চুয়াডাঙ্গায় নবান্নের আমেজে আমন ধান কাটা-মাড়াইয়ে ব্যস্ত চাষীরা


আজকের চুয়াডাঙ্গা ➤ নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশের সময় : নভেম্বর ৯, ২০২৩, ৭:১৯ PM
চুয়াডাঙ্গায় নবান্নের আমেজে আমন ধান কাটা-মাড়াইয়ে ব্যস্ত চাষীরা

বিকেলের মৃদু বাতাসে দোল খাচ্ছে সোনালি ধানের শিষ। হেমন্তের সকালে ধানের শিষে জমে থাকা মুক্তার দানার মতো শিশিরবিন্দু জানান দিচ্ছে নবান্নের আগমনি বার্তা। নতুন ধান ঘরে তোলার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে কৃষকের ঘরে ঘরে। নতুন ধানের ঘ্রাণ একটু আগেভাগেই পাওয়ায় অন্য রকম আনন্দ বয়ে যাচ্ছে চুয়াডাঙ্গার কৃষকদের মধ্যে।

কৃষক ধান কেটে আঁটি বেঁধে, কেউ মাথায় করে, আবার কেউ পরিবহনে করে বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছেন। বাড়ির উঠানে চলছে ধান মাড়াইয়ের কাজ। এসব ধান নিয়ে কৃষকের যেমন ব্যস্ততা, তেমনি আনন্দও লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

চুয়াডাঙ্গা জেলা কৃষি বিভাগ জানায়, চলতি বছর আমন চাষে প্রতিকূল আবহাওয়া মোকাবিলা করতে হয়েছে কৃষকদের। কিন্তু বর্তমানে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় নির্বিঘ্নে ধান কাটা, মাড়াই ও শুকানোর কাজ করতে পারছেন কৃষাণ-কৃষাণীরা। মাঠজুড়ে সোনালি ধানের ম’ম গন্ধে মনের আনন্দে কাজ করছেন তাঁরা। কথা বলার মতো যেন ফুরসত নেই তাঁদের।

জেলার কৃষকরা বলছেন, প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যেও ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে কিছু এলাকায় ধানে পোকা লেগে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন কৃষকরা। অগ্রহায়ণ মাসে পুরো ধান কাটা শুরু হলেও আগাম জাতের বিভিন্ন ধান কার্তিকের মাঝামাঝি সময়ে কাটা শুরু হয়েছে।

জীবননগর উপজেলার কৃষক আশরাফুল ইসলাম জানান, চলতি মৌসুমে তিনি দেড় বিঘা জমিতে আমন ধান চাষ করেছেন। ধান কাটা শুরু করেছেন। আগামী ১০ দিনের মধ্যে সব ধান ঘরে তুলতে পারবেন।

দামুড়হুদা উপজেলার আরেক কৃষক রমজান আলী বলেন, ‘ধার-দেনা করে এ মৌসুমে ৫০ শতক জমিতে ধানের আবাদ করেছিলাম। ফলনও ভালো হয়েছে। ধান তোলা শেষ হলে বিক্রি করে ধার-দেনা মিটিয়ে যা থাকবে, তা দিয়েই সংসার চালাব।’

রমজান আলী আরও বলেন, ‘প্রতি বছর ধান তোলার সময় দাম কমে যায়। ধানের দাম স্বাভাবিক থাকলে এবার ঋণ শোধ করতে সমস্যা হবে না।’

জীবননগর উপজেলার ধানের আড়ৎদার জসিম উদ্দিন জানান, বর্তমানে নতুন ও পুরোনো ধানের আলাদা আলাদা বাজার দর চলছে। নতুন খাটো বাবু ধান প্রতি মণ ১১৬০ টাকা, স্বর্ণ ধান ১১২০-৩০ টাকা, পুরোনো রডমিনি ধান ১৩০০ টাকা ও রাজশাহী মিনি ১৪৭০-৮০ টাকা পর্যন্ত কেনা হচ্ছে। তিনি আরও জানান, বাজারে নতুন ধান যেভাবে উঠছে, তাতে ধানের দাম আরও কিছুটা কমবে।

চুয়াডাঙ্গা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিভাস চন্দ্র সাহা জানান, এ বছর জেলার চার উপজেলায় ৩৭ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে আমনের আবাদ করা হয়েছে।

এর মধ্যে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় ৬ হাজার ২৮০ হেক্টর, আলমডাঙ্গা উপজেলায় ১৬ হাজার ৫২৪ হেক্টর, দামুড়হুদা উপজেলায় ৭ হাজার ৪৫০ হেক্টর ও জীবননগর উপজেলায় ৬ হাজার ৪৪৬ হেক্টর জমিতে আমন ধানের আবাদ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং পোকামাকড়ের আক্রমণ কম থাকায় ভালো ফলনও হয়েছে।

এদিকে, মৌসুম শুরু হলেও কষ্টে দিনযাপন করছেন ধান কাটার শ্রমিকরা। ধান কাটার মজুরি নিয়ে সন্তোষ নন তাঁরা। তাদের দাবি, বর্তমানে যে হারে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বেড়েছে, তাতে করে এই মজুরি দিয়ে তাদের সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

ধানকাটা শ্রমিক ইশাবুল জানান, ‘বর্তমানে দিনমজুর খেটে সংসার চালানো দায় হয়ে পড়েছে। বাজারে সবকিছুর দাম বেড়েছে। কিন্তু আমাদের পারিশ্রমিক বাড়েনি। কোনো রকম নুনভাত খেয়ে বেঁচে আছি। আর গরুর মাংস তো ঈদে ছাড়া চোখেই দেখি না।’

আজকের চুয়াডাঙ্গা এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আজকের চুয়াডাঙ্গা এর ফেইসবুক পেজ এ , আজকের চুয়াডাঙ্গা এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আজকের চুয়াডাঙ্গা ইউটিউব চ্যানেলে