট ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলেন, “চিনি বাদ দেওয়ার পর সারাদিনে শক্তি অনেক বেশি স্থিতিশীল ছিল। আলাদা করে অতিরিক্ত কফি বা দুপুরে ঝিমুনি কাটাতে ঘুমানোর প্রয়োজন হয়নি।”

আসলে বেশি পরিমাণে চিনি খাওয়ার পর হঠাৎ করে রক্তে গ্লুকোজ বেড়ে যায়, আবার দ্রুত নেমেও আসে। এ ওঠানামাই ক্লান্তি, মনোযোগ কমে যাওয়া, এমনকি খিটখিটে মেজাজের জন্য দায়ী।

যুক্তরাষ্ট্রে করা একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, সুষম খাবারের মাধ্যমে রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখা গেলে কাজের প্রতি মনোযোগ ও উৎপাদনশীলতা বাড়ে।

মিষ্টির প্রতি আকাঙ্ক্ষা কমে যাওয়া

চিনি খাওয়ার অভ্যাস অনেক সময় নেশার মতো কাজ করে। প্রতিদিন নির্দিষ্ট পরিমাণের বেশি খেলে শরীর তা চাইতেই থাকে।

তবে ভায়োলেটা মরিস জানান, “চিনি কম খাওয়ার পর থেকে মিষ্টি খাওয়ার ইচ্ছাই কমে গিয়েছিল।”

এর কারণ হল- তিনি খাবারে প্রোটিন, স্বাস্থ্যকর চর্বি এবং জটিল শর্করা বাড়িয়ে দেন। ফলে দীর্ঘ সময় পেট ভরা থাকে, আর মিষ্টির জন্য বারবার টান পড়ে না।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তার স্বাদগ্রন্থিও বদলে যায়। আগে যেখানে কেক বা চকোলেট ছাড়া মিষ্টি লাগতো না, এখন ফল খেয়েই তৃপ্তি পান।

অপ্রত্যাশিত ওজন হ্রাস

চিনি বাদ দেওয়ার তৃতীয় বড় পরিবর্তন ছিল ওজন কমে যাওয়া।

মরিস বলেন, “শরীরে কয়েক মাস ধরে অতিরিক্ত যে পাঁচ পাউন্ড ওজন জমে ছিল, সেটি ৩০ দিনের মধ্যে কমে যায়। এতে আত্মবিশ্বাস বেড়েছে এবং স্বাস্থ্যগত লক্ষ্য পূরণে উৎসাহ পেয়েছি।”

চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা বহুভাবেই জানিয়েছেন, ‘যুক্ত চিনি’ শরীরে বাড়তি ক্যালোরি যোগ করে, তবে প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে না। ফলে স্থূলতা বাড়ে।

মরিসের অভিজ্ঞতা প্রমাণ করে, চিনি বাদ দিলে ক্যালোরি নিয়ন্ত্রণ সহজ হয় এবং অতিরিক্ত ওজন ঝরে যায়।

ঘুমের মান উন্নত হওয়া

ঘুমের সঙ্গে চিনির সরাসরি সম্পর্ক আছে। দিনে রক্তে শর্করার বড় ধরনের ওঠানামা রাতেও প্রভাব ফেলে। এতে কখনও রাতের বেলা ঘাম দিয়ে ঘুম ভেঙে যায়, আবার কখনও অস্থিরতা দেখা দেয়।

মরিস বলেন, “চিনি বাদ দেওয়ার পর আমি দ্রুত ঘুমাতে পারতাম এবং ঘুম ভেঙে গেলে অনেক সতেজ লাগতো।”

স্থিতিশীল রক্তে শর্করা গভীর, আরামদায়ক ও নিরবচ্ছিন্ন ঘুম নিশ্চিত করে।

যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন ঘুম বিষয়ক গবেষণায়ও দেখা গেছে, যারা অতিরিক্ত মিষ্টি খাবার খান, তাদের ঘুম ভাঙে বারবার এবং বিশ্রাম অসম্পূর্ণ থেকে যায়।

সারাদিন ক্লান্তি কমে যাওয়া

অতিরিক্ত চিনি খাওয়ার পর অনেকেই হঠাৎ শক্তি পেয়ে যান, আবার অল্প সময় পরই ক্লান্ত হয়ে পড়েন। এটিকে বলা হয় ‘সুগার ক্রাশ’।

মরিস বলেন, “চিনি বাদ দেওয়ার পর আর সারাদিন ঝিমুনি লাগেনি। বরং অনেক বেশি সতেজ ও উদ্যমী লাগতো।”

গবেষণা বলছে, সহজ শর্করা খেলে শরীরে মাত্র ৩০ মিনিটের মধ্যে ক্লান্তি দেখা দিতে পারে। বিপরীতে জটিল শর্করা ধীরে হজম হয়, যা শরীরে দীর্ঘ সময় ধরে শক্তি যোগায়।

জীবনযাপনে স্থায়ী পরিবর্তন

ভায়োলেটা মরিস জোর দিয়ে বলেন, “চিনি বাদ দেওয়া মানে মিষ্টি একেবারেই ত্যাগ করা নয়। বরং এর মূল লক্ষ্য হল সংযম। আমি কখনও মিষ্টি খাই না তা নয়। তবে এখন জানি কতটা খাওয়া উচিত এবং কোন সময় খেলে শরীরের ক্ষতি কম হবে।”,ু\

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *