গাজায় ছয় সপ্তাহে ত্রাণ নিতে যাওয়া ৭৯৮ জনকে হত্যা

অনলাইন ডেস্ক

গাজায় একমুঠো খাবারের আশায় ত্রাণকেন্দ্রে ছুটে যাওয়া ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলের নৃশংসতা থামছে না। গত ছয় সপ্তাহে ত্রাণকেন্দ্রে যাওয়া এমন অন্তত ৭৯৮ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। বিতর্কিত এই ত্রাণকেন্দ্রগুলো পরিচালনা করছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সমর্থিত সংস্থা গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ)।

গাজায় জিএইচএফ কার্যক্রম শুরু করে গত ২৬ মে। এর আগে টানা ১১ সপ্তাহ উপত্যকাটিতে ত্রাণ প্রবেশ বন্ধ রেখেছিল ইসরায়েল। জিএইচএফের ত্রাণকেন্দ্র এমন সব স্থানে গড়ে তোলা হয়েছে, যেখানে ইসরায়েলি সেনারা মোতায়েন রয়েছেন। সংস্থাটির দেওয়া খাবারের মান নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। শুরু থেকেই জিএইচএফের ত্রাণ কার্যক্রমের সমালোচনা করে আসছে জাতিসংঘ। গতকাল শুক্রবার সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তরের (ওএইচসিএইচআর) মুখপাত্র রাভিনা শামদাসানি বলেন, ‘২৭ মে থেকে ৭ জুলাই পর্যন্ত ৭৯৮ জনকে হত্যার খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ৬১৫ জনকে হত্যা করা হয়েছে জিএইচএফের ত্রাণগুলোর আশপাশে। আর ১৮৩ জনকে হত্যা করা হয়েছে ত্রাণ নিতে যাওয়ার পথে।’

ওএইচসিএইচআর জানিয়েছে, ত্রাণকেন্দ্রে যাওয়া ফিলিস্তিনিদের হত্যার তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে গাজার বিভিন্ন হাসপাতাল, কবরস্থান, ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ, এনজিও, নিহত ব্যক্তিদের পরিবারসহ বিভিন্ন সূত্র থেকে। হামলার ঘটনাগুলো পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ২৭ মে থেকে ত্রাণকেন্দ্রে খাবার সংগ্রহ করতে গিয়ে আহত ব্যক্তিদের বেশির ভাগের শরীরে গুলির আঘাত রয়েছে।

তবে ত্রাণ নিতে যাওয়া মানুষের ওপর গুলি চালানোর তথ্য নাকচ করে দিয়েছে জিএইচএপফ। সংস্থাটির একজন মুখপাত্রের দাবি, গাজায় জাতিসংঘ সংশ্লিষ্ট ত্রাণকেন্দ্রগুলোতেই সবচেয়ে ‘প্রাণঘাতী’ হামলার ঘটনা ঘটেছে। আর ইসরায়েল বলছে, ত্রাণ যেন হামাসের মতো সশস্ত্র গোষ্ঠীর হাতে না পড়ে, তা নিশ্চিত করতেই ত্রাণকেন্দ্রগুলোর কাছে ইসরায়েলি সেনাদের মোতায়েন করা হয়েছে।

‘কসম, আমার মেয়ে নিষ্পাপ ছিল’

২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় নির্বিচার মানুষ হত্যা করছে ইসরায়েল। গতকাল উপত্যকাটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া সবশেষ হিসাব অনুযায়ী, গত ২১ মাসে গাজায় ইসরায়েলের হামলায় প্রায় ৫৮ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। একই সময়ে আহত হয়েছেন প্রায় ১ লাখ ৩৮ হাজার মানুষ। ইসরায়েলের হামলায় নিহত ব্যক্তিদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু।

এমন পরিস্থিতিতে কাতারের রাজধানী দোহায় হামাস ও ইসরায়েলের প্রতিনিধিদের মধ্যে যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা চলছে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর বিষয়ে আশাবাদী তিনি। গাজায় ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতি হতে পারে। এই সময়ের মধ্যে দুই পক্ষ সংঘাত পুরোপুরি বন্ধের চেষ্টা চালাবে।

সংঘাত বন্ধের দিকে এগোনোর কথা বললেও বৃহস্পতিবারেই মধ্য গাজার দেইর আল-বালাহ এলাকায় একটি চিকিৎসাকেন্দ্রের কাছে ভয়াবহ হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। হামলায় ১০ শিশুসহ ১৬ জন নিহত হয়েছেন। একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, রক্তের ভেতরে কয়েকজন নারী ও শিশুর দেহ পড়ে আছে। অন্য একটি ভিডিওতে দেখা যায়, গাধায় টানা গাড়িতে করে শিশুদের নিথর দেহ নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

নিহত এক শিশুর মরদেহের পাশে বসে ছিলেন তার মা সামাহ আল-নোউরি। কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, ‘কসম, আমার মেয়ে কিছু করেনি। ও নিষ্পাপ ছিল। ও স্বপ্ন দেখত যুদ্ধ শেষ হবে, আবার স্কুলে যেতে পারবে। আমার মেয়ে তো কেবল এখানে চিকিৎসা নিচ্ছিল। কেন ওকে মেরে ফেলা হলো?’

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *