পুরুষের স্তন ক্যান্সার; উড়িয়ে দেবার বিষয় নয় মোটেই!


আজকের চুয়াডাঙ্গা ডেস্ক প্রকাশের সময় : অগাস্ট ১৩, ২০২২, ১০:১৯ AM
পুরুষের স্তন ক্যান্সার; উড়িয়ে দেবার বিষয় নয় মোটেই!

ক্যানসারে আক্রান্তের সংখ্যা বিশ্বব্যাপী বেড়েই চলেছে। বিশ্বে প্রতি ৬টি মৃত্যুর মধ্যে অন্তত একটি মৃত্যুর কারণ হলো ক্যানসার। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালে পুরো বিশ্বে শুধু ক্যানসার আক্রান্ত হয়েই মৃত্যু হয়েছে ৯.৬ মিলিয়ন মানুষের। এর মধ্যে ২২ শতাংশ ক্যানসারে মৃত্যুর জন্য দায়ী তামাক।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, পুরুষদের মধ্যে ঠোঁট, ফুসফুস, পাকস্থলীর ক্যানসারে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। অন্যদিকে মহিলাদের ক্ষেত্রে আবার স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা সর্বাধিক। তবে স্তন ক্যানসার যে শুধু নারীদেরই হচ্ছে তা কিন্তু নয়, পুরুষদের শরীরেও থাবা বসাতে পারে এই ক্যানসার।

সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) তথ্য মতে, বয়সের সঙ্গে সঙ্গেই পুরুষের স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে। বেশিরভাগ স্তন ক্যানসারের রোগীই ৫০ বছর বয়সের পরে আক্রান্ত হন। এ কারণে নিয়মিত স্তন স্ক্রিনিং করা জরুরি। ফলে পুরুষদের মধ্যে স্তন ক্যানসার প্রাথমিক অবস্থায় সনাক্ত করা সম্ভব।

পুরুষের স্তন ক্যান্সার বিরল হলেও কিন্তু এমন নয় যে এটি হয়ই না। সম্ভাবনা কম থাকলেও এটি হতেই পারে। তাই পুরুষের স্তন ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনাকে একেবারে উড়িয়ে দেওয়া উচিত নয়। এ জন্য পুরুষের স্তন ক্যান্সারের লক্ষণ ও উপসর্গ সম্পর্কে নিজেকে সচেতন করা উচিত। জানুন পুরুষের স্তন ক্যান্সার কীভাবে বুঝবেন—

গবেষণায় দেখা গেছে, মধ্য ও পূর্ব আফ্রিকার পুরুষদের মধ্যে স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনাই বেশি। যকৃতে সংক্রমণ থেকেই তাদের স্তন ক্যানসার হয়। চিকিৎসকরা মূলত তিনটি কারণকেই এর জন্য দায়ী করেছেন।

১। জেনেটিকভাবে অনেক পুরুষের শরীরে এই রোগের জীবাণু থাকতে পারে। প্রায় ১৫-২০ শতাংশ পুরুষ বংশানুক্রমিকভাবেই স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হন।

যেসব পুরুষের শরীরে অস্বাভাবিক বিআরসিএ-১ বা বিআরসিএ-২ জিন আছে তাদের স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে।

২। শরীরে ইস্ট্রোজেন ও অ্যান্ড্রেজেনের অনুপাতের ভারসাম্যহীনতার কারণেও পুরুষদের স্তন ক্যানসার হতে পারে। একই সঙ্গে গাজা সেবন, থাইরয়েড, ওবেসিটি, যকৃতের কর্মহীনতার কারণেই পুরুষদের স্তন ক্যানসারের সম্ভাবনা বাড়ে।

৩। অনেক সময় পুরুষের অণ্ডোকোষও তাদের শরীরে স্তন ক্যানসারের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

পুরুষের স্তন ক্যান্সারের লক্ষণ ও উপসর্গ

* কোনো একটি স্তনে মাংসপিন্ড তৈরী হওয়া। যদিও এই মাংসপিন্ড অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ব্যথাহীন হয়। অন্যদিকে, গাইন্যাকোম্যাস্টিয়া নামক আরেক ধরনের অবস্থায় পুরুষদেহের স্তনগ্রন্থিতে একধরণের ক্যান্সারবিহীন পিন্ড তৈরী হয়, যার ফলে শরীরের ওই অংশ ফুলে ওঠে ও আকারে বৃদ্ধি পায়।
* স্তনবৃন্ত সংকুচিত হয়ে যায়, স্তনবৃন্ত বা নিপলে ঘা দেখা দেয়, স্তনবৃন্ত থেকে পুঁজ নিঃসৃত হয়।

যদি ক্যান্সার শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে, তবে যে উপসর্গগুলি দেখা দেয়, সেগুলি হল:
* হাড়ে ব্যথা
* লিম্ফ নোড বা লসিকাগ্রন্থি ফুলে ওঠা
* ক্ষিদে কমে যাওয়া ও বমি ভাব
* জন্ডিস

পুরুষের স্তন ক্যান্সার নিরূপণ
শারীরিক পরীক্ষা নিরীক্ষা: এই রোগ নিরূপণের জন্য চিকিৎসক স্তনগ্রন্থিতে অস্বাভাবিক বৃদ্ধি এবং লসিকাগ্রন্থি ফুলে উঠেছে কিনা পরীক্ষা করে দেখবেন।

ম্যামোগ্রাম: এটি একধরনের এক্স-রে পরীক্ষা, যা স্তনগ্রন্থিতে ক্যান্সারের নির্দেশক যেকোনো পরিবর্তন চিহ্নিত করতে সাহায্য করে।

আল্ট্রাসাউন্ড: এই পরীক্ষায় উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন শব্দতরঙ্গের মাধ্যমে স্তনগ্রন্থির অভ্যন্তরের ছবি তোলা যায়, যা থেকে ঐ অঙ্গের অবস্থা বোঝা সম্ভব হয়।

বায়োপসি: এই পরীক্ষার মাধম্যে আক্রান্ত অংশের কিছু নমুনা সংগ্ৰহ করে গবেষণাগারে পরীক্ষা করে দেখা হয় যে তাতে ক্যানসারের কোষ রয়েছে কিনা।

পুরুষের স্তন ক্যান্সারের চিকিৎসা

ক্যান্সারের বর্তমান পরিস্থিতি, স্তর বা স্টেজ এবং গুরুত্ব অনুযায়ী ওর চিকিৎসা ব্যবস্থা নির্ধারণ করা হয়। পুরুষদের স্তন ক্যানসারের ক্ষেত্রে চিকিৎসকরা সংক্রামক টিস্যুগুলোকে অপারেশন করে বাদ দিয়ে দেন। এছাড়া কেমোথেরাপি ও রেডিয়েশন থেরাপিতে স্তন ক্যানসার সারানো যায়।

এই রোগের জন্য উপলব্ধ চিকিৎসা পদ্ধতিগুলি হল নিম্নরূপ:

সার্জারি বা অপারেশন
ক্যান্সার আক্রান্ত অংশ বাদ দেবার জন্য ম্যাস্টেক্টমি নামক অপারেশন করা হয়। এই অপারেশনে স্তনবৃন্ত ও তার আশেপাশের অংশের সম্পূর্ণ স্তনগ্রন্থি কেটে বাদ দিয়ে দেওয়া হয়।

কেমোথেরাপি
কেমোথেরাপি হল একটি অতি প্রচলিত ক্যান্সারের চিকিৎসা পদ্ধতি, যা ক্যান্সার সৃষ্টিকারী কোষগুলির দ্রুত বিভাজন ও বৃদ্ধির হার রোধ করে। এইভাবে কোষগুলির দ্রুত বিভাজন ও অস্বাভাবিক বৃদ্ধির হারকে নিয়ন্ত্রণ করে কেমোথেরাপিতে ব্যবহৃত ওষুধগুলি সারা শরীরে ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়া থেকে আটকায়।

যদিও কেমোথেরাপির বেশ কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে, তা সত্ত্বেও এটি ক্যান্সারের চিকিৎসার ক্ষেত্রে সর্বাধিক প্রচলিত পদ্ধতি। এই চিকিৎসা পদ্ধতি রেডিয়েশন বা ক্যান্সারের অপারেশনের চাইতে আলাদা। কারণ, রেডিয়েশন থেরাপি বা অপারেশন ক্যান্সারে আক্রান্ত কোষগুলিকে তাদের নির্দিষ্ট স্থানে লক্ষ্য করে চিকিৎসা করে। অন্যদিকে, কেমোথেরাপির ওষুধ মেটাস্টেসিস পর্যায়ে থাকা অর্থাৎ দেহের অন্যান্য অংশে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়া ক্যান্সার সেলগুলিকেও ধংস করতে সক্ষম।

সূত্র: এবিপি/জি নিউজ/মায়োক্লিনিক

আজকের চুয়াডাঙ্গা এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আজকের চুয়াডাঙ্গা এর ফেইসবুক পেজ এ , আজকের চুয়াডাঙ্গা এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আজকের চুয়াডাঙ্গা ইউটিউব চ্যানেলে