স্টাফ রিপোর্টার
বিগত কয়েকদিন ধরেই বেড়েছে শীতের তীব্রতা। তীব্র এ শীতে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে গত ১০ দিন ধরে বেড়েছে ডায়রিয়া রোগীর চাপ। ডায়রিয়ার বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। রোগীদের এই চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা। শীত যত বাড়ছে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা তত বাড়ছে বলে অনেকেই জানান।
জানা যায়, ডায়রিয়া ওয়ার্ডটি ৫ শয্যাবিশিষ্ট হলেও গতকাল সোমবার পর্যন্ত ভর্তি ছিলো ৮৯ জন। যার মধ্যে ৬৫ জনই রয়েছে শিশু। সোমবারে ডায়রিয়া রোগী ছিলো ১২৯ জন। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছে শতাধিক ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী। দুপুর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত আক্রান্তদের অনেককে জরুরি বিভাগে প্রাথমিক চিকিৎসা নিতে দেখা গেছে। ডায়রিয়া ওয়ার্ডে স্থান সংকুলান হওয়ায় ওয়ার্ডের বাইরে বারান্দায় ও মেঝেতে থেকে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে আক্রান্ত রোগীদের। জনবল সংকট হওয়ায় চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। চলছে ঔষধের সংকট। ভাগে যোগে স্যালাইন দেয়া হলেও বেশিরভাগ ঔষধ বাইরে কিনতে হচ্ছে। এতে চরম বেকায়দায় পড়েছে রোগীর স্বজনেরা। এর বাইরে নার্স ও আয়াদের দূব্যবহার।
গতকাল সোমবার দুপুর থেকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ঘুরে দেখা যায়, রোগী ও স্বজনদের উপচে পড়া ভিড়। সেখানে ওয়ার্ডে শয্যা সংখ্যা সিমিত। চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের স্বজনরা জানিয়েছেন হাসপাতাল অনেকটা অপরিষ্কার, নেই পর্যাপ্ত বেড। পাঁচটি বেডের স্থানে ভর্তি রয়েছে ৮৯জন। হাসপাতাল থেকে দেয়া হচ্ছে না কোন ঔষধ। স্যালাইন বাদে সব ঔষধ বাইরের ফার্মেসি থেকে কিনতে হচ্ছে।
ডায়রিয়ায় আক্রান্ত এক শিশুর মা শিউলি খাতুন বলেন, দুই বছরের ছেলের হঠাৎ বমি ও পাতলা পায়খানা শুরু হলে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে এসেছি। কিন্তু এসে দেখি কোনো বেড খালি নেই। ঠান্ডা মেঝেতেই শিশুকে নিয়ে বসে থাকতে হচ্ছে। চিকিৎসা সেবা পাওয়াটাও অনেক কষ্টকর হয়ে পড়েছে। ডায়রিয়ায় আক্রান্ত আরেক শিশুর মা রহিমা খাতুন জানান, রাতে শীত বেশি থাকায় মেঝেতে শিশুকে রাখা খুব কষ্টের। তবে কোনো উপায় নেই। হাসপাতালের পরিবেশ খুব একটা ভালো নয়। অনেক সময় নার্সদেরকে ডেকেও পাওয়া যায় না। প্রয়োজন মতো ওষুধও আমরা পাচ্ছি না। অর্ধেকের বেশি ঔষধ বাইরে থেকেই কিনে আনতে হচ্ছে। ১ বোতল স্যালাইন ৩/৪ জনকে ভাগ করে দেয়া হচ্ছে। হাসপাতালে আমাদের ভোগান্তির শেষ নেই।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দায়িত্বরত একজন সিনিয়র স্টাফ নার্স বলেন, শীতের শুরুতেই ডায়রিয়া ওয়ার্ডে রোগীদের চাপ বেড়ে যায়। আমাদের জনবল সংকট। তবুও আমরা দিনরাত অক্লান্তভাবে রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছি। আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। তবে অভিভাবকদের সচেতন হওয়াই সবচেয়ে জরুরি। সময়মতো চিকিৎসা না হলে পানিশূন্যতা শিশুর জন্য প্রাণঘাতী হতে পারে।তাই ডায়রিয়া হলে শিশুকে সরাসরি হাসপাতালে নিয়ে আসার পরামর্শ দেন তিনি। তিনি আরোও বলেন, ডায়রিয়া হলে শিশুদের মায়ের দুধ খাওয়ানো বন্ধ করা যাবে না। প্রতিবার পাতলা পায়খানার পর স্যালাইন খাওয়ানো বাধ্যতামূলক।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. বিদ্যুৎ কুমার বিশ্বাস বলেন, তীব্র শীতের প্রভাবে বিভিন্ন সংক্রামক রোগের বিস্তার ঘটছে। যার ফলে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে হাসপাতালে শিশু রোগীদের চিকিৎসা দিতে কিছুটা চাপ তৈরি হয়েছে। তবে সীমিত সামর্থ্যের মধ্যেও আমরা পরিস্থিতি সামাল দিয়ে চিকিৎসাসেবা চালু রেখেছি।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ১০দিন ধরে বেড়েই চলেছে ডায়রিয়া রোগী ভাগেযোগে দেয়া হচ্ছে স্যালাইন, নেই ঔষধের সরবরাহ



