মহিমান্বিত মহান বিজয় দিবস আজ


আজকের চুয়াডাঙ্গা ➤ নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশের সময় : ডিসেম্বর ১৬, ২০২৩, ১২:২৮ AM
মহিমান্বিত মহান বিজয় দিবস আজ

বাঙালি জাতির চিরদিনের গৌরব, বীরত্ব ও আত্মদানে মহিমান্বিত অর্জন মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের দিন আজ। ৯ মাস রক্তক্ষয়ী মরণপণ যুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি ঘাতক সেনাবাহিনী অবনত মস্তকে ঢাকার ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানের সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যান) গ্লানিময় আত্মসমর্পণে বাধ্য হয়েছিল। আজ বীরের জাতি হিসেবে বাঙালির আত্মপ্রকাশের দিন, বিশ্ব মানচিত্রে লাল-সবুজের পতাকা তুলে ধরার দিন।

আজ অদম্য বাঙালি জাতির আত্মঅহঙ্কারের বিজয় দিবস। আজ বেদনামথিত আনন্দের দিন। আজ অসাম্প্রদায়িক চেতনার বিজয় মিছিলে একাত্ম হয়ে রঙধনু আবেগের বিচ্ছুরণ ছড়ানোর দিন। ‘তলাবিহীন ঝুঁড়ি’র খেতাব দিয়ে যে বাংলাদেশকে দাবিয়ে রাখতে চেয়েছিল সাম্রাজ্যবাদী পশ্চিমা শক্তি, আজ সে বাংলাদেশের মাথা তুলে বুক উঁচিয়ে ‘আমরাও পারি’ বলার অনন্য দিন।

বিজয়ের ৫২তম বছরে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের কাছে উন্নয়নের রোল মডেল। যে বীর সন্তানদের প্রাণের বিনিময়ে এই পতাকা ও মানচিত্র এসেছে, তাদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানানোর মধ্য দিয়েই এই দিবসের মহিমা প্রকাশ পাবে।

১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করার পরও ক্ষমতা হস্তান্তর না করে পশ্চিম পাকিস্তানিরা ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করে। এরই এক পর্যায়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে ঘুমন্ত নিরীহ নিরস্ত্র সাধারণ বাঙালিদের ওপর চালায় মানব ইতিহাসের ঘৃণ্যতম গণহত্যা। বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করা হয় তার ধানমন্ডির বাসভবন থেকে।

এর আগেই তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে হানাদারদের প্রতিরোধের আহ্বান জানান। একাত্তর সালে বাঙালির অবিস্মরণীয় বিজয়ের পেছনের ইতিহাস সংগ্রাম ও সাহসিকতার। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ’৬৬ সালের ছয় দফা, ’৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের ধারাবাহিকতায় ১৯৭০ সালের নির্বাচন ছিল অনন্য এক মাইলফলক।

১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বিশাল জনসমুদ্রে বাঙালির মহান নেতা ও মহাকাব্যের প্রণেতা বঙ্গবন্ধু বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা দেন ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। মনে রাখবা রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরও দেব। তবু এদেশকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাআল্লাহ।’

এই একটি মাত্র উচ্চারণে যেন বাঙালি সত্যিকার দিকনির্দেশনা পেয়ে যায়। এই স্লোগান জনগণের স্বাধীনতার স্পৃহাকে প্রবলভাবে উজ্জীবিত করে তোলে। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দীর্ঘ ৯ মাস মুক্তিযুদ্ধ শেষে ৩০ লাখ শহীদের রক্ত, আড়াই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রম আর বিপুল ক্ষয়ক্ষতির বিনিময়ে অর্জিত হয় চিরকাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা। মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় মিত্রবাহিনীর পরাক্রমের কাছে মাথা নত করে পাকিস্তানি ঘাতক দল। পৃথিবীর বুকে ৫২ বছর আগের এই দিনে অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন বাংলাদেশের। সমস্বরে একটি ধ্বনি নতুন বার্তা ছড়িয়ে দেয় বিশ্বজুড়ে ‘জয়বাংলা’ বাংলার জয়, পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে, রক্ত লাল, রক্ত লাল, রক্ত লাল।

বাঙালির চিরগৌরবের দিনে আজ সকাল থেকেই সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে নামবে সাধারণ মানুষের ঢল। একাত্তরের বীরশহীদদের শ্রদ্ধা জানাবেন তারা। আজ সরকারি ছুটি। রাজধানীর পাড়া-মহল্লা, সড়কের মোড়ে মোড়ে বাজবে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ আর মুক্তির অবিস্মরণীয় গান। বাড়ির ছাদের কার্নিশে, অফিস-আদালত, দোকানপাটে, অনেক যানবাহনে উড়বে লাল-সবুজ পতাকা। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে দেওয়া পৃথক বাণীতে দেশবাসীকে বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

জাতীয় পর্যায়ের কর্মসূচি অনুযায়ী আজ ঢাকায় প্রত্যুষে ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসটির সূচনা হবে। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এরপর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীর নেতৃত্বে বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। বাংলাদেশে অবস্থনরত বিদেশি কূটনীতিক, মুক্তিযুদ্ধে মিত্রবাহিনীর সদস্য হিসেবে অংশগ্রহণকারী আমন্ত্রিত ভারতীয় সেনাবাহিনীর সদস্য এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের জনগণ পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন। এরপর শ্রদ্ধা জানানো হবে রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে।

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, বাংলা একাডেমি, জাতীয় জাদুঘর, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, বাংলাদেশ শিশু একাডেমিসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক আলোচনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শিশুদের চিত্রাঙ্কন, রচনা ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা এবং মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনের আয়োজন করবে। বিজয় দিবস উপলক্ষে জাতীয় পর্যায় এবং জেলা ও উপজেলায় ‘জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ ও ডিজিটাল প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া মহানগর, জেলা ও উপজেলায় বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং শহীদ পরিবারের সদস্যদের জন্য সংবর্ধনা অনুষ্ঠান আয়োজন করা হবে।

বিজয় দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে সংবাদপত্রগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করবে আজ। ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া মাসব্যাপী মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালা প্রচার করবে। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোয় দেশের শান্তি, সমৃদ্ধি ও অগ্রগতি কামনা করে বিশেষ দোয়া ও উপাসনার আয়োজন করা হবে। এতিমখানা, বৃদ্ধাশ্রম, হাসপাতাল, জেলখানা, শিশু বিকাশ কেন্দ্রসহ অনুরূপ প্রতিষ্ঠানে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হবে।

দেশের সব শিশুপার্ক ও জাদুঘর বিনাটিকিটে সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে এবং সিনেমা হলে বিনামূল্যে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র প্রদর্শনী হবে। মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), জাতীয় পার্টিসহ সব রাজনৈতিক দল। এছাড়া বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন গ্রহণ করেছে নানা কর্মসূচি।

আজকের চুয়াডাঙ্গা এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আজকের চুয়াডাঙ্গা এর ফেইসবুক পেজ এ , আজকের চুয়াডাঙ্গা এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আজকের চুয়াডাঙ্গা ইউটিউব চ্যানেলে