আজকের চুয়াডাঙ্গা ডেস্ক: ২০২৬ সালে নির্ধারিত কাগজে বিনা মূল্যের পাঠ্যবই ছাপা নিশ্চিত করতে কাগজে জলছাপ দেওয়ার উদ্যোগ নিলেও তা বাস্তবায়ন সম্ভব হবে কিনা তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। দেশের কাগজকলগুলোর হঠাৎ করে এই ব্যবস্থায় যাওয়ার সক্ষমতা নেই। তাছাড়া নতুন করে এই ব্যবস্থায় যেতে হলে বাড়তি অর্থ খরচ করতে হবে কাগজকলগুলোকে।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) জানায়, যথাসময়ে মানসম্মত পাঠ্যবই ছাপার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা এড়াতে জলছাপযুক্ত কাগজে পাঠ্যবই ছাপার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। তবে জলছাপযুক্ত কাগজে ২০২৬ সালে পাঠ্যবই ছাপা সম্ভব হবে কিনা তা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না।
এনসিটিবি সূত্রে জানা গেছে, পাঠ্যবইয়ের মান নিয়ে বিভিন্ন সময় নানান অভিযোগ ওঠে। এর মধ্যে কাগজের মান নিয়ে সবচেয়ে বেশি সমালোচনা হয়। সরকার নির্ধারিত কাগজে মুদ্রণ ব্যবসায়ীরা যাতে পাঠ্যবই ছাপতে বাধ্য হন সে কারণে কাগজে জলছাপযুক্ত পাঠ্যবই ছাপার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। ২০২৬ সালের পাঠ্যবই ছাপার ক্ষেত্রে জলছাপযুক্ত অফ-হোয়াইট কাগজে সমস্ত বই ছাপার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি একটি বৈঠক করে এনসিটিবি। বেশিরভাগ মুদ্রণ প্রতিষ্ঠান জলছাপযুক্ত কাগজে বই ছাপার পক্ষে মতামত দেন। তবে আপত্তি উঠে কাগজকলগুলোর পক্ষ থেকে। আর পাঠ্যবই ছাপতে আগে থেকেই প্রস্তুতি সম্পন্ন করারও পরিকল্পনা করে এনসিটিবি।
জানতে চাইলে ক্রিয়েটিভস পেপার মিলসের পরিচালক ফিরোজ আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বাংলাদেশের বিদ্যমান মেশিনগুলোতে এগুলো করা যাবে না। জলছাপ করতে হলে দেশের বাইরে থেকে করে আনতে হবে। আমরা সচিবকে বলে এসেছি, ন্যাচারাল কালার কাগজে বই ছাপতে, এই কাগজগুলো বাইরে বিক্রি হবে না। বই ছাপতে বাড়তি খরচ করার প্রয়োজন হবে না।
এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা উদ্যোগ নিয়েছিলাম জলছাপযুক্ত কাগজে সব পাঠ্যবই ছাপার। তাহলে কাগজ ব্যবহারের ক্ষেত্রে কেউ অনিয়ম করার সুযোগ পাবে না। কিন্তু কাগজকলগুলো বলছে, জলছাপ দিতে তিন কোটি টাকা বাড়তি খরচ হবে। সে কারণে আগামী ২০২৬ সালের পাঠ্যবইয়ে ছাপা সম্ভব হবে কিনা তা এখনই বলা যাচ্ছে না।
জলছাপ দেওয়ার বিষয়ে এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. রিয়াজুল হাসান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘চীন থেকে সহজেই জলছাপ দিয়ে আনা সম্ভব। তবে দেশীয় কাগজকলগুলো বলছে, অতিরিক্ত খরচ হবে। ফলে এ বিষয়টি চূড়ান্ত করা সম্ভব হবে কিনা বলা যাচ্ছে না।
এদিকে, যথাসময়ে মানসম্মত পাঠ্যবই ছাপার ব্যবস্থা নিতে মুদ্রণ শিল্প মালিকদের ওপর বেশ কিছু শর্ত আরোপ করতে চায় এনসিটিবি। পাঠ্যবই বাইন্ডিংয়ের ক্ষেত্রে শর্ত আরোপের বিষয়ে এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান বলেন, বই ভাঁজ করার মেশিন যাদের থাকবে তারা বেশি বই ছাপার সুযোগ পাবে। পাঠ্যবই বাইন্ডিং করতে প্রতিবছর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়, সময়ক্ষেপণ হয় পাঠ্যবই সরবরাহ করতে। বই ভাঁজ করার মেশিন থাকলে সে সমস্যা তৈরি হবে না।’
উল্লেখ্য, ২০১০ সাল থেকে প্রথম থেকে দশম শ্রেণির পাঠ্যবই বিনামূল্যে তুলে দেওয়া শুরু করে সরকার। বছরের প্রথম দিন পাঠ্যবই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়ার রেওয়াজ তৈরি হয়। তবে এই প্রথমবার ২০২৫ সালে যথাসময়ে পাঠ্যবই সরবরাহে বিঘ্ন ঘটে।