কালের বিবর্তনে আধুনিকতার ছোঁয়ায় ঐতিহ্যবাহী গরুর লাঙ্গলের হাল চাষ প্রায় অদৃশ্য

পদ্মবিলা প্রতিনিধি

কালের বিবর্তনে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির প্রসারের ফলে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী গরুর লাঙ্গলের হালচাষ পদ্ধতি এখন বিলুপ্তির পথে। একসময় জমি চাষের ঐতিহ্যবাহী একটি চিরায়ত পদ্ধতি ছিলো গরু ও লাঙল দিয়ে জমি চাষ। এটি ছিলো অনেক উপকারী এক পদ্ধতি। কারণ লাঙলের ফলা জমির অনেক গভীর অংশ পর্যন্ত আলগা করতো। যান্ত্রিক চাষাবাদের সুবিধা, দ্রুত কাজ করার ক্ষমতা এবং কম খরচ হওয়ায় কৃষকরা এখন ট্রাক্টর ও পাওয়ার টিলার ব্যবহার করছে, যা ঐতিহ্যবাহী এই চাষের দৃশ্যকে প্রায় অদৃশ্য করে দিয়েছে।

চুয়াডাঙ্গার বিভিন্ন গ্রামে গরু, মহিষের মাধ্যমে মাঠে লাঙ্গল, মই দিয়ে চাষ এবং ধান গমসহ, বিভিন্ন ধরনের ফসল মাড়াই করাই ছিলো এক সময়ের প্রাকৃতিক চিত্র এবং পুরোনো পদ্ধতি।সেই পদ্ধতি আজ কালের বিবর্তনে আমাদের মাঝ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে চিরতরে। গ্রাম বাংলার কৃষকের ঘরে চাষের জন্য এক সময় ছিলো গরু, মহিষ, লাঙ্গল, মইসহ বিভিন্ন ধরনের হাতের তৈরি যন্ত্রপাতি। কৃষিকাজের জন্য যা সাধারণত ব্যবহার করা হতো। গ্রামের মানুষের সকালের ঘুম ভাঙ্গতো পাখিদের কিচিরমিচিরে আর উঠে দেখতো লাঙ্গলের জোয়াল আর হাল চাষের গরুর মুখ। বর্তমানে মানুষের ঘুম ভাঙ্গে এখন আধুনিক প্রযুক্তির হালচাষের যন্ত্র পাওয়ার টিলার বা ট্রাক্টরের শব্দ শুনে। বর্তমান প্রযুক্তির কাছে আগের সবই এখন স্মৃতি। এক সময় চারা বা বীজ রোপনের জন্য জমির মধ্যে লাঙ্গল দিয়ে হাল চাষ এবং সে জমির মাটি সমান করার জন্য মই দেওয়া হতো। আমাদের কৃষি প্রধান দেশে লাঙ্গল মই, জোয়াল হাজার বছরের ইতিহাসের স্মৃতি হয়ে আছে। লাঙ্গল দিয়ে হাল চাষ করার জন্য প্রয়োজন হতো একজন মানুষ। একটি লাঙ্গল, দুটো গরুনবা মহিষ এবং মাটি সমান করার জন্য একটি মই। গরু দিয়ে হাল চাষ করা আদিকালের উপযোগী পদ্ধতি। লাঙ্গল দিয়ে হাল চাষ করলে মাটির গভীর অংশ পর্যন্ত আলগা করা হতো যাতে গোবর সার বা জৈব সার ব্যবহার করলে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি হতো অনেক। এতে কৃষকের ফসল উৎপাদিত পরিমানে বেশি হতো। গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য এ পদ্ধতি হারিয়ে যাচ্ছে বর্তমানে আধুনিক যন্ত্রপাতি ছোঁয়ার কারনে। চুয়াডাঙ্গার জেলার বিভিন্ন উপজেলায় খুব কমই চোখে পড়ে লাঙ্গল দিয়ে জমিতে হাল চাষ করা। আধুনিক প্রযুক্তির কৃষি যন্ত্রপাতির ছোঁয়ায় এখন হারিয়ে যাচ্ছে চিরচেনা এ পদ্ধতি। বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে আমাদের দেশেও নতুন নতুন কৃষি যন্ত্রপাতি আবিস্কারের ফলে আমাদের কৃষকদের মাঝে এনেছে নানা ধরনের পরিবর্তন।

চুয়াডাঙ্গা জেলার নিমতলা গ্রামের মানুয়ার মিয়া জানান, আমি ছোট বেলা থেকেই আমাদের নিজস্ব গরু, লাঙ্গল দিয়ে চাষাবাদ করতে দেখেছি এবং আমিও করেছি। প্রতিদিনের খরচ বাদ দিয়ে আমার ২৫০ টাকা বাঁচতো যা দিয়ে আমার সংসার ভালোই চালিয়ে নিতাম। গরু দিয়ে হাল চাষ করলে মাটির গভীরতা হতো অনেক যাতে করে ঘাস গোড়া থেকে উঠে আসতো ফলে ফসলের মাঝে তেমন ঘাস জন্মাতো না। এখন আর আগের মত গরু দিয়ে হাল চাষ হয় না। এখন আধুনিক প্রযুক্তির বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতি এসেছে। এখন আর আমাকে কেউ ডাকে না জমিতে লাঙ্গল দিয়ে চাষ করার জন্য।

পদ্মবিলা ইউনিয়ন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা এম এ করিম জানান, বর্তমানে আধুনিক প্রযুক্তির কৃষি যন্ত্রপাতির ছোঁয়ায় কৃষি হয়েছে সহজ, কৃষক পেয়েছে স্বস্তি। সময় ও ব্যয়সাশ্রয়ী আধুনিক কৃষি কৃষির উন্নয়নে মাইলফলক অতিক্রম করেছে। এখন কৃষি হচ্ছে স্মার্ট। শিক্ষিত শ্রেনীর মানুষও এখন কৃষিতে নিয়োজিত হচ্ছে। কৃষি হয়েছে বাণিজ্যিক কৃষি। কৃষি থেকে শ্রমিক অন্য পেশায় যাচ্ছে, এটাও কৃষির বিবর্তন। এত কিছুর পরেও কৃষির উৎপাদনশীলতা বেড়েছে। ক্রমহ্রাসমান কৃষি জমির সাথে বিপরীতক্রমে বাড়ছে মানুষ। এসব মোকাবিলা করেও আধুনিক কৃষির প্রভাবে বাংলাদেশ আজ খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণ। কাজেই এখন কৃষি ও কৃষক দুটোই হচ্ছে স্মার্ট যুগোপযোগী।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *