হাসান নিলয়, জীবননগর
পৌষের শুরু থেকে চুয়াডাঙ্গা জেলা জুড়ে বইছে মাঝারি শৈত্য প্রবাহ। তীব্র শীত, ঘন কুয়াশা আর হিমেল বাতাসে জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। এই হাড়কাঁপানো কনকনে শীতের মধ্যে শুরু হয়েছে বোরোধান রোপণের মৌসুম। তীব্র শীতকে উপেক্ষা করে বোরো ধান চাষে ব্যাস্ত হয়ে পড়েছে জেলার জীবননগর উপজেলার চাষিরা। শ্রমিক সংকটের কারনে কিছু কিছু জায়গায় ধানের চারারোপণ করতে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে বলে জানা গেছে।
উপজেলার অধিকাংশ ফসলের মাঠ ঘুরে দেখা গেছে সেচ পাম্প ও বৈদ্যুতিক মোটরের সাহায্যে ক্ষেতে পানি দিচ্ছেন চাষিরা। পাওয়ারট্রলি ও হালের গরু দিয়ে জমি প্রস্তুত, বীজ তলা থেকে চারা সংগ্রহ ও ধান রোপনের ব্যস্ত সময় পার করছে তারা। পরিবারের চাহিদা মেটাতে ও বাণিজ্যিকভাবে বিভিন্ন উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান চাষের উৎসবে মেতেছে কৃষক কৃষানীরা।
ধান রোপণের শ্রমিক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, আমরা চুক্তিভিত্তিক প্রতি বিঘা ধান লাগাতে ২৪০০ শত টাকা নিয়ে থাকি। দড়ি দিয়ে লাইন করে লাগতে ৩ হাজার টাকা বিঘা নিই। ভোরে কুয়াশার মধ্যে বীজ তলা থেকে ধানের চারা সংগ্রহ করে সেগুলো মাথায় করে জমিতে নিয়ে গিয়ে ধান লাগানো হয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ধান লাগিয়ে প্রত্যেকের দৈনিক ১২০০/১৫০০ টাকা আয় হচ্ছে।
আরেক শ্রমিক সেলিম হোসেন বলেন, এখন ধান লাগানোর মৌসুম। এই সময় কাজ বেশি থাকে। মৌসুম শেষ হয়ে গেলে আবার কাজ কম হয়ে যাবে।তাই আমাদের দলের সবাই ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ধান লাগানোর কাজ করি। তীব্র শীতের মধ্যে প্রতিদিন ভোরে ঠান্ডা পানি থেকে ধানের চারা সংগ্রহ করে কাঁদার মধ্যে ধানের চারা রোপণ করি।আজ এক সপ্তাহ ধরে শীতের মধ্যে এই কাজ করতে করতে অভ্যাস হয়ে গেছে।
ধান চাষি মোমিন মিয়া বলেন, আমি দুই বিঘা জমিতে খাটো বাবু জাতের ধান লাগাতে চাচ্ছি। জমি ও ধানের চারা প্রস্তুত করা হয়ে গেছে। কিন্তু শ্রমিক সংকটের কারনে ধান লাগাতে ৩/৪ দিন দেরি হবে মনে হচ্ছে।
রাশেদুল নামের আরেক চাষি বলেন, এখন প্রচন্ড ঠান্ডা ও ঘন কুয়াশা পড়ছে। এই আবহাওয়া ধান লাগালে ধানের চারা হলুদ হয়ে নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই কিছুদিন পরে ধান লাগানোর পরিকল্পনা করেছি।
জীবননগর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন জানান, চলতি মৌসুমে জীবননগর উপজেলায় ৭ হাজার ২ শত ৬২ হেক্টর জমিতে বোরো ধান রোপণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই উপজেলায় সপ্তাহ খানিক ধরে ধান লাগানোর কাজ শুরু হয়েছে। অনেকেই ধান লাগানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশার কারনে ধানের বীজতলা রক্ষার জন্য কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।


