‘শাপলা’ প্রতীক পেতে দুই দলের মনস্তাত্ত্বিক লড়াই!

অনলাইন ডেস্ক

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নিবন্ধন পেতে রাজনৈতিক দলের করা আবেদন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে ইসি গঠিত কমিটি। কয়েকটি দল প্রতীক হিসেবে জাতীয় ফুল ‘শাপলা’ চেয়ে আবেদন করেছে। কিন্তু জাতীয় ফুলকে কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতীক হিসেবে বরাদ্দ দেওয়া হবে কিনা তা নিয়ে রয়েছে নানা সংশয়।

যদিও ইসির একটি সূত্র জানিয়েছে, নতুন প্রতীকের তালিকায় ‘শাপলা’ যুক্ত করার কথা ভাবছে নির্বাচন কমিশন। এমন তথ্যের পর দুটি রাজনৈতিক দল নাগরিক ঐক্য ও জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর গঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতাদের মধ্যে চলছে মনস্তাত্ত্বিক লড়াই।

এরই মাঝে ‘নতুন বাংলাদেশে’ আগের মতো সরকারি দল বলে কোনো সুযোগ-সুবিধা পাবে এমন বিষয় এখন নেই উল্লেখ করে প্রতীক বরাদ্দে যেন বঞ্চনা না হয় তা তুলে ধরেছে নাগরিক ঐক্যের একটি প্রতিনিধিদল। দলীয় প্রতীক হিসেবে শাপলাকে নাগরিক ঐক্যের জন্য সংরক্ষণের দাবি নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে বৈঠক করেছে তারা।

অন্যদিকে দলীয় প্রতীক হিসেবে শাপলা বরাদ্দ পাবে বলে আশাবাদী জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।

নতুন প্রতীক তালিকাভুক্ত হলে আগে আবেদন করায় শাপলা প্রতীক অবশ্যই নাগরিক ঐক্য পাবে বলে দাবি করেছে দলটি। তবে নতুন দল হিসেবে এনসিপি নিবন্ধন আবেদনের সময় প্রতীকটি চাওয়ায় উদ্বেগও জানিয়েছে নাগরিক ঐক্য।

গতকাল বুধবার বিকালে নাগরিক ঐক্যের সাংগঠনিক সম্পাদক সাকিব আনোয়ারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের প্রতিনিধিদল প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

পরে দলটির এ নেতা বলেন, ‘আমাদের একটা কনসার্নের জায়গা ছিল, প্রতীক পরিবর্তনের জন্য আমাদের আবেদন ছিল সেটা নিয়ে কথা বলতে এসেছি। ১৭ জুন আমাদের নাগরিক ঐক্যের প্রতীক কেটলি পরিবর্তন করে পছন্দের ক্রমানুসারে শাপলা ও দোয়েল দিয়েছিলাম।’

এখনো নতুন দলের নিবন্ধন চূড়ান্ত হয়নি। সেই নতুন প্রতীক বিধিমালায় যুক্ত হওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। এমন পরিস্থিতিতে নাগরিক ঐক্যের দাবি পর্যালোচনার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেন সাংগঠনিক সম্পাদক সাকিব আনোয়ার।

তিনি বলেন, ‘কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এখন পর্যন্ত কে নিবন্ধন পাবে, কে নিবন্ধন পাবে না সেটা নির্ধারিত হয়নি। যদি নতুন প্রতীক শাপলা গেজেটভুক্ত হয়, সেখানে আমরা যেহেতু আগে আবেদন করেছি, আমাদের সেক্ষেত্রে বরাদ্দ দেওয়া হবে। আমরা অবশ্যই বঞ্চিত হবো না, সেটা আমরা যেমন প্রত্যাশা করি, তেমনি কমিশনও নিশ্চিত করেছে।’

সিইসির সঙ্গে নাগরিক ঐক্যের প্রতিনিধিদলের বৈঠকের সময় নির্বাচন কমিশন সচিবও উপস্থিত ছিলেন। নাগরিক ঐক্যের প্রতিনিধিদলে ছিলেন নারী ও শিশুবিষয়ক কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক ফেরদৌসী আক্তার ও দপ্তর সম্পাদক মহিদুজ্জামান মহিদ।

তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮, ২০২৪ সালের নির্বাচনের আগে নাগরিক ঐক্য নিবন্ধন আবেদন করেছিল। তখন নিবন্ধন না পাওয়ায় পছন্দের প্রতীকও পায়নি। বরং ওই সময় অন্যদলগুলো নিবন্ধন পেয়ে তাদের পছন্দের প্রতীক পেয়ে যায়। অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে সেপ্টেম্বরে নিবন্ধন পায় নাগরিক ঐক্য।

দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক সাকিব আনোয়ারের বলেন, ‘আমরা যখন নিবন্ধন পাই, তখন আর আমরা পছন্দ অনুযায়ী প্রতীক পাইনি। এ বিবেচনায় আমরা গত ১৭ জুন প্রতীক পরিবর্তনের জন্য আবেদন করি এবং পছন্দের ক্রম শাপলা ও দোয়েল চাই।’

এখন নতুন করে ১৪৪টি দলের ১৪৭টি আবেদন এসেছে। এর মধ্যে নিবন্ধন আবেদনের শেষদিন ২২ জুন একটি দল জাতীয় নাগরিক কমিটি (এনসিপি) দলীয় প্রতীক শাপলা চেয়েছে।

তিনি বলেন, ‘আমাদের কনসার্নের জায়গা হচ্ছে, গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমনভাবে তথ্য দেখেছি কমিশন তাদের শাপলা প্রতীক বরাদ্দ দিয়ে দিয়েছে। কনসার্নটা আমরা সিইসিকে জানাতে এসেছি। নিবন্ধনের কাজ শেষ না করে এ ধরনের বিষয় আসাটা যৌক্তিক নয়।’

তিনি বলেন, ‘নিবন্ধনের প্রক্রিয়াটা জটিল ও নিবন্ধনশর্ত পূরণ যাচাইয়ের আগে বিধিমালায় সব মিলিয়ে শতাধিক প্রতীক যুক্ত হচ্ছে। কমিশন জানিয়েছে, বিদ্যমান ৬৯ থেকে এ সংখ্যা আরও বাড়বে।’

নাগরিক ঐক্যের সাংগঠনিক সম্পাদক বলেন, ‘সিইসি ও সচিবকে আমরা জানিয়েছি, নতুন প্রতীক শাপলা গেজেটভুক্ত হয় কিংবা দোয়েল যুক্ত হয়; সেক্ষেত্রে ১৭ জুন যেহেতু আমরা আবেদন করেছি এবং পরে একই মার্কা নিয়ে আরেকটা আবেদন হলেও শাপলা নাগরিক ঐক্যেরই প্রাপ্য। সেটার যেন ব্যত্যয় না ঘটে।’

‘নতুন বাংলাদেশে’ আওয়ামী লীগ আমলের মতো সরকারি দল বলে কোনো সুযোগ-সুবিধা পাবেন এমন বিষয় এখন নেই বলে সিইসির কাছে তুলে ধরা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *