মৃদু শৈত্যপ্রবাহের কবলে চুয়াডাঙ্গা জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, বিপর্যস্ত জনজীবন

স্টাফ রিপোর্টার
পৌষ মাসের মাঝে এসে চুয়াডাঙ্গায় মৃদু শৈত্য প্রবাহ শুরু হয়েছে। ভোর থেকে কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়ছে সড়ক-মহাসড়ক ও ফসলের মাঠ। একই সাথে তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় বেড়ে গেছে  শীতের তীব্রতা। ফলে শীতে কাবু চুয়াডাঙ্গার জনজীবন। গতকাল শুক্রবার সকাল ৯টায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা এ মৌসুমে চুয়াডাঙ্গার সর্বনিন্ম তাপমাত্রা। সেই সাথে বয়ে যাচ্ছে জেলার উপর দিয়ে মৃদু শৈত্য প্রবাহ। এতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে লাখো মানুষ। ফুরফুরে বাতাসে ক্রমেই শীত বাড়ায় প্রভাব পড়েছে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায়।
কুয়াশার পাশাপাশি ঠান্ডা বিরাজ করায় বাইরে লোকজনের উপস্থিতিও অনেকটাই কমে গেছে। শীতে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে খেটে খাওয়া মানুষ, দিনমজুর, ভ্যানচালক ও খোলা আকাশের নিচে থাকা অসহায়দের। ছিন্নমূল মানুষেরা খড়কুটো জ্বেলে শীত নিবারনের চেষ্টা করছে। শীত থেকে বাঁচতে শীতবস্ত্রের দোকানগুলোতে বেড়েছে মানুষের ভিড়।
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার বাসিন্দা সেলিম রেজা পিন্টু বলেন, আমরা মাঠে কৃষিকাজ করি। অনেক ভোরে উঠে মাঠে যেতে হয়। গত তিন দিন তীব্র শীতের কারণে সকালে উঠে মাঠে যেতে পারিনি। এমন শীত বহাল থাকলে আমাদের মাঠে কৃষিকাজ করতে অনেক অসুবিধা হবে। শীতের তীব্রতা কমলে স্বাভাবিক কৃষি কাজে ফিরতে পারবো আমরা।
চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার রাজমিস্ত্রি আশাদুল হক বলেন, বর্তমানে কাজকর্মে সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে তীব্র শীত। কয়েক দিন ধরে চুয়াডাঙ্গাতে খুব বেশি শীত পড়ছে। এই শীতের কারণে আমি সহ আমাদের রাজমিস্ত্রির কেউই তেমন সকাল বেলা কাজে যেতে পারছি না। সকালে কাজে গেলেও রাস্তার পাশে খড়কুটোয় আগুন জেলে তার তাপ নিয়ে শীত নিবারণ করি। এরকম চলতে থাকলে আমাদের স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে বেশ অসুবিধা হবে।
রিকশাচালক সাত্তার আলী বলেন, শীতের কারণে রিকশাতে যাত্রী সংখ্যাও কম। আগে সকালে এবং রাতে যাত্রী টেনে ভালই উপার্জন হত। কিন্তু বর্তমানে শীতের তীব্রতা বাড়ায় সকালে এবং রাতে যাত্রী নেই বললেই চলে। তাছাড়া তীব্র শীতে সকালে এবং রাতে রিকশা নিয়ে বের হওয়াটাও বেশ কষ্টসাধ্য। শীতের কারণে আমাদের উপার্জন করাটাও বেশ কষ্টকর হয়ে পড়েছে।
এদিকে মৃদু শৈত্য প্রবাহ থেকে দরিদ্র মানুষকে রক্ষা করতে সরকারি সহায়তার বেসরকারি বিভিন্ন সংগঠন শীত বস্ত্র বিতরণ করছে। গতকাল উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন এলাকায় শীতার্ত মানুষের মাঝে কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিজ হাতে এ কম্বল দ্ররিদ্র মানুষের হাতে তুলে দেন। এর আগে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামাল হোসেন শহীদ হাসান চত্বর ও আবাসন প্রকল্প এলাকায় শীত বস্ত্র বিতরণ করেছেন।
শৈত্য প্রবাহ থেকে রক্ষা করতে শীতার্ত ও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে প্রশাসনসহ সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার অনুরোধ জানিয়েছেন সচেতন মহল। হাসপাতাল গুলোতে ঠান্ডা জনিত রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেছে। বয়স্ক ও শিশুরা নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। কুয়াশার কারনে সড়ক গুলোতে যানবাহন হেডলাইন জ্বালিয়ে চলাচল করছে।
চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান জানান, শুক্রবার সকাল ৯টায় চুয়াডাঙ্গায় সর্বনিন্ম তাপমাত্রা রেকর্ড  করা  হয়েছে ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা এই মৌসুমে জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। বয়ে যাচ্ছে মৃদু শৈত প্রবাহ। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯৫ শতাংশ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *