আলমডাঙ্গা অফিস
আলমডাঙ্গা উপজেলার হারদি ইউনিয়নের কাটাভাঁঙ্গা ও উদয়পুর গ্রামে অনুষ্ঠিত হলো ঐতিহ্যবাহী বৈশাখী মেলা। প্রতিবছরের মতো এবারও বৈশাখ মাসের শেষ মঙ্গলবার এ মেলাকে ঘিরে সৃষ্টি হয় উৎসবমুখর পরিবেশ। হাজারো মানুষের ঢল নামে গ্রামীণ এই ঐতিহ্যবাহী আয়োজনে।স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, শত বছরের বেশি সময় ধরে চলে আসছে এই মেলার আয়োজন। সময়ের বিবর্তনে অনেক কিছুই বদলেছে, কিন্তু বদলায়নি কাটাভাঁঙ্গা গ্রামের এই বৈশাখী মেলার চিত্র। গ্রামের প্রবীণরা জানান, পূর্বপুরুষদের সময় থেকে এ মেলা হয়ে আসছে গ্রামীণ মিলনমেলা ও আনন্দ-উৎসবের প্রতীক হিসেবে।মেলায় বসে হরেক রকমের দোকান। কাঠের খেলনা, মাটির তৈরি সামগ্রী, মিষ্টান্ন, গ্রামীণ হস্তশিল্প, নারীদের জন্য শাড়ি ও অলংকার, শিশুদের খেলনা, ঝালমুড়ি থেকে শুরু করে নাগরদোলা পর্যন্ত সবই পাওয়া যায় এ মেলায়।মিষ্টির দোকান নিয়ে আসা মিজান জানান, “আমি কয়েক রকমের মিষ্টি এনেছি—চমচম, রসগোল্লা, লাড্ডু, সন্দেশ। মেলার এই একটা দিনে ভালো বেচাকেনা হয়। লোকজন খুশি মনে মিষ্টি কেনে, আর আমরা বিক্রি করে আনন্দ পাই।”ছোট্ট শিশু থেকে শুরু করে শতবর্ষী বৃদ্ধ পর্যন্ত—সব বয়সের নারী-পুরুষ মেলায় অংশগ্রহণ করে। শিশুদের আনন্দ, কিশোরদের কৌতূহল, নারীদের সাজসজ্জা ও পুরুষদের আড্ডা—সব মিলিয়ে মেলাটি পরিণত হয় একটি প্রাণবন্ত উৎসবে।মেলায় ঘুরতে আসা ৬ বছরের ছোট্ট শিশু তাবাসসুম নাজিফা জানান, “আমি বাবার সাথে এসেছি। বেলুন নিয়েছি, মাটির পুতুল কিনেছি। নাগরদোলায় উঠেছি, খুব ভালো লাগছে!” শিশুর মুখে এমন সরল আনন্দভরা উক্তি যেন মেলার প্রাণ।মেলায় আগত এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “আমাদের এই মেলাটা শুধু কেনাবেচার জায়গা না, এটা আমাদের সংস্কৃতির একটা বড় অংশ। বছরের এই একটা দিন সবাই পরিবার-পরিজন নিয়ে চলে আসে।”নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যরা জানান, মেলাকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে পর্যাপ্ত সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। সার্বিক নিরাপত্তা ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ।মেলা কমিটির সভাপতি ফরিদ হোসেন বলেন, “কাটাভাঁঙ্গা গ্রামের এই বৈশাখী মেলা আমাদের গর্ব। আমরা চেষ্টা করছি এই ঐতিহ্যকে আরও সুসংগঠিত করে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য ধরে রাখতে।” একদিনব্যাপী এই মেলাটি শুধু একটি গ্রামীণ উৎসবই নয়, এটি হয়ে উঠেছে ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও জনসম্পৃক্ততার এক অনন্য উদাহরণ।
