দুই দিন সূর্যের দেখা নেই চুয়াডাঙ্গায়, জনজীবন বিপর্যস্ত

স্টাফ রিপোর্টার
দুই দিন ধরে চুয়াডাঙ্গায় সূর্যের দেখা মেলেনি। আর সূর্যের আলো না থাকার কারণে শীতে  জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে উঠেছে। বহে যাচ্ছে উত্তরের হিমেল হাওয়া,  সাথে ঘন কুয়াশা। এর কারনে মানুষের স্বাভাবিক কর্মজীবন ব্যাহত হচ্ছে। দিন ও রাতের তাপমাত্রার ব্যবধান কমে যাওয়ায় শীতের তীব্রতা বেড়ে যাচ্ছে। আজ থেকে তাপমাত্রা আরো কমে গিয়ে মৃদু শৈত্য প্রবাহ বয়ে যেতে পারে বলে জানায় আবহাওয়া অফিস।
শীতের হাত থেকে রক্ষা পেতে শিশু ও বৃদ্ধদের ঘরের মধ্যে অবস্থান করার কথা বলা হয়েছে। সোমবার জেলায় সর্বনিন্ম তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১২.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসের আদ্রতা ৯১ ভাগ।
চুয়াডাঙ্গাসহ সারা দেশে জেঁকে বসেছে শীত। ঘন কুয়াশা আর হিমেল হাওয়ায় বিপর্যস্ত জনজীবন ও প্রকৃতি। শীতের তীব্রতায় সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন ছিন্নমূল ও নিম্ন আয়ের মানুষ।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, ভারতের উত্তরপ্রদেশ অঞ্চল থেকে আসা শীতল বায়ুর প্রভাবে দিন ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য কমে গেছে। এর ফলে আরও ৩ থেকে ৪ দিন ঘন কুয়াশা থাকতে পারে। এরই মধ্যে দেশের দিকে ধেয়ে আসছে নতুন শৈত্যপ্রবাহ ‘কনকন’। তাপমাত্রা নামতে পারে ৬ ডিগ্রিতে।
আবহাওয়া পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা জানিয়েছে, আসন্ন এই শৈত্যপ্রবাহের প্রভাবে শীত আরও তীব্র হতে পারে আগামী কয়েক দিনে। রবিবার (২৮ ডিসেম্বর) ফেসবুক পেজে প্রকাশিত বার্তায় বাংলাদেশ ওয়েদার অবজারভেশন টিম (বিডব্লিউওটি) জানিয়েছে, শৈত্যপ্রবাহ ‘কনকন’ ২৮ ডিসেম্বর থেকে ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত বা ৩১ ডিসেম্বর থেকে ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত স্থায়ী থাকতে পারে।
এছাড়া আগামী কয়েক দিন মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন এলাকায় মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। কোথাও কোথাও দুপুর পর্যন্ত কুয়াশা অব্যাহত থাকার আশঙ্কাও রয়েছে। শীতের হিমেল হাওয়ার সঙ্গে ঘন কুয়াশায় ঢেকেছে প্রকৃতি। সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) রাতে বাংলাদেশ ওয়েদার অবজারভেশন টিম (বিডব্লিউওটি) এক বিশেষ বার্তায় এই আশঙ্কার কথা জানিয়েছে। শৈত্যপ্রবাহ চলাকালে চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, রাজশাহী ও পাবনাসহ পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৬ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে আসতে পারে।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল সহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোত ঠান্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। বিশেষ করে শিশুরা ডায়রিয়া, জ্বর, সর্দি, কাশি, গলাব্যথা ও টনসিলাইটিস রোগে ভুগছেন।
ডিঙ্গেদহের ভ্যানচালক কালাম হোসেন বলেন, সকাল সাড়ে ৮টায় ভ্যান নিয়ে বের হয়েছি।তীব্র ঠান্ডা ও বাতাসের কারনে শরীরে কাঁপুনি ধরে যাচ্ছে। তবুও কিছু করার নেই পেটের দায়ে কাজে আসতে হচ্ছে। এই তীব্র শীতে অনেকেই বাইরে বের হচ্ছে না যার কারণে যাত্রী সংখ্যাও কম। অনেকগুলো শীতের কাপড় পড়ে এসেও শীতে কাবু হয়ে যাচ্ছি। শীত না কমা পর্যন্ত আমাদের দুর্ভোগ কমবে না।
দৌলতদিয়ার এলাকার রিক্সাচালক শফিক হোসেন বলেন, তীব্র শীতে মানুষজন কেউ বাহির হচ্ছে না, তাই ঠিকমত প্যাসেঞ্জার পাওয়া যাচ্ছে না এবং ভাড়া  হচ্ছে না আর যেটা হচ্ছে সেটা দিয়ে সংসার চালানো যাচ্ছে না। শীত বাড়ার সাথে সাথে আমাদের জনদুর্ভোগও বেড়েছে।
দিনমজুর মোবারক আলী বলেন, সূর্যের দেখা না পাওয়ায় শীত বেশি পড়ছে। এই তীব্র শীতে সকালে কাজে যাওয়া কষ্টকর হয়ে যায়। কাজ না করলে সংসার চালানো কষ্ট। তাই এই তীব্র শীত উপেক্ষা করেও আমাদেরকে কাজে যেতে হচ্ছে। কয়েকদিন ধরে এরকম শীত পড়ছে যার কারণে কাজে না এসে পারা যাচ্ছে না। তবে কাজ শেষ করে আগে আগেই বাড়ি চলে যাই এখন।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে তত্বাবধায়ক বিদ্যুৎ কুমার বিশ্বাস বলেন, হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে শতাধিক রোগী ভর্তি রয়েছে। এর মধ্যে বেশিরভাগই শিশু ডায়রিয়া রোগী। এই শীতে শিশু ও বৃদ্ধদের পুষ্টিকর খাবারের পাশাপাশি উঞ্চস্থানে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। এছাড়া কুসুম পানি করা এবং ঘরের মধ্যে থাকার অনুরোধ করা হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আউলিয়ার রহমান বলেন, এই শীতে শিশু ও বৃদ্ধরা সাধারণত স্বাস্থ্য ঝুকিতে থাকে। এ সময় ঘরের মধ্যে থাকতে পারলে ভালো হয়। বাইরে বের হলে গরম পোশাক পরে বের হতে হবে। এ্যাজমা রোগীদের আরো সচেতন হতে হবে। অনেকেই ঠাণ্ডার কারনে গোসল করতে চাই না এবং পরিমান মতো পানি খেতে চাই না। এতে শরীরে পানি শূন্যতা দেখা দিতে পারে। সেই কারনে পরিমানমত পানি পান করতে হবে ও নিয়মিত গোসল করতে হবে।
চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান বলেন, জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১২.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সারাদিন মেঘলা আকাশ  কুয়াশা থাকতে পারে। দুই এক দিনের মধ্যে  তাপমাত্রা আরো কমে মৃদু শৈত্য প্রবাহ বয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, নওগাঁ, পাবনা, বগুড়া, নাটোর, নড়াইল, যশোর, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, মাগুরা ও রাজবাড়ীসহ আশপাশের এলাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৬ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে যেতে পারে। এসব এলাকায় শৈত্যপ্রবাহ অপেক্ষাকৃত আগেই শুরু হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *