জীবননগরে কুমড়োর বড়ি তৈরির ধুম, বিক্রি হচ্ছে অনলাইনে

জীবননগর অফিস
জীবননগর উপজেলায় শীত মৌসুম এলেই প্রতিটি গ্রামের নারীরা খাবারে বাড়তি স্বাদ আনতে কুমড়ো বড়ি তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করেন। আর তাই কিছুদিন যাবত শীত জেঁকে বসায় জীবননগরের প্রতিটি গ্রামে কুমড়ো বড়ি তৈরির যেন ধুম পড়েছে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা ছাড়াও অনেক উদ্দোক্তারা অনলাইনে কুমড়ো’র বড়ি বিক্রি করছেন। কুমড়ো বড়ি তৈরির উপযুক্ত সময় শীতকাল। শীতের সময় গ্রামের নারীদের কর্মব্যস্ততা বেড়ে যায়। তারপর নিত্যদিনের ছোট কাজও বেশি থাকে। এরমধ্যেই সব কাজের আগে সকালে কুমড়াে বড়ি তৈরি করেন নারীরা। কুমড়ো বড়ি তরকারির একটি মুখরোচক খাদ্য। এতে তরকারির স্বাদে যোগ হয় নতুন মাত্রা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, জীবননগর উপজেলার শত শত নারী কুমড়ো বড়ি তৈরির কাজে জড়িত রয়েছেন। শীতের আগমনের সাথে সাথে কুমড়ো বড়ি তৈরির ব্যস্ততা বেড়ে যায় তাদের।
শীতকাল কুমড়ো বড়ি তৈরির ভরা মৌসুম। এ সময় গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে কমবেশি কুমড়ো বড়ি তৈরি করা হয়। কেউ কেউ পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে বাকিটা বাজারে বিক্রি করেন। শীতে কুমড়ো বড়ির চাহিদা থাকে বেশি। আর গ্রামাঞ্চলের নারীরা বাড়তি আয়ের জন্যও কুমড়ো বড়ি তৈরি করেন।
কুমড়ো বড়ি তৈরির প্রধান উপকরণ মাসকলাইয়ের ডাল আর চালকুমড়া। বাজারে প্রতি কেজি মাসকলাই ১০০ টাকা থেকে ১২০ টাকা আর চাল কুমড়া ২০ থেকে ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। সাইজ হিসেবে চালকুমড়া ৭০ থেকে ১০০ টাকার মধ্যে কেনা যায়। ৫ কেজি চালকুমড়ার সঙ্গে ২ কেজি মাসকলাইয়ের মিশ্রণে কুমড়ো বড়ি ভাল হয়।
প্রথমে মাসকলাই রোদে শুকিয়ে যাতায় ভেঙে পরিষ্কার করে বা না ভেঙে পানিতে ভিজিয়ে রেখে খোসা ছাড়িয়ে নেওয়া হয়। প্রায় ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা মাসকলাই পানিতে ভেজাতে হয়। তারপর ঢেঁকি বা শিল-পাটায় পিষে নিয়ে কুমড়ো বড়ির মিশ্রণ তৈরি করা হয়।
তবে, এখন উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় কুমড়ো বড়ি তৈরির মেশিন স্থাপনের পর থেকে সবাই মেশিনে মাড়াই করে মাসকলাই ও কুমড়ার মিহি করা হচ্ছে। এরপর দুইটির মিশ্রণে কুমড়ো বড়ির উপকরণ তৈরি করা হয়।
রৌদ্রোজ্জ্বল ফাঁকা স্থান, বাড়ির আঙ্গিনা, ছাদ বা খোলা জায়গায় ভোর থেকে বড়ি তৈরি করা শুরু হয়। পাতলা কাপড়ে সারি সারি বড়ি বসানো হয়। কুমড়ো বড়ি বসানোর পর দুই-তিন দিন একটানা রৌদ্রে শুকানো হয়। সূর্যের আলো কম হলে ৩-৪ দিন পর্যন্ত শুকাতে সময় লেগে যায়। শুকানোর পর কাপড় থেকে বড়ি উঠিয়ে পাত্রে সংরক্ষণ করা হয়। গ্রামের পিছিয়ে পড়া অনেক মেয়েরা নিজেদের ভাগ্যেন্নয়নে শ্রম দিয়ে অনেক বছর ধরে এ কুমড়ো বড়ি তৈরিকাজে নিয়োজিত রয়েছেন। উপজেলার উথলী গ্রামের প্রায় ৩০-৪০টি পরিবার ব্যবসায়ীক ভিত্তিতে কুমড়ো বড়ি তৈরি করছেন।
ওই গ্রামের নারী রশিদা খাতুন বলেন, আগে কুমড়ো বড়ি ব্যবসায়ী পরিবারগুলো প্রথম অবস্থায় তেমন স্বচ্ছল ছিল না। এখন অনেকেই কুমড়ো বড়ির ব্যবসা করেই স্বাবলম্বী হয়েছেন।
তিনি আরো বলেন, ৫ কেজি কুমড়ার সঙ্গে দুই কেজি মাসকলাইয়ের কুমড়ো বড়ি ভালো তৈরি হয়। আগে মাসকলাই পানিতে ভিজিয়ে পরিষ্কার করা, আর ঢেঁকিতে বা পাটায় বেটে বড়ি তৈরি করতে প্রচুর পরিশ্রম হতো, সেই সঙ্গে অনেক সময় লাগতো। এখন খোসা ছাড়ানো মাসকলাই বাজারে কিনতে পাওয়া যায়।
মাসকলাই পানিতে ভিজিয়ে মেশিনের সাহায্যে মাড়াই করে অল্প সময়ে বড়ি তৈরির মিশ্রণ তৈরি করা খুব সহজ হয়েছে। এতে করে অল্প সময় প্রচুর পরিমাণ কুমড়ো বড়ি তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে। এক কেজি কুমড়ো বড়ি তৈরি করতে প্রায় ১২০ টাকা মতো খরচ হচ্ছে। আর বাজারে ২০০ থেকে আড়াইশ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এতে পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে বাড়তি আয় করা সম্ভব হচ্ছে।
তরুণ উদ্দোক্তা নাঈমুর রহমান বলেন, এখানকার কুমড়োর বড়ি অনলাইনের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করা হচ্ছে। এই কুমড়ার বড়ি গুলো দেখতে সুন্দর ও খেতে সুস্বাদু যার কারনে এর প্রচুর চাহিদা রয়েছে।
এ বিষয়ে জীবননগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন জানান, শীত মৌসুমে গ্রামের নারীরা কুমড়ো বড়ি তৈরি করে বাড়তি আয় করছেন। গ্রামীণ নারীরা উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ও পৃষ্টপোষকতা পেলে তারা নিজেদের ভাগ্য উন্নয়ন ও গ্রামীণ অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে সক্ষম হবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *