উথলীতে ফুটপাতে ফুসকা-চটপটি বিক্রি করে সাইফুল্লার মাসিক আয় ৫০ হাজার টাকা

উথলী প্রতিনিধি
দরিদ্র পিতার সংসারে হাল ধরতে প্রাইমারী স্কুলের গন্ডি পেরুতে পারেনি সাইফুল্লাহ। সংসারে বাড়তি আয়ের জন্য ছোট থেকেই বাবার সাথে কৃষি খামারে কাজ শুরু করেন তিনি। তারপর সে নিজেই শুরু করে বিভিন্ন মুখরোচক খাবার বিক্রি। প্রথম দিকে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে, চৌরাস্তার মোড়ে, বাজারে ফেরি করে ঝালমুড়ি ও ছেলা বিক্রি করতেন। ঝালমুড়ি ও ছোলার ব্যবসা ছেড়ে এখন শুরু করেছেন ফুসকা, চটপটি ও টিকিয়া বিক্রির ব্যবসা। অল্প কয়েক দিনেই তার ফুসকা, চটপটি ও টিকিয়া এলাকায় বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। তার নিজের হাতে তৈরি করা এসকল সুস্বাদু খাবার খেতে প্রতিদিন বিকাল থেকে দোকানে ভিড় জমে যায়। দৈনিক বিক্রি হয় প্রায় ১০/১২ হাজার টাকার খাবার। প্রতি মাসে তার আয় হয় ৫০ হাজার টাকার উপরে। এলাকার সবার কাছে সাইফুল্লার চটপটি বেশ পরিচিত
সাইফুল্লাহ জীবননগর উপজেলার উথলী গ্রামের রবিউল ইসলামের ছেলে। উথলী বাসস্ট্যান্ড মোড়ে বটগাছের নিচে ভ্রাম্যমাণ গাড়িতে মুখরোচক খাবারের ব্যবসা করেন তিনি। তার ছেলেকে সাথে নিয়ে প্রতিদিন বিকাল ৩ টা থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত এসকল খাবার তৈরি ও বিক্রি করে সে।
সাইফুল্লাহ বলেন, আমি ৯ বছর ধরে এসকল মুখরোচক খাবারের ব্যবসা করে আসছি।প্রথমদিকে বিভিন্ন স্থানে ঝালমুড়ি ও ছোলা বিক্রি করতাম। পরে আমার কাস্টোমারদের কাছ থেকে উৎসাহ পেয়ে এখন ফুসকা, চটপটি ও টিকিয়া বিক্রি করা শুরু করেছি। চটপটির প্রতি প্লেটে আমি এক পিচ গরুর মাংস দিই। মাংসের চটপটি ৫০ টাকা প্লেট ও ডিমের চটপটি ৩০ টাকা প্লেট বিক্রি করি। গরুর মাংস অথবা চিংড়ি মাছ দিয়ে স্পেশাল টিকিয়া তৈরি করা হয়। এটার দাম নেওয়া হয় ৫ টাকা করে। তাছাড়াও বিভিন্ন মসলা দিয়ে মজাদার ফুসকা তৈরি করা হয় যা ৩০ টাকা ও ৫০ টাকা প্লেট বিক্রি করা হয়।
তিনি আরও বলেন, আল্লাহর রহমতে আমার এখানে বেচাকেনা অনেক ভালো। আশেপাশে দর্শনা, হিজলগাড়ী, বেগমপুর, আন্দুলবাড়িয়া, জীবননগর ও মহেশপুর এলাকা থেকে অনেক কাস্টমার আসে।
সাইফুল্লার ভ্রাম্যমাণ দোকানে গিয়ে দেখা গেছে ছোট-বড় নারী পুরুষ সব শ্রেণী পেশার মানুষ ভিড় জমিয়েছে। দোকানের বেঞ্চে জায়গা না পেয়ে অনেকেই প্লেট হাতে দাঁড়িয়ে ও আশেপাশে বিভিন্ন স্থানে বসে খাবার খাচ্ছে। দোকানেই গ্যাসের চুলায় খাবার গুলো তৈরি করে বিক্রি করা হচ্ছে। চাহিদা বেশি থাকার কারনে খাবার পেতে অনেকের দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। ছেলে কে নিয়ে সাইফুল্লার যেন একমুহূর্ত বিরাম নেই।
খাবার খেতে আসা আন্দুলবাড়িয়া গ্রামের তারিক হোসেন বলেন, বন্ধু বান্ধব নিয়ে এখানে মাঝেমধ্যে খাবার খেতে আসি। এখানকার খাবার গুলো সুস্বাদু ও পরিবেশ টা অনেক ভালো। বিশেষ করে টিকিয়া টা বেশি ভালো লাগে।দর্শনার রাকিব হোসেন বলেন, রাস্তা দিয়ে যেতে এখানে খাবারের দোকান দেখে দাড়িয়ে গেলাম। এখান থেকে চটপটি খেলাম খাবারের মান বেশ ভালো।
একসময় সাইফুল্লার খুব দুরাবস্থা ছিলো। রেলওয়ে সংলগ্ন একটি জায়গায় কোনরকম মাথা গোজার ঠাঁই ছিলো তার। করোনা ভাইরাসের সময় ব্যবসায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে অনেক ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন। ভাসমান খাবারের দোকান থেকে আয় রোজগার করে সাইফুল্লাহ এখন নিজে জমি কিনে তৈরি করেছেন বাড়ি। চার জন সদস্য নিয়ে এখন বেশ স্বাচ্ছন্দ্যে চলছে তার পরিবার।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *