হাজী শামসুজ্জোহা বিশ্বাসের ১৫তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

স্টাফ রিপোর্টার

চুয়াডাঙ্গার মাটি ও মানুষের মাঝে আজো সমুজ্জ্বল এক সজ্জন ও দানশীল ব্যক্তিত্বের স্মৃতি হাজী শামসুজ্জোহা বিশ্বাস। ২০১০ সালের এই দিনে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করা অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা হাজী শামসুজ্জোহা বিশ্বাসের আজ ১৫তম মৃত্যুবার্ষিকী। তিনি কেবল একজন সরকারি কর্মকর্তাই ছিলেন না, বরং তাঁর সাদামাটা জীবনযাপন, সরল বাচনভঙ্গি এবং নিঃস্বার্থ দানশীলতার কারণে চুয়াডাঙ্গাবাসীর কাছে এক বিশেষ শ্রদ্ধার আসনে অধিষ্ঠিত ছিলেন। মরহুম হাজী শামসুজ্জোহা বিশ্বাস ছিলেন চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার খাদিমপুর ইউনিয়নের পাঁচকমলাপুর গ্রামের মৃত রবজেল আলী বিশ্বাসের ছেলে। পরবর্তীতে তিনি চুয়াডাঙ্গা শহরের মুক্তিপাড়ায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। তাঁর তিন কৃতী সন্তান—বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক আলহাজ্ব সাহিদুজ্জামান টরিক, এক সময়ের সাংবাদিক ও বর্তমান প্রবাসী ব্যবসায়ী আরিফুজ্জামান আরিফ এবং চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও ‘দৈনিক সময়ের সমীকরণ’-এর প্রকাশক-সম্পাদক শরীফুজ্জামান শরীফ তাঁদের পিতার স্মৃতি বহন করে চলছেন।

হাজী শামসুজ্জোহা বিশ্বাসের জীবনের সবচেয়ে মহৎ কীর্তি হলো শিক্ষা প্রসারে তাঁর অবদান। ২০০৩ সালের ৯ মে তিনি তাঁর গ্রামের বাড়িতে ‘পাঁচকমলাপুর দারুল উলুম হাফেজিয়া কওমি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি এই প্রতিষ্ঠানটির উন্নয়নে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছিলেন। বর্তমানে মাদ্রাসাটির নাম পরিবর্তন করে ‘হাজী শামসুজ্জোহা জামি’আ আরাবিয়া দারুল উলুম মাদ্রাসা রাখা হয়েছে, যা তাঁর স্বপ্নকে আজও বাঁচিয়ে রেখেছে।

২০১০ সালে হাজী শামসুজ্জোহা বিশ্বাসের মৃত্যুর পর তাঁর সুযোগ্য পুত্র সাহিদুজ্জামান টরিক মাদ্রাসাটির পরিচালকের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। পিতার সুস্বপ্নকে তিনি কেবল ধারণ করেননি, বরং আন্তরিকতা, ভালোবাসা, মেধা ও শ্রম দিয়ে সেটিকে নিয়ে গেছেন এক অনন্য উচ্চতায়।

পিতার স্বপ্নের প্রতিষ্ঠানটিকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার লক্ষ্যে সাহিদুজ্জামান টরিক চুয়াডাঙ্গায় নির্মাণ করেছেন তিন তারকা মানের হোটেল সাহিদ প্যালেস অ্যান্ড কনভেনশন সেন্টার। এই উদ্যোগের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হলো—সেখান থেকে আয়কৃত সম্পূর্ণ অর্থই মাদ্রাসার কার্যক্রমে ব্যয় করা হয়। তাঁর এই ব্যতিক্রমী পদক্ষেপ নিশ্চিত করেছে, মাদ্রাসাটি যেন দীর্ঘমেয়াদে আর্থিকভাবে শক্তিশালী থাকে। ২০১১ সালের ১ জানুয়ারি থেকে মাদ্রাসাটিতে ছাত্রদের জন্য লিল্লাহ বোর্ডিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়, যেখানে মাদ্রাসার সকল ছাত্র-শিক্ষকের মধ্যে বিনামূল্যে তিন বেলা খাবার সরবরাহসহ অন্যান্য সুবিধা নিশ্চিত করা হয়।

হাজী শামসুজ্জোহা বিশ্বাস আজ স্বশরীরে না থাকলেও, তাঁর প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসার মাধ্যমে হাজারো শিক্ষার্থীর মাঝে তাঁর আলো আজও প্রজ্জ্বলিত। তাঁর দানশীলতা ও শিক্ষা-প্রীতি তাঁর পরিবার ও এলাকাবাসীর কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *