খালেদা জিয়া’র মৃত্যুতে চুয়াডাঙ্গায় বিএনপির নেতা-কর্মীদের বোবা কান্না, কালো ব্যাজ ধারন, শোক ও দোয়া অনুষ্ঠান

স্টাফ রিপোর্টার
তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে চুয়াডাঙ্গার রাজনৈতিক অঙ্গনে নেমে এসেছে গভীর শোকের ছায়া। যিনি ছিলেন আপসহীন নেতৃত্বের প্রতীক, গণতন্ত্রের সংগ্রামে অদম্য সাহসের নাম, তাঁর চিরবিদায়ে জেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়েন।
গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকেই চুয়াডাঙ্গা শহরের পরিবেশ ছিল ভারী। জেলা বিএনপির কার্যালয়, সাহিত্য পরিষদ চত্বরসহ শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে কালো পতাকা উত্তোলনের মধ্যদিয়ে শোক প্রকাশ করা হয়। নেতা-কর্মীরা বুকে ধারণ করেন শোকের প্রতীক কালো ব্যাজ। সাহিত্য পরিষদ চত্বরে মাদ্রাসার ছাত্ররা পবিত্র কুরআন খতম শেষে মহান আল্লাহর দরবারে বেগম খালেদা জিয়ার মাগফিরাত কামনায় দোয়া করেন।
দুপুর সাড়ে ১২টায় জেলা বিএনপির কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে খোলা হয় শোকবই। কর্মসূচির উদ্বোধন করেন চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সভাপতি ও চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মাহমুদ হাসান খান বাবু এবং সাধারণ সম্পাদক ও চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের প্রার্থী মো. শরীফুজ্জামান শরীফ। শোকবইয়ে স্বাক্ষর করার সময় তাঁদের চোখেমুখে স্পষ্ট ছিল অপূরণীয় শূন্যতার ছাপ।
এরপর পর্যায়ক্রমে জেলা বিএনপি, সদর উপজেলা বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা শোকবইয়ে স্বাক্ষর করে প্রয়াত নেত্রীর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। দলীয় কার্যালয়ে তখন নেমে আসে এক শোকাবহ নীরবতা। শেষে বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনায় বিশেষ মোনাজাত করা হয়।
শোকসভায় সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে জেলা বিএনপির সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া শুধু বিএনপির চেয়ারপার্সন নন, তিনি ছিলেন বাংলাদেশের গণতন্ত্রের এক অবিচল প্রহরী। জীবনের প্রতিটি অধ্যায়ে তিনি আপস না করে অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়েছেন। আজ তাঁর চলে যাওয়া আমাদের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। আমরা একজন নেত্রীকে হারালাম, হারালাম সাহস ও দৃঢ়তার এক জীবন্ত প্রতীক।’ তিনি আরও বলেন, ‘তাঁর আদর্শ ও ত্যাগই আমাদের আগামী দিনের পথ দেখাবে। যত বাধাই আসুক, তাঁর দেখানো পথে থেকেই গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রাম চালিয়ে যাবে বিএনপি।’
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শরীফুজ্জামান শরীফ বলেন, ‘আজ চুয়াডাঙ্গা শুধু শোকাহত নয়, স্তব্ধ। বেগম খালেদা জিয়া আমাদের শিখিয়েছেন মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে, অন্যায়ের কাছে নত না হতে। তাঁর এই শিক্ষা আমাদের প্রতিটি নেতা-কর্মীর হৃদয়ে চিরজাগরুক থাকবে।’ তিনি বলেন, ‘এই শোক আমাদের দুর্বল করবে না, বরং আরও ঐক্যবদ্ধ করবে। দেশ ও জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার যে সংগ্রাম তিনি শুরু করেছিলেন, তা শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমরা থামব না।’
কর্মসূচিতে জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সফিকুল ইসলাম পিটু, খালিদ মাহমুদ মিল্টনসহ জেলা, উপজেলা ও বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের অসংখ্য নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন। সবার কণ্ঠে ছিল একই কথা- একজন নেত্রীর প্রস্থান হলেও তাঁর আদর্শ বেঁচে থাকবে মানুষের হৃদয়ে, ইতিহাসের পাতায়।
এদিকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপি’র চেয়ারপার্সন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া মৃত্যুতে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম হাসান টুটুল স্বাক্ষরিত এক শোকবার্তায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশের তিন বারের সফল প্রধানমন্ত্রীর মৃত্যুতে দেশ ও জাতির অপুরনীয় ক্ষতি হয়েছে। বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনপ্রতিষ্ঠার সংগ্রামের প্রতীক, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে আপোষহীন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ভূমিকা স্মরণীয় হয়ে থাকবে চিরকাল। দেশমাতার মৃত্যুতে বাংলাদেশ, চুয়াডাঙ্গা জেলা গভীর ভাবে শোকাহত।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *