মার্কিন ডলারের দাম লাগামহীন


আজকের চুয়াডাঙ্গা ডেস্ক প্রকাশের সময় : অগাস্ট ১৩, ২০২২, ৯:৪৭ AM
মার্কিন ডলারের দাম লাগামহীন

দেশের খোলাবাজারে এক মার্কিন ডলারের বিক্রিমূল্য ১২০ টাকা। তারপরও চাহিদামাফিক পাওয়া যাচ্ছে না। লাগামহীন বেড়েই চলছে দাম। কোনোভাবেই তা নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। অভিযোগ আছে, কৃত্রিম সংকট তৈরি করে খোলাবাজারে দাম বাড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম ও দেশে ডলার আসার তুলনায় যাচ্ছে বেশি। তাই ডলারের বাজারে এমন অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে বিদেশগামী যাত্রী, ভোক্তা, ব্যবসায়ীদের ওপর।

রপ্তানি আয়ের তুলনায় উচ্চ আমদানি এবং রেমিটেন্স কমে যাওয়ায় গত কয়েক মাস ধরে বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে এমন অস্থিরতা চলছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রিসহ নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। ডলারের কারসাজি বন্ধ করতে বিভিন্ন মানি এক্সচেঞ্জে একাধিক টিম নিয়ে অভিযান পরিচালনা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ডলার কেনাবেচায় অনিয়মের অপরাধে গত সপ্তাহে পাঁচটি মানি একচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন স্থগিত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নয়টি প্রতিষ্ঠানকে সিলগালা করা হয়েছে। এছাড়াও ৪২টি প্রতিষ্ঠানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছে। এবং ডলার কারসাজির সাথে জড়িত দেশ-বিদেশি ছয় ব্যাংকের ট্রেজারি প্রধানকে অপসারণ করা হয়েছে। তার মধ্যে দেশি পাঁচটি ব্যাংক হলো- ব্র্যাক ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক এবং স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক। এরপরও ব্যাংক বা মানি এক্সচেঞ্জে ডলার নিয়ে কারসাজি থামছেই না।

 

বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলো অতিরিক্ত মুনাফা আদায় করতে গিয়ে ডলারের বাজার অস্থিতিশীল করে তুলছে। তাই নজরদারিতে রাখা হয়েছে বিভিন্ন ব্যাংককে।

বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, চলতি আগস্ট মাসের প্রথম ১০ দিনে দেশে ৮১ কো‌টি ১৩ লাখ (৮১৩ মিলিয়ন) মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। রেমিট্যান্স আনতে নানা প্রনোদনা ও সুবিধা দেয়ার পর ইতিবাচক সাড়া মিলছে। চলমান এই ধারা অব্যাহত থাকলে আগস্ট মাসে প্রবাসী আয়ের পরিমাণ ২৪৩ কোটি ডলার পর্যন্ত হতে পারে।

তথ্যমতে, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও বড় কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংক এই পরিস্থিতি সামাল দিতে পারলেও ছোট ব্যাংকগুলোর পরিস্থিতি নাজুক। ডলারের সংকট বেড়েই চলছে। আন্তব্যাংক লেনদেনে সোমবার সর্বশেষ ডলারের দর ছিল ৯৫ টাকা। সেই হিসেবে এক বছরে ডলারের দাম ১২ শতাংশ বেড়েছে।

 

কয়েক মাস ধরেই দেশের ডলারের বাজারে অস্থিরতা বিরাজমান। প্রতিদিনই বাড়ছে ডলারের দাম। এক্ষেত্রে সামনে আনা হচ্ছে নানা ধরনের অজুহাত। ব্যাংক বা মানি এক্সচেঞ্জে গিয়েও অনেকে চাহিদা অনুযায়ী পাচ্ছেন না ডলার। ডলারের পাশাপাশি ইউরো, পাউন্ডের দামও বেড়েছে। বুধবার সরেজমিন মতিঝিল-দিলকুশাসহ বিভিন্ন মানি এক্সচেঞ্জে গিয়ে দেখা যায় মার্কিন ডলারের সংকট। ডলার কিনতে আসা অনেকে অভিযোগ করছেন ডলার মজুদ করে বাড়তি দাম নেয়া হচ্ছে।

মতিঝিলের মানি এক্সচেঞ্জে উত্তরা থেকে ডলার কিনতে আসা মো. আরিফুল ইসলামের কথা হয় বিবার্তার। তিনি বলেন, খোলাবাজারে ডলারের দাম অতিরিক্ত নেয়া হচ্ছে। প্রতি ডলার বাংলাদেশী টাকায় ১২০ টাকা, যা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে অনেক কম। অথচ মুনাফালোভীরা আমাদের মত সাধারণ মানুষকে একপ্রকার জিম্মি করে ফেলেছে। আমাদেরও প্রয়োজন। তাই অনেকে অসাধুভাবে ডলার মজুদ করে বাড়তি দাম হাঁকিয়ে নিচ্ছেন। এইসব দেখার কেউ নেই।

ডলারের দাম বেশি কেন নিচ্ছেন এমন প্রশ্নে মানি এক্সচেঞ্জের ব্যবসায়ী মো. কামরুল হাসান বিবার্তাকে বলেন, বাজারে চাহিদার থেকে ডলার কম থাকায় অস্বাভাবিকভাবে দাম বেড়ে চলছে। দেশের বাজারে ডলার, পাউন্ড, ইউরোর যে চাহিদা তার ২০ শতাংশও ফ্লো নেই। আমরা বেশি দাম দিয়ে ডলার কিনেছি। বেশিরভাগ মানুষ বিদেশ যাবে যাদের ডলার প্রয়োজন। সবার চাহিদামত আমরা ডলার দিতেও পারছি না।

খোলা বাজারে ডলার বিক্রি করেন মো. শহিদুল ইসলাম। বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ডলার কিনে খোলাবাজারে বিক্রি করতেন তিনি। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান এবং ডলারে সংকটের কারণে আপাতত ব্যবসা বন্ধ রেখেছেন। তিনি বিবার্তাকে বলেন, খোলাবাজারে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের কারণে ডলার বিক্রি বন্ধ রেখেছি। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক থেকে অনেক বেশি দামে ডলার কিনতে হয়। বিক্রিতে তেমন লাভ নেই, আবার অভিযানের ভয় তো আছেই। তাছাড়া এখন ডলারের তীব্র সংকট। বিপুল চাহিদার ২০ শতাংশ ডলারও বাজারে নেই।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, অনেক অসাধু ব্যবসায়ী কম দামে ডলার কিনে মজুদ করে রেখেছেন। এখন এই সংকটের সুযোগ নিয়ে চড়া দামে বিক্রি করছেন। এমনকি ডলার কেনাবেচায় অনেকে ভিন্ন পথও অবলম্বন করছেন।

 

ডলারের বাজারে এমন অস্থিরতা নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তার সাথে কথা হয় বিবার্তার। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, ডলারের যোগান এখন একটু কম, এটাই মূল কারণ। বাংলাদেশ ব্যাংক আগের মত নিয়ন্ত্রণ করে না। অন্যদিকে, ক্যাশ ডলার আসলে বাংলাদেশ ব্যাংক মনিটরিং করতে পারে না। আর যারা কার্ব মার্কেটের ডিলার, রাস্তার পাশে বিক্রি করে, ব্যাংকের মধ্যে বিক্রি করে- তাদেরকে তো আমরা কিছু বলতে পারি না। তাদেরকে মাঝেমধ্যে আইনশৃংখলা বাহিনী ধরে আবার ছেড়ে দেয়। যাতে করে ডলারের দাম আরও নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। তাই ডলারের বাজারে এমন অস্থিরতা।

তিনি আরও বলেন, দেশের বাজারে ডলারের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধিতে বাংলাদেশ ব্যাংক এ নিয়ে কাজ করছে। আমরা একটা পলিসি নিয়ে কাজ করার চেষ্টা করছি, ‘উইথ দ্যা হেলফ অব আদার এজেন্সি’। বাংলাদেশ ব্যাংক এটা নিয়ে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। যাতে বাজারে ডলারের দাম নিয়ন্ত্রণে থাকে।

এই উর্ধ্বতন কর্মকর্তা আরও বলেন, দেশের সকল পত্রিকার রিপোর্টের ভিত্তিতে আমরা তথ্য সংগ্রহ করে দ্রুত আলোচনায় বসব। ডলার সংকটের মূল কারণ কি, কারা জড়িত এবং তাদের বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।

দেশের বাজারে ডলারের দাম আস্তে আস্তে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে। ডলার সংকট নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলামের সাথে কথা হয় বিবার্তার।

সিরাজুল ইসলাম বলেন, চাহিদার থেকে ক্যাশ ডলার কম থাকায় দেশে ডলারের বাজারে এমন অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। আবার ক্যাশ ডলারের ডিমান্ডও বেশি। ফলত ডলারের দাম বেড়েই চলছে। আশা করি অতি দ্রুতই ডলারের বাজারের এই অস্থিরতা কেটে যাবে।

আমাদের সবার চিন্তা চেতনায় শুধু ক্যাশ ডলার, ক্যাশ ডলার এমন মন্তব্য করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, দেশের বাইরে যারা যাবে তারা সামান্য ক্যাশ ডলার সাথে নিয়ে বাকিটা ক্রেডিট কার্ডে নিয়ে যেতে পারে। কিন্তু কেউ তা করছে না বাড়তি দাম দিয়ে ক্যাশ ডলার কিনছেন।

সিরাজুল ইসলাম আরও বলেন, দেশে ক্যাশ ডলারের যে চাহিদা তার চেয়ে হয়ত মার্কেটে ক্যাশ ডলার কম আসছে। যার কারণেই মূলত ডলারের বাজারে এমন অস্থিরতা দেখা দিয়েছে।

আর যেগুলো ব্যাংকের থ্রোতে আসছে সেগুলো তো এস্টির মাধ্যমে ইনপুটের জন্য চলে যাচ্ছে। আবার বিদেশ থেকে যারা দেশে আসছেন, তারা ক্যাশ ডলার কম নিয়ে আসছে। যার কারণে মার্কেটে যোগানের থেকে ডিমান্ড বেশি।
তিনি আরও বলেন, ডলারের অস্থিরতা নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের একাধিক টিম মাঠে কাজ করছে। ডলার কারসাজির সাথে জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনা হচ্ছে এবং সার্বিক পরিস্থিতি বাংলাদেশ ব্যাংকের নজরদারিতে আছে।

আজকের চুয়াডাঙ্গা এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আজকের চুয়াডাঙ্গা এর ফেইসবুক পেজ এ , আজকের চুয়াডাঙ্গা এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আজকের চুয়াডাঙ্গা ইউটিউব চ্যানেলে