উইগ্রো নামের কৃষিভিত্তিক কেম্পানীর বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ তুলেছেন আলমডাঙ্গার ভেদামারী গ্রামের কৃষকরা


আলমডাঙ্গা অফিস

উইগ্রো নামের একটি কৃষিভিত্তিক কেম্পানীর বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ তুলেছেন আলমডাঙ্গার ভেদামারী গ্রামের কৃষকরা। ওই কোম্পানীর প্রলোভনে পড়ে ব্যাংক লোন নিয়ে তাদের দেওয়া সার বীজ সংগ্রহ করে চাষাবাদ করলেও ফলন হয়নি আশানুরুপ। একদিকে কৃষকরা চাষে হয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত অন্যদিক ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে ঘুরতে হচ্ছে। ফলে ভুক্তভোগী কৃষকরা পড়েছেন বিপাকে।
জানা গেছে, এবছর ভুট্টা আবাদের মৌসুমে উইগ্রো নামের একটি কৃষি ভিত্তিক কোম্পানীর কয়েকজন প্রতিনিধি গ্রামে আসেন। খেজুরতলা ও ভেদামারী এই দুই গ্রামের মানুষকে জড়ো করে তারা মিটিং করেন। সেখানে কৃষকদের বোঝানো হয় ভুট্রা চাষের খরচের জন্য ব্যাংক লোন নেওয়া থেকে শুরু করে উন্নত বীজ সার এনে দেবে। এতে ভুট্টায় ভালো ফলন হবে। তাদের এই প্রলোভনে পড়ে ভেদামারী গ্রামের কৃষক রাসেল পারভেজ, মানোয়ার হোসেন, রোকনুজ্জামান, আব্দুর রাজ্জাক, জিয়াউর রহমান, ঝন্টু রহমান, আব্দুল হান্নান, জনি আহম্মেদ, মনজুর রহমান, আনিসুর রহমান, ইমন আলী, মন্টুর রহমান ভুট্টা চাষের জন্য কোম্পানীর সাথে চুক্তি করেন। উইগ্রো কোম্পানী ১২ কৃষকের প্রত্যেককে ব্যাংক থেকে ৯০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা ঋণ করিয়ে দেন। তাদের কৃষি বীমাও করান। এদিকে ব্যাংক থেকে লোন করিয়ে দেবার সময়ই প্রত্যেক কৃষকের কাছ থেকে কেটে নেন ৩০ হাজার টাকা। লোন দেওয়ার সময় কৃষকদের সাদা চেকে সই করিয়ে নেওয়া হয়। লোনের বাকি টাকা থেকে আরলি কিং নামের বীজের প্যাকেট ও সার দেওয়া হয়। বলা হয় বিঘা প্রতি ৫০ মণ ভুট্টা হবে। ১২ কৃষকের প্রত্যেকে ৪ বিঘা করে জমিতে আরলি কিং ভুট্রার বীজ বপণ করেন। কোম্পানীর নির্দেশনা অনুযায়ী চাষ করেন কৃষকরা। কয়েক মাস যেতেই মাঠে ভুট্রা কাটা শুরু হয়। কৃষকরা দেখেন বিঘা প্রতি ২০/২২ মণ ভুট্রা ফলন হয়েছে। এতো অল্প ফলন দেখে কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েন। তারা একের পর এক ফোন দিলেও কোম্পানীর কেউ ফোন ধরছেন না বলে তাদের অভিযোগ।
ক্ষতিগ্রস্ত আরেক কৃষক ঝন্টু রহমান বলেন, মাটির সাথে বিশ্বাস করে চাষ করি, কিন্তু মানুষ এত বড় ফাঁদ পেতে বসে থাকবে, ভাবিনি কখনো।” তার এখন একটাই চাওয়া ক্ষতিপূরণ আর বিচার। যেন আর কোনো কৃষক এমন সর্বনাশের মুখোমুখি না হয়।
কৃষক আব্দুল হান্নান বলেন, প্রতিবছর ধার করে হলেও চাষ করি, কিন্তু এবার ভাবলাম একটু আধুনিক পদ্ধতিতে করব। উচ্চফলনশীল জাত। প্রতি বিঘায় ৪০–/ ৪৫ মণ ফলন হবে। আবার বাজারে দাম কমলেও তারা ভালো দামে কিনবে। তাই সবার মত আমিও ৪ বিঘা ভুট্টা আবাদ করেছিলাম।”সেই স্বপ্নের শুরু, আর আজকের বাস্তবতা একেবারে বিপরীত মেরুতে। মাঠে গিয়ে দেখা যায়, আব্দুল হান্নানের চার বিঘা জমির ভুট্টাক্ষেতের অর্ধেক গাছই বাতাসে পড়ে গেছে। ফলন হয়েছে বিঘা প্রতি মাত্র ২০-২২ মণ। এত কম ফলন জীবনে দেখিনি। বীজটাই ভালো ছিল না।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক রাসেল পারভেজের অভিযোগ, উইগ্রো কোম্পানি তাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। বীমার টাকা কেটে নেওয়া হলেও কোনো ক্ষতিপূরণ পাওয়া যায়নি। এখন কোম্পানির মোবাইল নম্বরেও আর যোগাযোগ করা যাচ্ছে না।
“ফোনে রিং যায়, কিন্তু কেউ ধরে না।আমরা যে ক্ষতিগ্রস্ত, সেটা জানার পর থেকেই আর দেখা নেই কোম্পানির লোকজনের।”
এই অবস্থায় দিশেহারা হয়ে গত শুক্রবার মানববন্ধন করেন ভেদামারী গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত ১২ জন কৃষক। ভেদামারী মাঠে নিজেদের ক্ষতিগ্রস্ত ভূট্টাক্ষেতের পাশে দাঁড়িয়ে তারা কোম্পানির বিরুদ্ধে তদন্ত ও ক্ষতিপূরণের দাবিতে স্লোগান দেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *