আসমানখালীর নান্দবার গ্রামে বসতবাড়ির চলাচলের রাস্তা বন্ধ ও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্নের অভিযোগ

স্টাফ রিপোর্টার
আলমডাঙ্গা উপজেলার আসমানখালী ইউনিয়নের নান্দবার খালপাড়া গ্রামে একটি পরিবারের বসতবাড়ির চলাচলের রাস্তা জোরপূর্বক বন্ধ করে দেওয়া এবং বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার অভিযোগ উঠেছে প্রতিবেশীদের বিরুদ্ধে। পরিবার জানিয়েছেন- দীর্ঘদিন ধরে চলাচলের পথ না থাকায় তারা অবরুদ্ধ অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে। বর্তমানে সেলিনা আক্তার ও তার পরিবার অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে। তার স্বামী মোহাম্মদ আলী হোসেন হার্টের রোগী এবং কয়েক মাস আগে তার হার্টে রিং পরানো হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে তাদের অসহায় অবস্থায় দিন যাপন করতে হচ্ছে। পরিবারটি এক প্রকার গৃহবন্ধী।
এ বিষয়ে আলমডাঙ্গা থানায় অভিযোগ দিলে আসমানখালী পুলিশ ক্যাম্পের ইনর্চাজ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, বিএনপি নেতা ও সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে একাধিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। একপর্যায়ে সামাজিকভাবে অভিযুক্তরা ৬ ফুট রাস্তা দিতে সম্মত হয়ও।
গত ১০ অক্টোবর ২০২৫ তারিখে পুলিশ ও স্থানীয় ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে আমিন দ্বারা ৬ ফুট রাস্তা নির্ধারণ করে বুঝিয়ে দেওয়া হলেও পরে পুলিশ ও অন্যরা চলে গেলে অভিযুক্ত মোঃ মোস্তফা পুনরায় বাধা প্রদান করে এবং হুমকি দিয়ে ওই রাস্তাও বন্ধ করে দেয় বলে অভিযোগ করা হয়। রাস্তা স্থায়ীভাবে নিশ্চিত করার লক্ষ্যে মোছাঃ সেলিনা আক্তার ২০১০ সালে ১৪ নং নান্দবার মৌজায় দলিল নং-১১৮৩, খতিয়ান নং-২৯৪, দাগ নং-৫৩৭৬ অনুযায়ী ২শতক জমি ক্রয় করেন। ওই দাগে মোট ১১ শতক জমির মধ্যে তার মালিকানাধীন অংশ থাকা সত্ত্বেও অভিযুক্তরা কোনো স্বত্ব ছাড়াই জমিটি দখল করে রেখেছে বলে অভিযোগ করেন।
ভুক্তভোগী মোছাঃ সেলিনা আক্তার অভিযোগ করে জানান, একই গ্রামের মৃত আমির বিশ্বাসের ছেলে মোঃ মোস্তফা (৫০), মোঃ আশারেফ (৪৫), মোঃ ফয়েজ উদ্দীন (৫৭) ও তার ছেলে শিমুল হোসেন (৩৮) সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে তার বাড়ি থেকে বের হওয়ার একমাত্র রাস্তাটি বন্ধ করে রেখেছে। একই সঙ্গে তার বাড়ির বৈদ্যুতিক লাইনও কেটে দেওয়া হয়েছে। আমার স্বামী একজন হৃদরোগী এবং চার মাস আগে হার্টে রিং পরানো হয়েছে। বিদ্যুৎ ও চলাচলের রাস্তা না থাকায় গত ছয় মাস ধরে তারা বাধ্য হয়ে অন্যের বাড়িতে বসবাস করছেন। পাঁচ কন্যা সন্তানের পরিবারটি বর্তমানে চরম মানবেতর জীবনযাপন করছে।
তিনি আরও বলেন, এমন বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেতে এর আগে আলমডাঙ্গা থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। পরে ওই অভিযোগের প্রেক্ষিতে গাংনী পুলিশ ফাঁড়িতে স্থানী চেয়ারম্যান, মেম্বার ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতে প্রতিপক্ষরা রাস্তা দিতে রাজি হলেও পরে ওই রাস্তাও বন্ধ করে দিয়েছে।
ভুক্তভোগীর দাবি, ১৯৬৫ সালে জমি বিনিময়ের মাধ্যমে তারা বাংলাদেশে বসতি স্থাপন করেন। সে সময় বিনিময়কৃত সূত্রে তাদের বসতবাড়ি থেকে বের হওয়ার রাস্তা কানাই শাহার জমির ওপর দিয়ে ছিল। পরবর্তীতে কানাই শাহা ভারতে চলে গেলে অভিযুক্তরা জোরপূর্বক ওই রাস্তার জমি দখল করে চলাচল বন্ধ করে দেয়, যদিও তাদের কাছে জমির কোনো বৈধ কাগজপত্র নেই।
এ বিষয়ে অভিযুক্তরা বলেন, আমরা মিলমিশের মাধ্যমে রাস্তা দিতে চাই। তবে তাদের সঙ্গে আমাদের কোনো সময় সমঝোতা হয় না। আমাদের একটি জমি পৈতৃক সম্পত্তি এবং আরেকটি বিনিময়কৃত জমি। এই জমির মাঝখান দিয়ে রাস্তা দেওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তবে সমঝোতা হলে আমরা রাস্তা দিতে রাজি আছি। এ কথাও সত্য যে, এক সময় আমাদের জমির ওপর দিয়েই ওই পরিবার যাতায়াত করত। আরো বলেন, তারা সমঝোতায় আসতে চাই না, আইনের মাধমে রাস্তা নিতে চাই। এই কারনে আমাদের দীর্ঘদিনের সমস্যা সমাধান হয় না।
এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য সাইদুর রহমান বলেন, বিষয়টি সামাজিকভাবে সমাধানের জন্য একাধিকবার চেষ্টা করা হয়েছে। রাস্তা দেওয়ার বিষয়ে আগে সমঝোতা হলেও পরে আবার সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। এমকি তার বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগটিও বিছিন্ন করা হয়েছে। আমি ব্যক্তিগত ভাবে চাই দুই পারিবারের সমস্যাটি সমাধান হোক সেই বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে ইউনিয়ন পরিষদ। প্রয়োজন হলে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *