চুয়াডাঙ্গায় নাগরিক ভাবনা শীর্ষক সুজনের গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত

স্টাফ রিপোর্টার
চুয়াডাঙ্গায় সুষ্ঠু নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক উত্তরণ : নাগরিক ভাবনা শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) আয়োজিত এই বৈঠকে গণতন্ত্র, সুষ্ঠু নির্বাচন, নাগরিক অধিকারসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করা হয়। স্থানীয় পুলিশ পার্ক মিলনায়তনে সোমবার সকাল ১০টায় অনুষ্ঠিত এ গোল টেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
চুয়াডাঙ্গা জেলা সুজনের সভাপতি অধ্যাপক সিদ্দিকুর রহমান গোলটেবিল বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। সুজনের সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল ইসলামে সেলিমের সঞ্চালনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সৌম্যজিতা শ্রুতি। সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, জেলা নির্বাচন অফিসার আহমেদ আলী, দি হাঙ্গার প্রজেক্ট যশোর অঞ্চলের আঞ্চলিক সমন্বয়কারী খোরশেদ আলম এবং জেলা সমন্বয়কারী মো. গিয়াস উদ্দিন। সভায় বক্তারা গণতন্ত্রের বিকাশে সুষ্ঠু নির্বাচনের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, একটি গ্রহণযোগ্য ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন আয়োজন কেবল রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের একক দায়িত্ব নয়; বরং এতে নাগরিক সমাজ, রাজনৈতিক দল, গণমাধ্যম ও সাধারণ জনগণের সম্মিলিত ভূমিকা অপরিহার্য। তাঁরা আরও উল্লেখ করেন, ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা ও রক্ষা করতে নাগরিকদের সচেতন ও সংগঠিত ভূমিকা পালনের কোনো বিকল্প নেই। বিশেষ করে তরুণ ও নতুন ভোটারদের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। আলোচনায় উঠে আসে যে, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা না গেলে নির্বাচন ব্যবস্থার প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা তৈরি হওয়া সম্ভব নয়।
এ সংলাপে চুয়াডাঙ্গার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ অংশগ্রহণ করেন। সভায় উপস্থিত ছিলেন চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের ইতিহাস বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন, চুয়াডাঙ্গা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাড. মারুফ সরোয়ার বাবু, দৈনিক সময়ের সমীকরণের প্রধান সম্পাদক নাজমুল হক স্বপন, চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি অ্যাড. মানিক আকবর, চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান সেলিম, দৈনিক পশ্চিমাঞ্চলের সম্পাদক ও প্রকাশক আজাদ মালিতা, জেলা জজ আদালতের বিজ্ঞ আইনজীবী ও জেলা আইনজীবী সমিতির নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. মানি খন্দকার, অ্যাড. শাহজাহান মুকুল, অ্যাড. দেলোয়ার হোসেন ডালিম, অ্যাড. হেদায়েত হোসেন আসলাম, চুয়াডাঙ্গা সাহিত্য পরিষদের সভাপতি ইকবাল আতাহার তাজ, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার সহসভাপতি রফিকুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক হামিদুর রহমান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চুয়াডাঙ্গা জেলা কমিটির সাবেক আহ্বায়ক আসলাম হোসেন অর্ক, ওয়ারিওর্স অফ জুলাইয়ের চুয়াডাঙ্গা জেলার যুগ্ম আহ্বায়ক হাসনা জাহান খুশবু, চুয়াডাঙ্গা অরিন্দম সাংস্কৃতিক সংগঠনের সভাপতি আলাউদ্দীন, চুয়াডাঙ্গা জেলা লেখক সংঘের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, সংলাপ সাংস্কৃতিক সংগঠনের সভাপতি নজির আহমেদ, বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী চুয়াডাঙ্গা জেলা সংসদের সভাপতি হাবীবী জহির রায়হান, সাধারণ সম্পাদক আদিল হোসেন, বাংলাদেশ প্রগতি লেখক সংঘ চুয়াডাঙ্গা জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজল মাহমুদ, অরিন্দম সাংস্কৃতিক সংগঠনের সংঙ্গীতশিল্পী ও সাধারণ সম্পাদক হিরন উর রশিদ শান্ত, রিসোর নির্বাহী পরিচালক জাহিদুল ইসলাম, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অরসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আশরাফুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান জোয়ার্দ্দার, সুবর্ণ মানব কল্যাণ সংস্থার নির্বাহী পরিচালক মিম্মা মিতা, জাহানারা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক জাহানারা খাতুন টগরসহ সজুন-সুশাসনের জন্য নাগরিক চুয়াডাঙ্গা জেলার কমিটির সদস্যবৃন্দ। সহযোগিতায় ছিলেন সুশাসনের জন্য নাগরিক চুয়াডাঙ্গার ডিস্ট্রিক ফ্যাসিলেটর মেহেরাব্বিন সানভী, সুজন বন্ধু সৌম্যজিতা শ্রুতি, আবু বকর সৈকত, নাজমুল আসলাম সামি, হাসিবুল ইসলাম শান্ত ও নাজমুল হক শান্ত। সুজন সাংবাদিক, শিক্ষক, ব্যবসায়ী, শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মোট ৮০ জন প্রতিনিধি এই সভায় তাঁদের মতামত ব্যক্ত করেন।
সভা শেষে গণতান্ত্রিক উত্তরণের লক্ষ্যে বেশ কিছু সুপারিশ উত্থাপন করা হয়। সুপারিশগুলোর মধ্যে উঠে আসে নির্বাচন কমিশনের পূর্ণ স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা, ভোটার তালিকা হালনাগাদ ও স্বচ্ছ ব্যবস্থাপনা জোরদার করা এবং নির্বাচনী সহিংসতা ও অনিয়ম রোধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা। এ ছাড়াও তরুণ ও নারী ভোটারদের অংশগ্রহণ বাড়াতে সচেতনতামূলক কর্মসূচি জোরদার করা, নাগরিক সমাজ ও গণমাধ্যমের অবাধ ও কার্যকর ভূমিকা নিশ্চিত করা এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সহনশীলতা ও সংলাপের সংস্কৃতি গড়ে তোলার আহ্বান জানানো হয়। চুয়াডাঙ্গার সচেতন নাগরিকদের এই স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ একটি স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনী পরিবেশ তৈরির প্রত্যাশাকে আরও জোরালো করেছে।
সভায় জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আহমেদ আলী বলেন, ২০২৬ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট অনুষ্ঠিত হবে। সংবিধানে কিছু সংস্কার আছে। জুলাই সনদের পক্ষে সম্মত থাকলে হ্যাঁ ভোট, সস্ম¥ত না থাকলে না ভোট প্রদান করতে পারবেন। প্রধানমন্ত্রী সর্বোচ্চ দুই দফায় ১০ বছর থাকতে পারবেন। জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করতে গণভোট হবে। নির্বাচনে প্রার্থীদের আচরণবিধি মেনে চলতে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। এবারের নির্বাচনে পোষ্টার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। হ্যান্ডবিল,  লিফলেট ও ব্যানার টানাতে পারবেন। তবে, পচনশীল হতে হবে। নির্বাচনী ক্যাস্প যত্রতত্র করা যাবে না। পৌরসভার প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি ও ইউনিয়নে ১টি ক্যাম্প করা যাবে। দুপুর ২ টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত ভোটে মাইকিং করা যাবে। প্রতীক বরাদ্দের পর প্রচারণা করতে পারবে। রাস্তা আটকিয়ে জনসভা করা যাবে না। উপঢোকন, অ্যাপায়ন ও আলোকসজ্জা করা যাবে না। তোরণ নির্মাণ করা ও কালো টাকা ব্যবহার করা যাবে না। জেলা তথ্য অফিস মাইকিং ও উঠান বৈঠক করে জনগণকে গণভোটের বিষয়ে সচেতন করছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *