নিজ বোনকে শ্বাসরোধ ও গলাকেটে হত্যা করে নাটক সাজান ভাই


আজকের চুয়াডাঙ্গা ডেস্ক প্রকাশের সময় : অক্টোবর ২৩, ২০২৩, ১১:২৬ PM
নিজ বোনকে শ্বাসরোধ ও গলাকেটে হত্যা করে নাটক সাজান ভাই

চুয়াডাঙ্গার দর্শনায় মঞ্জুরা খাতুন ওরফে মিম (৩০) খুনের ঘটনার প্রকৃত রহস্য উদ্ঘাটন করেছে পুলিশ। আপন বোনকে খুন করে নিজেকে বাঁচাতে ভাই আলমগীর কবীর খুনের পর একটি নাটক সাজান এবং পুলিশ ও সংবাদকর্মীদেরকে সেই সাজানো নাটক বর্ণনা করেন। সোমবার (২৩ অেক্টোবর) বিকেল সাড়ে চারটায় চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে সাংবাদিক সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. নাজিম উদ্দীন আল আজাদ পিপিএম-সেবা ঘটনার বিবরণে হত্যাকাণ্ডের বিষটি জানান। এদিকে, এ ঘটনায় দর্শনা থানায় করা মামালার পর পুলিশ বিভিন্ন তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার ও স্থানীয় লোকজনের বক্তব্য পর্যালোচনা করে হত্যা ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ভাই আলমগীর কবীরকে (৩২) পুলিশ হেফাজতে নেয়। পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে আলমগীর কবীর নিজ বোনকে খুনের পর ঘটনাকে উল্টে দিতে ও নিজেই নিজেকে জখম করে এবং বাড়ি থেকে তুলে নেওয়ার নাটক সাজানোর কথা স্বীকার করেন।

সাংবাদিক সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. নাজিম উদ্দীন আল আজাদ পিপিএম-সেবা লিখিত বক্তব্যে জানান, গত শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে বোন মিমকে বাড়ির পাশে আমবাগানে ডেকে নিয়ে যান আলমগীর। সেখানে কথাকাটাকাটির একপর্যায়ে মিমের ওড়না দিয়ে গলায় পেঁচিয়ে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে বোনের মরদেহ বেগুন খেতে নিয়ে যায়। সেখানে ধারালো দা দিয়ে মিমের গলা কেটে মৃত্যু নিশ্চিত করে। পরে ঘটনা অন্যদিকে প্রবাহিত করার জন্য আলমগীর ওই দা দিয়ে নিজের মাথায় আঘাত করে, নিজের হাত-পা বেঁধে চিৎকার করতে থাকেন। চিৎকার শুনে স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করলে আলমগীর সে সময় নাটক সাজিয়ে বলেন, কয়েকজন দুর্বৃত্ত তাকে কুপিয়ে জখম করে তার বোন মঞ্জুরা খাতুন মিমকে অপহরণ করে নিয়ে গেছে। সে সময় পুলিশ তার প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠায়। সোমবার সকালে এ ঘটনায় নিহত মঞ্জুরা খাতুন মিমের স্বামী থানায় মামলা করেন।

সাংবাদিক সম্মেলনে আরও জানায়, মামলার পর চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ্ আল-মামুন এই হত্যা ঘটনার সাথে জড়িত আসামি গ্রেপ্তারসহ প্রকৃত রহস্য উদ্ঘাটনের জন্য জেলা গোয়েন্দা শাখা ও দর্শনা থানাকে নির্দেশ প্রদান করেন। পরে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) মো. নাজিম উদ্দীন আল আজাদ এবং সহকারী পুলিশ সুপার (দামুড়হুদা সার্কেল) জাকিয়া সুলতানা ও জেলা গোয়েন্দা শাখার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ফেরদৌস ওয়াহিদের সহযোগিতায় সাব-ইন্সপেক্টর শহিদুল বাশার, সাজ্জাদ হোসেন, মুহিদ হাসান, সহকারী সাব-ইন্সপেক্টর রজিবুল হক সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে মামলার বাদী ও আশপাশের লোকজনের বক্তব্য পর্যালোচনা করেন। এবং তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে বর্ণিত ঘটনার সাথে জড়িত আসামি আলমগীর কবীরকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে আলমগীর স্বীকার করেন যে, ভিকটিম মিম আক্তার মঞ্জুরা তার আপন ছোট বোন। সে বিবাহের পর থেকেই স্বামীসহ একত্রে তাদের বাড়িতে বসবাস করত। এরই মধ্যে আপন খালাতো বোনের স্বামীর সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্কে জড়িয়ে পড়লে আলমগীর তাকে পরকীয়া থেকে ফিরে আসতে বারবার সতর্ক করে। কিন্তু মিম সে সম্পর্ক থেকে ফিরে না এসে মোবাইল ফোনে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রাখায় রাগের বশবর্তী হয়ে আলমগীর তাকে হত্যার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা মতো গত শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে বোনকে কৌশলে বাড়ির পাশের আমবাগানে ডেকে নিয়ে যান আলমগীর। এসময় কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে তিনি নিজের বোনকে তারই ওঁড়না দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। পরে লাশ বেগুন খেতে নিয়ে গিয়ে ধারালো দা দিয়ে গলাকেটে মৃত্যু নিশ্চিত করেন আলমগীর। ঘটনা অন্যদিকে প্রবাহিত করার জন্য এরপর তিনি ওই দা দিয়ে নিজের মাথায় নিজেই তিনটি পোচ দেন এবং আমগাছে থাকা রশি নিয়ে নিজের হাত-পা বেঁধে চিৎকার শুরু করেন।

এ ঘটনায় নিজেকে দায়ী করে সোমবার আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছেন আলমগীর। এর আগে সোমবার সকালে আলমগীরকে আসামি করে দর্শনা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন বোন জামাই সুরুজ মিয়া। অন্যদিকে, সোমবার বেলা দুইটায় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল মর্গে হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. ফাতেহ আকরামের নেতৃত্বে মিমের লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। ময়নাতদন্ত শেষ লাশ পরিবারের সদস্যদের নিকট হস্তান্তর করে পুলিশ।

আজকের চুয়াডাঙ্গা এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আজকের চুয়াডাঙ্গা এর ফেইসবুক পেজ এ , আজকের চুয়াডাঙ্গা এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আজকের চুয়াডাঙ্গা ইউটিউব চ্যানেলে