গ্রীষ্মের খরতাপে পুড়ছে চুয়াডাঙ্গা, গতকাল রেকর্ড করা হয়েছে ৪১.৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস ৪ দিন ধরে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রায় বিপর্যস্ত জনজীবন

স্টাফ রিপোর্টার

গ্রীষ্মের খরতাপে পুড়ছে চুয়াডাঙ্গা। ঘরে বাইরে কোথাও স্বস্থি মিলছে না। গতকালও দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায় রেকর্ড করা হয়েছে ৪১.৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস। বাতাসের আদ্রতা ছিলো ৩৪ ভাগ। এই মৌসুমে গত ৩ দিন ধরে তীব্র থেকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বহে যাচ্ছে চুয়াডাঙ্গার উপর দিয়ে। শনিবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা ছিল চুয়াডাঙ্গায়। শুক্রবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪১.২ ডিগ্রী। এর আগে বৃহস্পতিবার ৩৯.৭ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। বাতাসের আদ্রতা ক্রমান্বয়ে বেড়ে যাওয়ায় ভ্যাপসা গরম অনুভূত হচ্ছে। এতে  শরীর থেকে ঘাম ঝরে মানুষ কাহিল হয়ে পড়ছে। তবে আবহাওয়া বলছে আজ থেকে তাপমাত্রা কিছুটা হ্রাস পাবে। 

               গত চার দিন দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বিরাজ করছে চুয়াডাঙ্গায়। তাপমাত্রার পারদ উঠেছে ৪০ ডিগ্রির উপরে। তীব্র গরম আর তাপদহে জেলার জনজীবন হাঁসফাঁস হয়ে উঠেছে। সকাল থেকে সূর্যের তাপের লেলিহান শিখা বিপর্যস্ত করে তুলছে জনজীবন। দুপুর ১২টা থেকে বিকেল পর্যন্ত রাস্তায় বের হলে মনে হয়, যেন শরীরে আগুনের শিখা লাগছে। পিচঢালা সড়কগুলোর পিচ গলে যাচ্ছে। জরুরি কাজ ছাড়া কেউ বাইরে বের হচ্ছেন না। রিকশাচালক, দিনমজুরদের সবচেয়ে বেশি কষ্টে পড়তে হচ্ছে। পেটের তাগিদে তাঁদের প্রচণ্ড গরমের মধ্যেও বাইরে কাজ করতে হচ্ছে। তীব্র গরমের মধ্যে শ্রমিকেরা কৃষি ক্ষেতে কাজ করতে পারছে না। দিনমজুরেরা ভোর ৪ টায় কাজ করতে গিয়ে সকাল ৮ টার মধ্যে বাড়ি ফিরে আসছে। তীব্র গরমে একটু স্বস্তির খোঁজে বড় গাছের ছায়ায়, বাগানে, পুকুর পাড়ে শীতলতম স্থানে অবস্থান নিচ্ছেন মানুষ। গরম থেকে স্বস্তি পেতে যুবকেরা দীর্ঘক্ষণ ধরে পুকুরের ও বিল বাওড়ের পানিতে গোসল করছে। উত্তপ্ত দুপুরে জেলার ৪ উপজেলার প্রতিটি শহর একেবারে ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। অতিপ্রয়োজনীয় কাজ ছাড়া কেউ বাউরে বের হচ্ছে না। পাখিভ্যান চালক তরিকুল ইসলাম বলেন, গত কয়েকদিন ধরে প্রচন্ড গরম পড়ছে। তারপরেও পেটের দায়ে ভ্যান গাড়ি নিয়ে বাইরে বের হয়েছি। দুপুর ১২ থেকে বিকাল পর্যন্ত তেমন প্যাসেঞ্জার হচ্ছে না। এই গরমের মধ্যে লোকজন তেমন বাইরে বের হচ্ছে না।  দিনমজুর মুকুল হোসেন বলেন, মাঠে অনেক কাজের চাপ। কিন্তু এই গরমের মধ্যে কাজ করা খুব কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সকালে রোদ উঠলে মাঠে অবস্থান করা যাচ্ছে না। তাই ভোর ৪ টাই মাঠে গিয়ে  কাজ শেষ কওে সকাল সকাল বাড়ি ফিরে আসছি। এমন গরম কতদিন থাকবে আল্লাহ পাকই ভালো জানে। তীব্র গরমে একটু শীতল পরশ পাওয়ার জন্য মানুষের চেষ্টার শেষ নেই।

তীব্র তাপদহে ক্লান্ত দেহে তৃষ্ণা মেটাতে অনেকেই ভিড় জমাচ্ছে রাস্তার পাশে শরবতের দোকানে। বিশেষ করে দিনমজুর, ভ্যান, অটোরিকশা চালক, শিক্ষার্থী ও সাধারণ পথচারীদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ফুটপাতের লেবুর ঠান্ডা শরবত। তীব্র গরমে লেবুর শরবত ছাড়াও বেড়েছে আখের রস, বেল ও ডাব বিক্রি। সুস্বাদু এই ঠান্ডা লেবুর শরবত পান করে ক্লান্ত শরীর কে শীতল করে নিচ্ছেন পথচারীরা।

তীব্র গরমে হিটস্ট্রোক ও অন্যান্য রোগব্যাধি থেকে সুরক্ষিত থাকতে চিকিৎসকরা বেশি বেশি করে ঠান্ডা পানি পান করা, ছায়া যুক্ত স্থানে অবস্থান করা, প্রয়োজনে একাধিকবার গোসল করা, পাতলা ও আরামদায়ক পোশাক পরিধান করা, চর্বিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলা, পানিশূন্যতা দূর করতে খাবার স্যালাইনসহ পান করা সহ নানা পরামর্শ দিয়েছেন।

               চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র পর্যবেক্ষক রাকিবুল ইসলাম জানান, আজ সোমবার থেকে তাপমাত্রা কিছুটা হ্রাস পেতে পারে। এভাবে চলবে আরো ৩-৪ দিন। ১৫মে আকাশে মেঘ হওয়ার একটা সম্ভাবনা রয়েছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *