চার শ’ বছরের পুরোনো ঘোলদাড়ির শাহী মসজিদ

আলমডাঙ্গা অফিস
আলমডাঙ্গা উপজেলার ঘোলদাড়ি গ্রামে দাঁড়িয়ে আছে একটি প্রাচীন মসজিদ-শাহী মসজিদ। প্রায় ৪০০ বছর আগে নির্মিত এই মসজিদ স্থানীয়ভাবে পরিচিত ‘মান্নতের মসজিদ’ হিসেবে। শুধু নামাজ পড়তেই নয়, মানুষ আসেন মান্নত করতে, সিন্নি দিতে, প্রার্থনা জানাতে
স্থানীয় প্রবীণদের ভাষ্য অনুযায়ী, মসজিদটি নির্মিত হয় ১০০৬ হিজরি সালে, অর্থাৎ ১৬০০ সালের দিকে। এর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন হজরত খাইরুল বাসার (রহ.), যিনি ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে ঘোলদাড়ি এলাকায় আসেন। পরবর্তীতে তিনি মসজিদটি নির্মাণ করেন স্থানীয় মুসলমানদের সহায়তায়।
মসজিদটির স্থাপত্যশৈলীতে মুঘল আমলের প্রভাব চোখে পড়ে। তিনটি গম্বুজ, মোটা দেয়াল, চুন-সুরকির কাজ এবং খোদাই করা নকশা-সব মিলিয়ে এটি ইতিহাসপ্রেমীদের আকর্ষণ করে। মসজিদের ভেতর ও বাইরের কাঠামোয় এখনো টিকে আছে অতীতের ছাপ।
প্রতিদিন এখানে স্থানীয় মুসল্লিরা নামাজ পড়তে আসেন। তবে শুক্রবার জুমার নামাজের পর মসজিদ প্রাঙ্গণ জমে ওঠে সিন্নি দেওয়া আর মান্নত পূরণের আয়োজনকে ঘিরে। কেউ পায়েস রান্না করেন, কেউ ভাত-মাংস দিয়ে মেজবানের আয়োজন করেন। স্থানীয়ভাবে বিশ্বাস করা হয়, এখানে মান্নত করলে অনেকের মনোবাসনা পূর্ণ হয়।
ঘোলদাড়ি গ্রামের বাসিন্দা আবদুল মতিন বলেন, “অনেক মানুষ দূর-দূরান্ত থেকে আসে এখানে। মান্নত করে সিন্নি দেয়। অনেকের কথামতো দোয়াও কবুল হয়।”
মসজিদটির বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ মেহেদী ইসলাম দৈনিক আজকের চুয়াডাঙ্গা বলেন, এই মসজিদটা আলমডাঙ্গার একটা প্রত্নতাত্তিক সম্পদ। আমি নিজে গিয়েছি এই মসজিদে। বর্তমানে একটি ওয়াকফ কমিটির আওতায় মসজিদটা আছে। তারাই রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করছে। যদি তারা চায় অথবা এলাকাবাসী চায় তাহলে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের সাথে যোগাযোগ করে সংরক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
স্থানীয়দের দাবি, এই মসজিদটি সরকারিভাবে সংরক্ষণ করা প্রয়োজন। সংরক্ষণের পাশাপাশি মসজিদ চত্বরে উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড চালানো হলে এটি হয়ে উঠতে পারে একটি ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক পর্যটনকেন্দ্র।
চার শ’ বছরের বেশি সময় ধরে দাঁড়িয়ে থাকা ঘোলদাড়ির শাহী মসজিদ শুধু চুয়াডাঙ্গার নয়, গোটা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ইসলামী ইতিহাস ও লোকবিশ্বাসের এক নিঃশব্দ সাক্ষী।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *