চুয়াডাঙ্গায় কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগ, তিন মাসের সন্তানের পিতৃপরিচয়ের দাবি


আজকের চুয়াডাঙ্গা ➤ নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশের সময় : ডিসেম্বর ১৭, ২০২৩, ১০:৩৭ AM
চুয়াডাঙ্গায় কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগ, তিন মাসের সন্তানের পিতৃপরিচয়ের দাবি

চুয়াডাঙ্গায় তিন মাস বয়সী সন্তানের পিতৃপরিচয়ের দাবি তুলেছেন ধর্ষণে অন্তঃসত্ত্বা হওয়া এক কিশোরী (১৫)। সন্তানের পিতৃপরিচয় ও স্ত্রীর সম্মান পেতে আইনি সহায়তা নিতে ইতোমধ্যে চুয়াডাঙ্গা পলাশপাড়ার মানবতা ফাউন্ডেশন বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী কিশোরী।

লোকলজ্জায় ওই কিশোরী তার সন্তানকে বাড়ির বাইরেও বের করতে পারছেন না। দরিদ্র রাজমিস্ত্রি পিতার ওপর এখন বোঝা হয়ে উঠেছেন ওই কিশোরী ও তার নবাগত সন্তান।

ভুক্তভোগী পরিবারটির অভিযোগ, চুয়াডাঙ্গা শহরের মাছপট্টি এলাকার পলাশের ছেলে আকাশের ধর্ষণের ফলে ওই কিশোরী অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। গত ২৩ সেপ্টেম্বর চুয়াডাঙ্গা শহরের নিউ মদিনা ক্লিনিকে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে একটি সুত্র সন্তান জন্ম দেয় ওই কিশোরী।

শনিবার (১৬ ডিসেম্বর) রাতে ভুক্তভোগী কিশোরীর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ছোট্ট একটি ঘরে সন্তানকে কোলে নিয়ে বসে আছেন ওই কিশোরী। পাশে ছিল কিশোরীর বাবা-মা।

ভুক্তভোগীর কিশোরীর সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘২০২২ সালের ১০ নভেম্বর চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার সাতগাড়িতে আমার মেজো বোনের বাড়ি বেড়াতে গিয়েছিলাম। সেখানে প্রতিবেশী বীরুর স্ত্রী বেলি খাতুনের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। পরদিন তিনি আমাকে মার্কেটে নিয়ে যান। ফিরতে রাত হয়ে গেলে আমি বাড়ি যেতে চাইলেও বেলি খাতুন রাতে তাদের বাড়িতেই আমাকে থাকতে বলেন। এসময় তিনি আমার কোনো কথা না শুনেই আমাদের বাড়িতে ফোন দিয়ে জানায় রাত হয়ে গেছে, আপনাদের মেয়ে সকালে বাড়িতে চলে যাবে।

রাতে ওই বাড়িতেই ছিলাম। একসময় প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে বাইরে বের হলে বেলি খাতুন ও তার ছেলে হৃদয় আমাকে জোরপূর্বক আকাশের ঘরে ঢুকিয়ে দেয়। আকাশ সম্পর্কে হৃদয়ের চাচাতো ভাই। ঘরে নিয়ে আকাশ আমাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে এবং বিষয়টি কাউকে না জানাতে বিভিন্নভাবে হুমকি-ধামকি দেয়।

সকালে বাড়িতে এসে আমি আমার মাকে ঘটনা খুলে বলি। এরপর বাবা—মা বিষয়টি আকাশের পরিবারকে জানালে এবং বিয়ের কথা বললে তারা প্রাণনাশের হুমকি দেয়। এভাবে সময় যায়, বুঝতে পারি আমার গর্ভে সন্তান এসেছে। সন্তানের বিষয়ে জানালে আকাশ গর্ভপাত না করলে আমার আরও ক্ষতি করবে বলে হুমকি দেয়। এভাবেই গত ২৩ সেপ্টেম্বরে আমার একটি পুত্র সন্তান হয়।’

ওই কিশোরী আরও বলেন, ‘আকাশ এখনও আমার সন্তানের পরিচয় দেয়নি। আইনি সহায়তার জন্য মানবতা ফাউন্ডেশনে অভিযোগ করেছি। আমাকে বিয়ে করে এবং সন্তানের পিতৃ পরিচয়ের দাবি জানাচ্ছি। বিয়ে না করলে তার ফাঁসি চাই আমি।’

ভুক্তেভোগী কিশোরীর মা বলেন, ‘আমার মেয়ের বয়স কম। তার কোলে সন্তান দেখে প্রতিবেশীরা সবাই জামাইয়ের কথা জিজ্ঞাসা করে। লোকলজ্জার ভয়ে কাউকেই বলতে পারি না। এই সন্তানকে নিয়ে খুবই মানবেতর জীবনযাপন করছি। আমি চাই আকাশ আমার মেয়েকে বিয়ে করুক। আর বিয়ে না করলে আইনি পদক্ষেপ নিব এবং তার ফাঁসির দাবি করব।’

এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত আকাশের ব্যক্তিগত নম্বরে যোগাযোগ করা হলে অপরপ্রান্ত থেকে একজন নিজেকে আকাশের ছোট ভাই মুক্ত বলে পরিচয় দেয়। আকাশের সঙ্গে ঘটনাটি নিয়ে কথা বলতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ভাইয়া পাশের ঘরে ঘুমাচ্ছে। আমি ছোট মানুষ এসব বলতে পারব না। তবে এতটুকু জানি, ঝামেলাটি মেটানোর জন্য মেয়েদের বাড়িতে যোগাযোগ করেছে।’ এসময় প্রতিবেদক আকাশের নিকট থেকে ঘটনাটি সম্পর্কে জানতে চাইলে মুক্ত বলেন, আচ্ছা ভাইয়াকে ডেকে দিচ্ছি বলেই তিনি ফোন কেটে দেন।

এ বিষয়ে মানবতা ফাউন্ডেশনর নির্বাহী পরিচালক অ্যাড. মানি খন্দকার বলেন, ‘কিশোরীসহ তার পরিবারের সদস্যরা আইনি সহায়তা নিতে আমার কার্যালয়ে এসেছিলেন। কিশোরী লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। ধর্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও তার সন্তানের পিতৃ স্বীকৃতির বিষয়ে মামলা দায়েরসহ সকল ধরনের সহযোগিতা করা হবে। অভিযুক্ত যতই প্রভাবশালী হোক, আইনের হাত থেকে রক্ষা পাবে না।’

চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) নাজিম উদ্দিন আল আজাদ, পিপিএম বলেন, ‘ওই কিশোরী চাইলে আমরা সর্বোচ্চ সহযোগিতা করব। কিছু প্রসেসিং থাকে। আদালতের দারস্ত হতে হবে। এরপর সন্তানের পিতৃ পরিচয়ের দাবি করলে আমরা ডিএনএ টেস্ট করাবো।’

আজকের চুয়াডাঙ্গা এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আজকের চুয়াডাঙ্গা এর ফেইসবুক পেজ এ , আজকের চুয়াডাঙ্গা এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আজকের চুয়াডাঙ্গা ইউটিউব চ্যানেলে