চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়েছেন চুয়াডাঙ্গা একাডেমি মোড় থেকে বাসটার্মিনাল পর্যন্ত সড়কে চলাচলকারী হাজারো মানুষ, সড়কের উভয় পাশের প্রায় এক কিলোমিটার রাস্তার কোন চিহ্নই নেই!

স্টাফ রিপোর্টার
ফ্লাইওভারের নির্মাণকাজ শেষ না হওয়ায় সামান্য বৃষ্টিতেই চুয়াডাঙ্গা একাডেমি মোড় থেকে বাসটার্মিনাল পর্যন্ত এলাকা যেনো দুর্ভোগের আরেক নাম হয়ে উঠেছে। এতে উভয় পাশের প্রায় এক কিলোমিটার এলাকায় প্রতিনিয়ত ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন মানুষ। বিশেষ করে এখন বর্ষায় এ ভোগান্তি আরও বেড়ে গেছে। কাঁদা-পানিতে একাকার সড়ক দিয়ে চলাচলকারী যানবাহন ও সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ পৌঁছেছে চরমে। একটু বৃষ্টি হলেই রাস্তায় পানি জমে সৃষ্টি হচ্ছে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা ও কাদা। এর ফলে রিকশা, অটোরিকশা এবং মোটরসাইকেলের মতো ছোট যানবাহনগুলোর চলাচল অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এতে করে চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়েছেন সড়কে চলাচলকারী হাজারো মানুষ
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, এক কিলোমিটার আপ-ডাউন সড়কে রাস্তার কোন চিহ্নই নেই। ইট, পাথর উঠে গিয়ে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। পথচারীদের পায়ে হেটে চলা দুরূহ হয়ে পড়েছে। পুরো রাস্তা ঘিরে চলছে ফ্লাইওভার নির্মাণ। গত দুই বছরেও ব্যস্ততম এ সড়কে তৈরি করা হয়নি সার্ভিস লেন। এলাকাবাসী প্রশাসনকে একাধিকবার সার্ভিস লেন নির্মাণ করার দাবী জানালেও তাতে কাজ হয়নি। এতে বিক্ষুদ্ধ হয়ে উঠেছে এই এলাকায় বসবাসকারী অর্ধলক্ষ মানুষ। জমি অধিগ্রহণ না করে ফ্লাইওভার নির্মাণ কাজ চলমান রেখেছে। রেলগেটের কাছে নতুন করে একটি পিলার নির্মাণ করায় বাস-ট্রাক চলাচল আরো কঠিন হয়ে পড়েছে। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় যাতায়াতের প্রধান রুট হলো এই সড়কটি। এছাড়াও সদর উপজেলার বেশিরভাগ মানুষই এ সড়কটি ব্যবহার করে থাকে। খানাখন্দে ভরা সড়কে ঝুঁকি নিয়েই প্রতিদিন একাডেমি মোড় থেকে বাস টার্মিনাল পর্যন্ত চলাচলা করছে যানবহনসহ সাধারণ মানুষ। ঘটছে দুর্ঘটনাও।
চুয়াডাঙ্গা শহরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সড়ক একাডেমি মোড় থেকে বাসটার্মিনাল পর্যন্ত এক কিলোমিটার দীর্ঘ অংশ এখন রূপ নিয়েছে চলাচলের দুঃস্বপ্নে। ফ্লাইওভার নির্মাণকাজ চলায় পুরো রাস্তা জুড়ে সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় গর্ত, উঠে গেছে ইট-পাথর। এর মধ্যে কোথাও নেই রোড মার্কিং বা কোন নির্দেশনা। ফলে এই সড়কে প্রতিদিন চলাচলকারী হাজারো মানুষ পড়ছেন চরম ভোগান্তিতে। পথচারী থেকে শুরু করে রিকশা, মোটরসাইকেল ও বড় যানবাহনের চালকরা সকলেই জানাচ্ছেন, তারা প্রায় প্রতিদিনই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন অথবা আতঙ্ক নিয়ে চলাচল করছেন।
চালকরা জানান, প্রতিদিন এই কাদাময় পথ পাড়ি দিয়ে যাত্রী পরিবহন করতে গিয়ে তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে, প্রায়শই যানবাহন কাদায় আটকে যাচ্ছে।
ট্রাকচালক শামীম বলেন “এই সড়কে দীর্ঘদিন ধরে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি। ভারি যানবাহন চলাচল তো প্রায় বন্ধই হয়ে গেছে। ছোট গর্তগুলো এখন বড় হয়ে গেছে, যে কোনো সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।”
মোটরসাইকেল চালক মুস্তাফা জানান, “বছরের পর বছর আমরা এই দুর্ভোগ সহ্য করছি। গর্ত এড়াতে গিয়ে একাধিকবার বাইক উল্টে পড়ে গেছি। দ্রুত সার্ভিস লেন এবং রাস্তা ঠিক না করলে চলাফেরা বন্ধ হয়ে যাবে।”
চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের এক শিক্ষার্থী সুমাইয়া বলেন “প্রতিদিন কলেজে যেতে গিয়ে আমাদের পোশাক নোংরা হয়ে যায়, সময়মতো পৌঁছাতে পারি না। রাস্তা দিয়ে হাঁটাও যায় না, গাড়িতেও যাওয়া যায় না।”
অটোচালক আজিজুল হক বলেন, এখন অটো চালানোই দায়। যাত্রীরা গর্তে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যায়। কেউ উঠতেও চায় না।
স্থানীয় ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম বলেন,“এই সড়ক শহরের অন্যতম বাণিজ্যিক এলাকা। প্রতিদিন শত শত ট্রাক, পিকআপ চলাচল করে। কিন্তু এখন মালামাল আনতে-নিতে ভয় লাগে। সড়কের কারণে ব্যবসাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।”
সড়ক ও জনপদ বিভাগ (সওজ) সূত্রে জানা গেছে, চলমান ফ্লাইওভার নির্মাণ প্রকল্পে ৬০ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি সার্ভিস লেন তৈরির প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে, তবে এখনো অর্থ বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। পাশাপাশি জমি অধিগ্রহণের বিষয়েও জটিলতা থাকায় প্রকল্প বাস্তবায়নে দেরি হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের ১২ আগস্ট ৮৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ফ্লাইওভার নির্মাণকাজের উদ্বোধন করা হয়। একদফা সময় বাড়িয়ে ২০২৫ সালের ৩০ জুন প্রকল্প সমাপ্তির সময়সীমা নির্ধারণ করা হলেও বর্তমানে কাজের অগ্রগতি মাত্র ৫৫ শতাংশ। এতে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ হওয়া নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, বারবার দাবি জানানো সত্ত্বেও রাস্তার সংস্কার এর কোনো উদ্যোগ নেয়নি কর্তৃপক্ষ। তারা অবিলম্বে জরুরি ভিত্তিতে সার্ভিস লেন নির্মাণ এবং রাস্তাটি ব্যবহারের উপযোগী করে তোলার দাবি জানিয়েছেন।র্
াঢ্য র‌্যালি ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *