চুয়াডাঙ্গায় ট্রেন থেকে পড়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মচারীর মৃত্যুর ঘটনার নতুন মোড়পরিবারের দাবি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডকে দুর্ঘটনা বলে চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে


উথলী প্রতিনিধি
গত ১৯ মে কপোতাক্ষ ট্রেনে চুয়াডাঙ্গা থেকে বাড়ি ফেরার পথে জয়রামপুর আখ সেন্টারের নিকট রেল লাইনের পাশে পড়ে ছিলো গাফ্ফার আলী আকাশ (২৬) নামের এক যুবকের মরদেহ। এলাকাবাসীর ধারনা ট্রেন থেকে ছিটকে পড়ে তার মৃত্যু হয়। গাফ্ফার আলী আকাশ জীবননগর উপজেলার সেনেরহুদা গ্রামের জিন্নাত আলীর একমাত্র ছেলে। সে চুয়াডাঙ্গা পানি উন্নয়ন বোর্ডে অফিস সহকারী হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
তাৎক্ষনিকভাবে তার মৃত্যুর সঠিক কারণ কেউ নিশ্চিত করতে পারেনি। পরে চুয়াডাঙ্গার সকল আঞ্চলিক পত্রিকাসহ বেশ কিছু জাতীয় পত্রিকা, অনলাইন নিউজ পোর্টাল ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ট্রেন থেকে পড়ে যুবকের মৃত্যু হয়েছে বলে সংবাদ প্রচার করে।
আকাশের মৃত্যুর কয়েকদিন পরে মৃত্যুর ঘটনার নতুন মোড় তৈরি হয়েছে। পাওয়া গেছে চাঞ্চল্যকর অনেক তথ্য। পরিবারের দাবি একটি সুপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড কে দূর্ঘটনা বলে চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
ট্রেনের ঙ নাম্বর বগিতে দায়িত্বে থাকা টিটিই কয়েকজন পুলিশ ও এটেনডেন্টরা আকাশকে ট্রেন থেকে ফেলে দিয়ে হত্যা করেছে বলে জানানো হয়। এই ঘটনায় নিহত আকাশের পিতা জিন্নাত আলী বাদি হয়ে গত ২১ মে ঐ ট্রেনের ঙ নাম্বার বগিতে দায়িত্বে থাকা ২ জন জিআরপি পুলিশ, ১ জন টিটিই ও ২ জন এটেনডেন্টকে আসামী করে দামুড়হুদা আমলী আদালতে একটি মামলা দায়ের করেছেন।
আসামীরা হলেন, ট্রেনের ঙ নাম্বর বগিতে দায়িত্বে থাকা টিটিই লালন চক্রবর্তী(৪২),পিতা পুষ্পলাল চক্রবর্তী, জিআরপি পুলিশের এসআই পারভেজ(৩৬) কনস্টেবল কাদের(৪০), এটেনডেন্ট মিলন(৩৭) ও সোহাগ মিয়া(৩৬)।
মামলা সূত্রে জানা যায়, নিহত আকাশ চুয়াডাঙ্গায় অফিস শেষ করে প্রতিদিনের ন্যায় কপোতাক্ষ ট্রেনে চুয়াডাঙ্গা থেকে বাড়িতে আসেন। ঘটনার দিন কপোতাক্ষ ট্রেনের ঙ নাম্বর বগিতে দায়িত্বে থাকা লোকজন টিকিট না কেটে উঠা যাত্রীদের সাথে চরম খারাপ আচরণ করছিলেন ও তাদের কাছে অবৈধভাবে অনেক টাকা দাবি করছিলেন। এই ঘটনার প্রতিবাদ করায় আকাশ কে আসামীরা টেনে হেঁচড়ে নিয়ে জয়রামপুর রেল স্টেশনের নিকট দরজা থেকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়। এই মামলায় ৪ জন প্রত্যক্ষদর্শী যাত্রী স্বাক্ষী প্রদান করেন।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ঐ ট্রেনের একই বগিতে থাকা একাধিক যাত্রীর কাছ থেকে তথ্য পেয়ে আকাশ হত্যার সঠিক বিচারের পাওয়ার জন্য আইনের আশ্রয় নিয়েছেন ভুক্তভোগী পরিবার। পরিবারের কাছ থেকে প্রত্যক্ষদর্শী এক যাত্রীর সাথে কথা বলার কল রেকর্ড হাতে পাওয়া যায়। রেকর্ড-এ রাজশাহী থেকে ওঠা ঐ ট্রেনের এক যাত্রী বলেছেন, আমরা ঐ ট্রেনের ঙ নাম্বর বগিতে ৭১ নং সিটে বসে ছিলাম। একপর্যায়ে দেখতে পাই হঠাৎ করে লাল গেঞ্জি পরিহিত একটা ছেলেকে(আকাশ) বগিতে দায়িত্ব থাকা কয়েকজন লোক চোরের মত করে টেনে হেঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছে। দরজার কাছে নিয়ে যাওয়ার ৩০ সেকেন্ডের মধ্যেই ঐ ছেলেকে ধাক্কা দিয়ে বাইরে ফেলে দেয়। আমি জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখি ছেলেটার মাথা নিচের দিক দিয়ে পড়ে যাচ্ছে। সেখানে দুইজন পুলিশ উপস্থিত ছিলো তাদের সামনেই এই ঘটনা ঘটে।
কল রেকর্ডে আরও শোনা যায়, তারা দর্শনা হল্ট স্টেশনে নামার পর ঘটনার সময় উপস্থিত থাকা কাদের নামের এক পুলিশের কাছে জানতে চায় ছেলেটার অপরাধ কি ছিলো। পুলিশ কোনো উত্তর না দিয়ে চলে যায়।
দূর্ঘটনার দিন আকাশ তার ৯ মাসের ছেলে শিশুর জন্য জুস কিনে বাড়ি ফিরছিলেন। আকাশের নিথর দেহের পাশে পড়ে ছিল জুসের প্যাকেট। বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান আকাশ অত্যন্ত নম্র,ভদ্র ও শান্ত স্বভাবের ছেলে ছিলো। তার মৃত্যু আসল রহস্য উদঘাটন করে প্রকৃত অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন এলাকাবাসী ও নিহতের সপরিবার।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *