মেহেরপুরে ১৩০ বছর বয়সেও আজিমন নেছার মেলেনি বয়স্ক ভাতার কার্ড!

বামন্দী (মেহেরপুর) প্রতিনিধি

একটি জরাজীর্ণ ঘর। নেই পরার মতো একটি ভালো কাপড়, ছেঁড়া কাথা গায় নোংরা সাতসাঁতে মেঝেতে শুয়ে আছে এক বৃদ্ধা। বলতে পারে না কথা, ইশারার মাধ্যমে বুঝে নিতে হয় কি বলতে চাচ্ছে। পরিবারের লোকজন বলছে তার বয়স ১৩০ বছর পার হয়েছে। ছলছল নয়নে তাকিয়ে থাকে সবার দিকে। তবে স্পষ্ট দেখতে পাননা তিনি। বলছিলাম মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার কাজিপুর গ্রামের আজিমন নেছার কথা। স্বামী খেদের আলী মারা গিয়েছেন অনেক আগেই। দুই নাতী নাতনীকে নিয়ে এখন তার সংসার। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে সে পায় না কোন সরকারি অনুদান, কপালে জোটেনি এখনো বয়স্ক ভাতার কার্ড। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা খোঁজখবর না নেওয়ার কারণেই কার্ড হয়নি বলে মনে করেন তার পরিবারের সদস্যরা। আজিমন নেছার নাতি শাহাবুদ্দিন বলেন, আমার বয়সও ৬৫ এর উপরে। তবে কখনো দেখিনি আমার দাদির সরকারি কোনো সহযোগিতা পেয়েছে। তার বয়স ১৩০ এর উপরে। অথচ আজ পর্যন্ত হয়নি বয়স্ক ভাতার কার্ড। কোন মেম্বার-চেয়ারম্যানও খোঁজ রাখে না। আমার দাদা মারা গেছে অনেক বছর হয়ে গেল। দাদি চরম কষ্টের মধ্যে দিয়েই জীবন কাটাচ্ছে একটি ভাঙাচোরা ঘরে। ছেলে মেয়ে বলতে আর কেউ নেই। আজিমন নেছার নাতনি রতনা খাতুন বলেন, আমার দাদি একটি দরাজীর্ণ ঘরে ছাগলের সাথে এক প্রকার বসবাস করে। টাকার অভাবে সারতে পারিনি ঘরখানা। আমিও চলতে পারি না তাই এদিক সেদিক থেকে যা পাই তাই নিয়ে এসে তাকে খাওয়ায়। সরকারি কোনো কিছুই পায়না। এত বয়স হয়েছে তবুও হয়নি বয়স্ক ভাতার কার্ড এর চেয়ে দুঃখ আর কি হতে পারে। আমার দাদি কথা বলতে পারেনা শুধু একটু ইশারার মাধ্যমেই বোঝাই।

স্থানীয়রা জানান, আজিমনের বয়স আমাদের জানামতে ১৩০ এর উপরে,তবে কেন এখনো হয়নি তার বয়স্ক ভাতার কার্ড তা আমাদের অজানা। আর কবে বা হবে তার বস্কো ভাতার কার্ড। এখানকার মেম্বার চেয়ারম্যানরা কোন খোঁজ খবর রাখে না বলে হয়তো তার এ অবস্থা।

স্থানীয় বাসিন্দা লাল্টু মিয়া বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে দেখে আসছি তিনি জরাজীর্ণ ঘরে পড়ে থাকেন। অত্যন্ত কষ্টেই মধ্য দিয়ে তার জীবন কাটে। তার ছেলে-মেয়ের ও স্বামী কেউ নেই। অনেক আগেই মারা গেছে।তার এক নাতনি তাকে দেখাশোনা করে। তাই সরকার যদি তার প্রতি সুদৃষ্টি দেয় তাহলে তার অনেক উপকার হবে।

আরেক স্থানীয় বাসিন্দ আন্টু হোসেন বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে দেখে আসছি এই জয়রাজীর্ণ ঘরেই তিনি অনেক কষ্টের মধ্যে দিয়ে বসবাস করছেন। তার বয়স ১৩০ পার হয়েছে। জনপ্রতিনিধিদের অবহেলার কারণেই এখনো হয়নি তার বয়স্ক ভাতার কার্ড।তাকে দেখভাল করে তার এক নাতনি সে অন্যের বাড়িতে কাজ করে যতটুকু পায় ততটুকু নিয়ে এসে তাকে খাওয়ায়।তবে এই মুহূর্তে তার সরকারি সকল সুবিধা পাওয়া জরুরী।

কাজীপুর ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ফুলচাঁদ আলী বলেন, আমি বিষয়টা একেবারে জানতাম না। কখনো আমার কাছে কেউ আসেওনি। আমি অতি দ্রুত তার বাড়ি যাব এবং গিয়ে খোঁজখবর নিয়ে সেটা দেখবো তার বয়স্ক ভাতার কার্ড হয়েছে কিনা। হতে পারে তার বয়স্ক ভাতার কার্ড থেকে অন্য কেউ টাকা তুলে নেয়। এমন হলে সেটাও আমি দেখবো। তাছাড়া তাকে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।

এ ব্যাপারে কাজীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মু. আলম হোসেন বলেন, তার এত বয়স হয়েছে তবে কেন যে বয়স্ক ভাতার কার্ড হয়নি এটা সত্যিই দুঃখজনক। তার যাতে দ্রুত বয়স্ক ভাতার কার্ড হয় সে ব্যাপারে পদক্ষেপ নেব। এছাড়া সরকারি সকল  সুযোগ-সুবিধা তাকে দেওয়া হবে।

গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার(ইউএনও) আনোয়ার হোসেন বলেন, আমরা ইতিমধ্যে বিষয়টি জানতে পেরেছি। আজিমন খাতুনের বয়স্ক ভাতার কার্ড হয়নি তবে বিষয়টা নিয়ে আমরা অতি দ্রুত কাজ করবো। তাছাড়া তাকে সার্বিক সহযোগিতাও করা হবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *