পানির দরে পান হতাশায় চুয়াডাঙ্গার পানচাষিরা

নাজমুল হক শাওন ও শামীম রেজা

পান চাষে খরচ বেশি হওয়ায় ও পানের লতা মরে যাওয়ায় এবং ন্যায্যমূল্য না পেয়ে দিনের পর দিন পান চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার পানচাষিরা। প্রতি বছর লোকসান গুণছে তারা। তাই বাধ্য হয়ে অনেকে পানের আবাদ ছেড়ে দিচ্ছেন। নতুন করে পানের বাজারে বড় দরপতনে আবারও চাষ নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

চুয়াডাঙ্গা জেলায় অনুকূল আবহাওয়ার কারণে প্রচুর পান চাষ হয়ে থাকে। তুলানামূলক উচু জমিতে পান আবাদ ভালো হওয়ায় যুগ যুগ ধরে চুয়াডাঙ্গা জেলার বিভিন্ন এলাকায় পানের আবাদ করে আসছেন চাষিরা। পানকে জেলার প্রধান অর্থকারী ফসল বলা হলেও তা কেবল কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ। তবে বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কথা। এক সময়ে পানের আবাদকে কেন্দ্র করেই জেলায় ঘুরেছে অর্থনীতির চাকা। ধীরে ধীরে সে চাকার গতিও কমে আসছে। পানের চাষ পরিবর্তন করে অনেকেই শুরু করেছেন ভুট্টা ও ধানসহ নানা ধরনের ফসলের আবাদ।

কৃষি বিভাগ বলছে, পানের তুলনায় অন্য ফসলে ভালো লাভ হচ্ছে। তাই অন্য আবাদে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে। সাত বছর আগে চুয়াডাঙ্গায় এক হাজার ৭৭৪ হেক্টর জমিতে পানের আবাদ হয়েছিল। ২০২৫ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৫৫০ হেক্টরে। প্রতিবছরই কোনও না কোনও কারণে জেলায় পান বরজের সংখ্যা কমছে। ২০১৮ সালে চাষাবাদ হয় ১৭৭৪ হেক্টর, ২০১৯ সালে ১৭৩০ হেক্টর, ২০২০ সালে ১৬৭০ হেক্টর, ২০২১ সালে ১৬০৯ হেক্টর  ২০২২ সালে ১৬৩৩ হেক্টর ২০২৩ সালে  ১৬০৬ হেক্টর ২০২৪ সালে ১৬০০  হেক্টর জমিতে পান চাষ হয়েছে।

সম্প্রতি আলমডাঙ্গা উপজেলার গাংনী ইউনিয়নের আসমান খালি পানের বাজারে দেখা যায়, বিভিন্ন এলাকা থেকে বিক্রির জন্য চাষিরা পান নিয়ে এসেছেন। বাজারে ক্রেতা তুলনামূলক কম। আগের মতো বাইরের বড় ক্রেতা আসেনা। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা পান কিনছেন। ছোট আকারের পান প্রতিপণ (এক পণে ৮০ পান) ১ টাকা থেকে ৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর বড় আকারের পান বিক্রি হচ্ছে প্রতিপণ ১৫ থেকে ৪০ টাকা।

পানচাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মাটি ও আবহাওয়া পান চাষের জন্য চুয়াডাঙ্গা জেলা বেশ উপযোগী। এ কারণে কয়েক যুগ ধরে এই অঞ্চলে পানের আবাদ করা হয়। জেলার চার উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে পান চাষ হয়ে থাকে। এই অঞ্চলে সাধারণত দুই জাতের পান চাষ হয় মিষ্টি পান ও সাচি পানের আবাদ হয়।

সপ্তাহ ঘুরতে না ঘুরতে পানের বাজারেও দরপতন হচ্ছে। প্রতি হাটেই কমছে পানের দাম। বাড়ছে পানচাষিদের হতাশা। প্রতিটি পানের বরজে যে খরচ হয় তা তুলতেই হিমশিম খেতে হয় চাষিদের। আবার বড় ধরনের দরপতন কীভাবে সামাল দেবেন, তা নিয়েও দুঃশ্চিন্তায় পানচাষি ও ব্যবসায়ীরা।

পান চাষি রবিন আলী বলেন, ‘চলতি বছর এক একর জমিতে পানের আবাদ করেছি। আবাদও ভালো হয়েছে। কিন্তু দাম একেবারে কমে গেছে।  পতি সপ্তাহে কমছে পানের দাম গত বছর এই সময় ১০০ থেকে ১১০ টাকা, বিক্রি হয়েছে পান সেই পনের দাম এখন ২০ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রয় করতে হচ্ছে ।

পানচাষি ইদ্রিস আলী বলেন, ‘আমাদের পানের বরজে অনেক টাকা খরচ হচ্ছে। কিন্তু সেভাবে দাম পাচ্ছি না। এসব কারণে হাল ছেড়ে দিয়েছি। এই বছরেই বরজ ভেঙে ফেলবো।’ পান চাষ করে প্রতি বছরই লোকসান গুণছেন চাষিরা।

আরেক কৃষক মজনু মিয়া বলেন, ‘পান চাষ করে প্রতি বছরই আমাদের লোকসান হচ্ছে। এভাবে টিকে থাকা কষ্টকর।’

আলমডাঙ্গা উপজেলার ভাংবাড়িয়া ইউনিয়নের বাঁশবাড়িয়া গ্রামের পান চাষি জিহাদ বলেন ৩০০ শত পোন পান বিক্রি করে ৩হাজার টাকা পেয়েছি, পান ভাংতে ও পান গুছাতে আমাদের অনেক টাকা খরচ হচ্ছে।

আলমডাঙ্গা উপজেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কৃষি কর্মকর্তা রেহানা পারভীন বলেন, গতবছর ৯২৪ হেক্টর জমিতে পান চাষ হয়েছিল, কিন্তু এ বছর পান চাষ হচ্ছে ৯১৭ হেক্টর জমিতে। পানের তুলনায় অন্যান্য ফসলে ভালো লাভ পাওয়ায় সেদিকে ঝুঁকছেন অনেক কৃষকেরা। তবে আমরা চাষিদের পান চাষে উদ্বুদ্ধ করছি। আধুনিক পদ্ধতিতে পানের আবাদে আগ্রহী করে তুলতে কাজ করছে কৃষি বিভাগ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *